প্রকৃতি আল্লাহর শিল্প  - Shimanterahban24
June 5, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

প্রকৃতি আল্লাহর শিল্প 

1 min read
Abu Talha Tufayel / আবু তালহা তোফায়েল
আবু তালহা তোফায়েল :: প্রকৃতি আল্লাহর শিল্প বা নিদর্শন। অথবা সহজ ভাষায় বলতে পারি প্রকৃতি আল্লাহর অপার নেয়ামত। এই পৃথিবী যেখানে আমরা মানবজাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী বাস করি, তা নিঃসন্দেহে খুবই চমকপ্রদ। আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে নানা ধরনের ফল-ফুল ও সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাই। এগুলো একজন ঈমানদারের কাছে স্রেফ আল্লাহর নিদর্শন মনে হয়। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন, “এবং তিনি সেই সত্তা যিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে অটল পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক ফল জোড়া-জোড়া সৃষ্টি করেছেন; তিনি রাতের আবরণে দিনকে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন আছে।”
প্রকৃতির ধর্ম বলা হয় ইসলামকে, কেননা আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব, এই মানুষ জাতিকে নিয়েই পরিবেশ, প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। আর পরিবার, সমাজ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সুন্দর প্রকৃতি নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারিমের সূরা ইয়াসিনের ৩৩নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’

প্রকৃতি- মানুষের প্রতি আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীর নিদর্শন: 

এই সুন্দর ফুল এই সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি/খোদা তোমার মেহেরবানী। পৃথিবীতে মানুষ আসার বহু আগেই মেহেরবান খোদা তার অপার নেয়ামতে প্রকৃতি ও পরিবেশকে সাজিয়েছেন।
পরিবেশ ও প্রকৃতির মৌলিক উপাদান হচ্ছে মাটি ও পানি৷ মূলত মাটি থেকে থেকে গাছপালা, তরুলতা, শাকসবজি ইত্যাদি উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি থেকে প্রাণ সঞ্চার করে। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণাধারা, যাতে তারা ফল খায়।’
প্রকৃতি ও পরিবেশ আল্লাহর মেহেরবানীর আরেকটি দিক হচ্ছে ‘আলো’। কুরআনের সূরা নমলের ৮৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, “তারা কি অনুধাবন করে না, আমি রাত সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলোকিত। এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’

প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন:

বস্তুত এ নিখিল বিশ্বে রয়েছে আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালাসহ অসংখ্য সৃষ্টিরাজি। মহান আল্লাহ ভাসমান চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র ও অসংখ্য তারকা দ্বারা আসমানকে সুসজ্জিত করেছেন। এই সুসজ্জিত আসমান আল্লাহর কুদরতের এক বিশেষ নিদর্শন। বিস্তৃত ও বিশাল পৃথিবীকে বিন্যাস করেছেন বৈচিত্র্যময় পাহাড়-পর্বত, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর ও সারিসারি বৃক্ষ ও তৃণলতার সমারোহে। এতে রয়েছে মানুষসহ হাজারো রকমের জীব-জানোয়ার ও পশুপাখি। মানুষের পুষ্টি ও তৃপ্তির জন্য আল্লাহপাক এ স্থলভূমিতে নানা রকমের খাদ্যশস্য ও সবজির আবাদ করে পৃথিবীকে বসবাস উপযোগী করে দিয়েছেন আমাদের জন্য। আবার খাল-বিল, নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরে রয়েছে মাছের ও জলজ প্রাণীর প্রাচুর্য। পানির তলদেশে রয়েছে মণি-মুক্তাসহ অফুরন্ত রত্ন ভাণ্ডার। ভূগর্ভে রয়েছে অফুরন্ত পানি ও স্বর্ণ-রৌপ্যের অমূল্য সম্পদ। এই প্রকৃতি আল্লাহর কুদরতের বিশেষ নিদর্শন।

প্রকৃতি-পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইসলামের নির্দেশনা: 

প্রকৃতিকে আল্লাহ সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। পাহাড়-নদী, সাগর-মরুভূমি, গাছপালা-খালবিল একেকটার একেক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। সবগুলোর সারমর্ম হচ্ছে মানুষের উপকার করা বা মানুষের উপকারে আসা। এগুলো নষ্ট করা মানে নিজেকে ক্ষতি করা এবং পরিবেশকে দূষিত করা। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। হাদিসে এসেছে, ঈমানের ৭৩টি শাখার সর্বনিম্নটি হল, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূর করা ও পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অভিশপ্ত তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাট, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।” অর্থাৎ পানিতে, রাস্তাঘাটে ও ছায়াদার গাছ যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয় সেখানে মলত্যাগ করে পরিবেশ দূষিত করতে নিষেধ করেছেন। আমরা অনেক সময় হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢাকি না। এতে করে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যের ক্ষতি হতে পারে। রাসূল (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি মুখ ঢেকে নিতেন। পরিবেশের সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ইসলামে রয়েছে স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা; যা অনুসরণ করলে বিশ্বব্যাপী একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। কুরআনের সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ তাওবাকারিদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও।”

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা:

মানুষের অপরিকল্পনা, অদূরদর্শিতা ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে বায়ুতে দূষণ, তাপমাত্রা, রোগ-বালাই ও প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগ বেড়ে চলেছে।তাই এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দ’শ বছর আগে বৃক্ষ বা বন রক্ষার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। বৃক্ষ বা শস্য নষ্ট করাকে নিরুৎসাহিত করে তিনি মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন। জনৈক ব্যক্তি একটি গাছের পাতা ছিঁড়লে রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেকটি পাতা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে। ’ গাছ-পালা, লতা-পাতা মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, মানুষ ও জীবের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে। গাছপালা ঝড়-ঝঞ্ছা প্রতিরোধ করে এবং মাটির ক্ষয়রোধ করে। এ প্রসঙ্গে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করে অথবা ক্ষেতখামার করে, অতঃপর তা মানুষ, পাখি কোনো জন্তু ভক্ষণ করে, তা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৫৩২)।
পাহাড়-পর্বত রক্ষা করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। আর নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর পরিবেশের অন্তর্নিহিত প্রাণপ্রবাহ অব্যাহত রাখে। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে পৃথিবীর মানুষকে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
এ জন্য পরিবেশ ধ্বংসের যেকোনো ধরনের উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা মানুষসহ অন্যান্য সৃষ্টিকে আল্লাহপ্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার  নামান্তর। তাই বিনা প্রয়োজনে আযৌক্তিকভাবে  সৃষ্টিকে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত না করা প্রকৃত মুমিনের পরিচায়ক।
আল্লাহ তাআলা প্রাকৃতিক পরিবেশকে মানুষের সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক বাসোপযোগী করে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। তাই তো আমরা দেখি প্রচণ্ড শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে যেখানে বছরের প্রায় পুরোটা জুড়ে মাঠ, ঘাট, নদী-নালা—সর্বত্রই বরফে ঢাকা থাকে, সেখানেও প্রাকৃতিক  উদ্ভিদকুল সবুজের ডানা মেলে এবং বরফ আচ্ছাদিত যায়গায় স্বাভাবিক জীবন পরিচালনের মাধ্যমে স্রষ্টার অপার মহিমার জানান দেয়। আর এটাই আল্লাহর শিল্প, যা অকল্পনীয় ও অতুলনীয়।

লেখক : তরুণ আলেম, সাংবাদিক ও সংগঠক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.