ভাষা আন্দোলন : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  - Shimanterahban24
April 2, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper

ভাষা আন্দোলন : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি 

1 min read
মুহাম্মাদ মাহদী হাসান কামাল :: সেই ১৯৫২ থেকে ২০২৩৷ এর মাঝে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৭১ বছর৷ দীর্ঘ এ পথচলায় রয়েছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির গল্প।  একুশ আসলেই আমাদের চোখে ভাসে রক্তাক্ত রাজপথ, শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জববার ও শফিউরের নাম।
কবি আল মাহমুদ যথার্থই বলেছেন,
বাঁকের পরে বাঁক ঘুরেছি পেরিয়ে এলাম শহীদ মিনার
মিছিল তবুও থামছে না তো পার হবে কি নদীর কিনার?
কোন সে নদী, কী নাম নদীর? রক্ত তিতাস বলছে সবে
মোড় ঘুরেছে মিছিল আমার স্বাধীনতায় থামতে হবে।
লোহুর নদী পার হয়ে ফের মিছিল এগোয় নতুন ধরন
স্বাধীনতার শহীদ প্রাণের নামগুলোকে করছি স্মরণ।
মাগফিরাতের মাঙছি দোয়া হাত তুলে ঐ মেঘের দেশে
তাঁর করুণা পড়ুক ঝরে দীপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশে।
ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছরের অর্জন কম নয়। আমাদের গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের ৭১ বছরে ভাষার ক্ষেত্রে আমরা অর্জন করেছি বিস্ময়কর বিজয়। আমাদের ভাষা আন্দোলন দৃষ্টি কেড়েছে বিশ্ববাসীর। এ আন্দোলনের প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ধ্বনিত হয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। বাংলা ভাষার এ অনন্য মর্যাদা লাভের পর একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল আর আমাদের একার সম্পদ নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রাণের প্রবাহ যুক্ত হয়ে বাংলা ভাষাকে নিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক দরবারে। আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ভাষা। বর্তমান বিশ্বের দেশে দেশে ২৬ কোটিরও বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে। আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের কথা- বাংলা আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরালিওনের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা।
বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা উৎফুলস্ন। মাতৃভাষাকে অবহেলা করলে আপন অস্তিত্বকে অবহেলা করা হবে। মাতৃভাষায় দুর্বল হলে জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। জীবনের অনেক কথাই অব্যক্ত থেকে যাবে। চুনোপুটিরা পান্ডিত্য দেখাবে। সুবিধাবাদীরা অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবে এবং বাঘ বনে নেই শিয়াল রাজা হয়ে মুছে তা দেবে। ৮ ফাল্গুন যারা প্রাণ দিয়ে শহীদ হলেন, তাদের এ আন্দোলনকে দেশী ভাষায় মান দেয়া হয়েছে না বিদেশী ভাষায় ২১শে ফেব্রুয়ারি বলে। ভাষা আন্দোলনে যারা প্রাণ দিল ২১ ফেব্রুয়ারি কি তাদের প্রতিদান? বাঙালি জাতির কি কোন দিন মাস নেই? মহান দিবসটি যদি ৮ই ফাল্গুন বলে উদযাপন করি। তাহলে কি আমাদের শহীদ ভাইদের স্মৃতি চারণ হবে না।
ভাবতে অবাক লাগে ২১শে শ্রাবণ যদি বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্র নাথের মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়, ভাষা শহীদ স্মৃতি উদযাপন করা ৮ ফাল্গুন চলবে না কেন? ইংরেজি মাস ছাড়াও আমরা যখন চন্দ্র মাসের আশুরা বিশ্বব্যাপী পালন করতে পারি। বাংলা মাস হিসাবে যখন রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করতে পারি। ৮ই ফাল্গুন পালনে অসুবিধা কোথায়?
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বিভ্রান্তির মতো এই ভুল তথ্যও আছে যে, বাংলা ভাষা সাহিত্যে মুসলমানদের কোন অবদান ছিল না- সব অবদান এককভাবে কলকাতাওয়ালা বাবুদের। আসলে অন্তরালে চাপা পড়া সত্য বলছে অন্য কথা। শুধু প্রাচীন আমলেই নয়, আধুনিককাল পর্যন্ত বাংলাভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে মুসলমানদের রয়েছে গৌরবময় অবদান। মূলত বাংলাভাষার জন্মই হয়েছে এদেশের মুসলমানদের আগমনের মাধ্যমে এবং মুসলমানদের আগমনের মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিও ব্রাহ্মণ্যবাদিতার নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভ করে। মূলত হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসনের পরিবর্তে মুসলিম শাসন যখন বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই সূচিত হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সত্যিকার আত্মপ্রকাশ।
মুসলমানদের হাতে গড়ে ওঠা, পুষ্ট হওয়া, বিকাশ লাভ করা বাংলা ভাষা খ্রিস্ট-ব্রাহ্মণ্য হওয়া সত্ত্বেও স্বকীয়তা হারায়নি। আর এটা সম্ভব হয়েছে মাটি ও মানুষের সঙ্গে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক ও শাশ্বত মেল বন্ধনের কারণে। বিষাদ সিন্ধু থেকে বিশ্বনবী গ্রন্থের মাধ্যমে আধুনিক কাল পর্যন্ত বাংলা ভাষা প্রাণ পেয়েছে বিশ্বাসী লেখক আর বিশ্বাসী পাঠকের ভালবাসা ও প্রযত্নে। এই ঐতিহাসিকতার ফলেই বাংলা ভাষা ভেতরের বাইরের আক্রমণের মুখেও বেঁচে থেকেছে এবং সজীব রয়েছে। আর এই ঐতিহাসিক শক্তিই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আগ্রাসনের মোকাবেলা করার পর্যাপ্ত শক্তি, সাহস ও পারঙ্গমতা দিয়েছে। ফলে যখনই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে আঘাত এসেছে তখনই এই মুসলমানরাই এই ঐতিহ্যবাদী লেখকরাই এই বিশ্বাসী পাঠকেরাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের হাল ধরে এগিয়ে গেছেন। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের জন্য রক্তদান এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের সংগ্রামও করেছেন বাংলাদেশের মুসলমানরাই। ইতিহাসের এই সব গৌরবদীপ্ত ও বীরোচিত মহান অর্জন ইচ্ছা করলেই আর মুছে ফেলা যাবেনা।
বাংলা ভাষা এখনো শত্রুমুক্ত নয়। এখনো নিরাপদ নয়। তবুও আমাদের তো থেমে থাকলে চলবে না। সকল অবাঞ্ছিত শত্রুতার মোকাবেলায় বাংলা ভাষাকে তার আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজন এদেশের ঐতিহ্য প্রিয় জাগ্রত বিবেকদের এগিয়ে আসা। সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা এবং সুসংহত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের এগুতে হবে। আমাদের বিশ্বাস আধার যত গাঢ়ই হোক যত দীর্ঘই হোক তা অপসারিত হবেই। ৭১তম ভাষা দিবসে সচেতন দেশবাসীর কাছে এটাই প্রত্যাশা। মহান রব সকল ভাষা শহীদদের মাফ করুন।
লেখক : তরুণ আলেম ও সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.