বাজার নিয়ন্ত্রণে ইসলামের ৫ নির্দেশনা
1 min readমুফতি ইবরাহিম সুলতান :: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে দিশাহারা করে তোলে। অভাবের তাড়নায় মানুষ নানা অপরাধে লিপ্ত হতে কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই এ রকম সময়গুলোতে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং কাজ। আজ আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইসলামের পাঁচটি নির্দেশনা জানব—
মজুতদারি বন্ধ করা
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরা
ব্যবসায় দালাল হলো এমন চক্র, যারা দাম বাড়ানোর জন্য ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে। সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রান্তিক কৃষকদের ঠকায়, বাজারে মালামাল এনে ক্রেতাদেরও বোকা বানায়। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) বলেছেন, বাজারের বাইরে গিয়ে পণ্যদ্রব্য আনিত বণিকদলের সঙ্গে মিলিত হবে না, পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রাখবে না এবং দাম বৃদ্ধি করে একজন অন্যজনের পণ্য বিক্রয় করে দেওয়ার অপকৌশল অবলম্বন করবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৬৮)
প্রয়োজনে সরকারিভাবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া
শরিয়তের মেজাজ হচ্ছে সরকার সাধারণত পণ্য মূল্য নির্ধারণ করে দেবে না। তবে এই হুকুম বাজার স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যদি অতিরিক্ত মূল্য নেয় এবং বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, তখন জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য সরকার পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে, যতক্ষণ না বাজার স্বাভাবিক হয়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ১/৩১৩)
ঘুষ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা
বাজারে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির আরেকটি কারণ হলো, বেপরোয়া ঘুষ ও চাঁদাবাজি। প্রভাবশালী নেতা, ক্যাডার ও প্রশাসনের লোকজন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন মহলে ঘুষ দিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব ঘুষ ও চাঁদার অর্থ নিজেদের বিক্রীত পণ্যের মাধ্যমে উসুল করে। ফলে পণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দিন শেষে এর ধকল পোহাতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। হাদিস শরিফে এ ধরনের চাঁদা আদায়কে জুলুম সাব্যস্ত করে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সাবধান! তোমরা কেউ কারো ওপর জুলুম করো না। সাবধান, কারো সম্পদ তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কারো জন্য হালাল নয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০৬৯৫)
বর্ধিত মূল্যের জিনিস পরিহার করা
হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পণ্য সাময়িকভাবে পরিহার বা কম ব্যবহার করলেও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব। এ বিষয়টিও ইসলামী ইতিহাসে স্বীকৃত। তারিখুল কাবিরে বর্ণিত আছে আব্বাস (রা.)-এর আজাদকৃত দাস রাজিন বলেন, একবার মক্কায় কিশমিশের দাম খুব বেশি বেড়ে গেল। স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ল। আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে আলী (রা.)-এর কাছে জানালাম। তিনি জবাবে লিখলেন, তোমরা খেজুরের দ্বারা এর মূল্য হ্রাস করে দাও অর্থাৎ কিশমিশের পরিবর্তে খেজুর ক্রয় করো। এতে কিশমিশের চাহিদা কমে যাবে এবং দামও কমে যাবে। (তারিখুল কাবির : ৩/৩২৫)
তারিখে দিমাশকের এক বর্ণনায় আছে, ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.)-এর যুগে একবার গোশতের দাম বেড়ে গেলে লোকেরা তার কাছে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে এলো এবং গোশতের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানাল। তিনি বললেন, তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও। তারা বলল আমরা তো এর মালিক নই, কিভাবে মূল্য হ্রাস করব। তখন তিনি বলেন, এটা ক্রয় করা ছেড়ে দাও। দেখবে এমনিতেই মূল্য কমে যাবে। (তারিখে দিমাশক : ৬/২৮২)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সব কাজে ইসলামী নীতি অনুসরণের তাওফিক দান করুন।