ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেসব আমল করবেন - Shimanterahban24
June 5, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেসব আমল করবেন

1 min read

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সতর্কবার্তা। এসবই মানুষের জীবনে বিপৎ ঢেকে আনে। অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। আমল করতেন। দোয়া পড়তেন।

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেসব আমল করবেন

মানুষের গুনাহ ও কৃতকর্মের কারণেই এসব দুর্যোগ ঘটে। মানুষের মাঝে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেশি দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-

ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ

মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে।’ (সুরা রুম: আয়াত ৪১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ আরও বলেন-

وَ بَثَّ فِیۡهَا مِنۡ کُلِّ دَآبَّۃٍ ۪ وَّ تَصۡرِیۡفِ الرِّیٰحِ وَ السَّحَابِ الۡمُسَخَّرِ بَیۡنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ

‘… আর সকল প্রকার প্রাণী তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, আর বায়ুরাশির প্রবাহের মধ্যে (গতি পরিবর্তনে) এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী (আল্লাহর আজ্ঞাধীন ভাসমান) মেঘের মধ্যে জ্ঞানী লোকের জন্য অবশ্যই (আল্লাহর মহিমার) বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৬৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আমল ও দোয়া

এভাবে কোরআন-সুন্নায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনেক কারণ উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসব বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকার সুন্নত আমল কী? প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী আমল করতেন? কী দোয়া পড়তেন?

যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইসতেগফার করতেন এবং সাহাবাদেরও তা করার নির্দেশ দিতেন।

বড় বড় দুর্যোগ শুরু হলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।

বিশেষ করে অতীত জীবনের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কয়েকটি দোয়া পড়তেন-

জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহাওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামনাকরি। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেতেন, ‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তবে যদি তোমরা একে (বাতাসকে) তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে (প্রবল আকার) দেখতে পাও, তবে এ দোয়া করবে-

اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ وَ خَيْرِ مَا فَيْهَا وَ خَيْرِمَا أُمِرَتْ بِهِ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيْحِ وَ شَرِّ مَا فَيْهَا وَ شَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহিওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে এ বাতাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। আর তোমার কাছে এর খারাপ দিক থেকে, এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা থেকে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক থেকে আশ্রয় (নিরাপত্তা) প্রার্থনা করছি।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন-

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগজাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকাওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের কারণে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও।’ (তিরমিজি)

বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, অতি প্রবল ঝড়োবাতাস থেকে বাঁচতে এ দোয়া পড়তে হবে-

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহিওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহাওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতি প্রবল ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে নিরাপদ থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআন-হাদিসের ওপর যথাযথ আমল কার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.