দ্রুতই কারামুক্ত হচ্ছেন হেফাজতের নেতারা
1 min readপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনার পর হেফাজতে ইসলামের কারাবন্দি নেতারা একের পর এক মুক্তি পাচ্ছেন। সর্বশেষ গত শনিবার চট্টগ্রাম থেকে মাওলানা কামরুদ্দিন ও মিজানুর রহমান কারামুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে আরও ১১ জন নেতা কারাবন্দি। শিগগির কারামুক্ত হচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা মুফতি হারুন ইজাহার, শিশুবক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানী ও আলোচিত হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক। মুফতি হারুন ইজাহার সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। রফিকুল ইসলাম মাদানী সব মামলায় জামিন পেলেও চেম্বার আদালত একটি মামলায় জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে, মাওলানা মামুনুল হক এক মামলায় জামিন পেয়েছেন। সাত মামলার জামিন শুনানি শেষ হয়েছে। এখন শুধু আদেশের জন্য অপেক্ষা।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম এলাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। এসব মামলার অনেক এখনো তদন্তাধীন। সব মিলিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে এখনো ২৫০টির মতো মামলা তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়াধীন।
হেফাজত সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ঘটনায় তাদের ১ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তাদের মধ্য থেকে বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এখনও কারাগারে আছেন সংগঠনের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসেন কাসেমী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি নুর হুসাইন নুরানী, আবদুল মান্নান, দিদারুল আলম, অনিক দত্ত, মো. সোহাগ ও আজিজুল হক। মুফতি হারুন ইজাহার, রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মাওলানা মামুনুল হক খুব শিগগিরই জামিনে মুক্ত হবেন—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাদের আইনজীবী ও হেফাজত নেতারা।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার একটি রিসোর্টে এক নারীসহ ঘেরাও হন মামুনুল হক। একপর্যায়ে রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন হেফাজতের কর্মীরা। ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রয়েল রিসোর্টকাণ্ডের ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।
২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে মুফতি হারুন ইজাহারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিরোধী, উসকানিমূলক, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৩টার দিকে রফিকুলকে নেত্রকোনার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর নামে গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। র্যাবের নায়েক সুবেদার আবদুল খালেক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর গাজীপুরের বাসন এবং রাজধানীর মতিঝিল ও তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কারাবন্দি হেফাজত নেতাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। তারা যে তালিকা দিয়েছে সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সেই তালিকার অধিকাংশ নেতাকে ইতোমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এরআগে গত ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়ে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রী কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের মুক্তির কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে তাদের মাদরাসা ও মসজিদে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সড়কে সক্রিয় না হয়ে ঘরে ধর্মকর্ম চর্চার অনুরোধ জানিয়েছেন। জবাবে হেফাজত নেতারাও বলেছেন তারা অরাজনৈতিক সংগঠন। নির্বাচন কিংবা রাজনীতি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী গতকাল মঙ্গলবার কালবেলাকে বলেন, আমরা আলাদাভাবে কারোর বিষয়ে বলছি না। সবার মুক্তির জন্যই আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি সবাই দ্রুত মুক্তি পাবেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, আমাদের ১৩ দফা দাবি সার্বজনীন। ওই দাবি অব্যাহত থাকবে। হেফাজত অরাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক সংগঠন। রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই।
সূত্র : কালবেলা