ফাতেমা (অর্পা)-এর পাশে দাঁড়ান
1 min read
আবু তালহা তোফায়েল :: ময়মনসিংহের নওমুসলিম এক বোন ফাতেমা। পূর্বের নাম ছিলো অর্পা সাহা। চলিত ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল রেজিস্ট্রেটের সামনে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী শান্তির বাণী “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
এরপর নওমুসলিম ফাতেমা এক ভিডিও লাইভে এসে বলেন, “আমি একজন নওমুসলিমা। আমার পূর্বনাম অর্পা সাহা, পিতা গৌতম চন্দ্র সাহা। আমি গত ৫ ই ডিসেম্বর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ময়মনসিংহ সশরীরে উপস্থিত হয়ে, বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আমার বয়স ২০ বছর আমার এফিডেভিট নম্বর ২২৯১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ এর ১-এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক। সেই হিসেবে আমি যেকোনো ধর্ম অবলম্বন ও পালন করার অধিকার রাখি। আমি কারো প্ররোচনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি। আমি নিজ ইচ্ছায় জেনে বুঝে এবং ইসলামকে ভালোবেসে ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি আবারো বলছি আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক।আমি নিজের ইচ্ছায় স্ব-ইচ্ছাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আমি দীর্ঘদিন যাবত ইসলামিক কিছু বই পড়ে ইসলামকে জেনে বুঝে তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। আমি কোন রকম কারো প্ররোচনায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি। আমার হিন্দু আত্মীয়-স্বজন মা-বাবা-কাকা সবার কাছে আমার অনুরোধ রইলো, আমার জন্য,আমার এই সিদ্ধান্তের জন্য অনুগ্রহপূর্বক অন্য কোন ব্যক্তিকে হয়রানি করবেন না। আমি আবারো বলছি কোন মানুষের কথায়.. কারো কথায় আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিনি। আমি নিজ ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমাকে মাফ করে দিবেন আপনারা। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।”
এরপর থেকে শুরু হয় ফাতিমার উপর অমানবিক শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। ১০ই ডিসেম্বর সে জিডি করে এইজন্য যে সে তার পরিবারের পক্ষ থেকে শারীরিকভাবে অত্যাচার ও হত্যার আশঙ্কা করে। জিডি নং ৯৮০। জিডি করার পরে সে এক নওমুসলিম বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ প্রশাসন জোরপূর্বক ওকে ওর বাবা-কাকাদের হাতে তুলে দেয়। তার বাবা ওইখানে লিখিত দেয় যে, তাকে সম্পূর্ণভাবে ধর্ম পালন করতে দেয়া হবে। তাকে সবার সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হবে এবং সে একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচবে।
কী আজিব কথা! যার উপর অভিযোগ, যার উপর জিডি করা হলো, প্রশাসন তার হাতেই ছেড়ে দিলো? যেমন আপনি-আমি ভাবছি, পুলিশ প্রশাসন চরম পর্যায়ের ভুল করেছে, ভাবনাটাই বাস্তব রূপ নিলো। বাসায় নিয়ে যাবার পরে ফাতেমাকে কারও সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।তাকে পর্দা করতে দেওয়া হয় না। কোন রকম ধর্ম পালন করতে দেওয়া হয় না মানসিকভাবে তাকে অনেক প্রেশার দেওয়া হয়েছে। ১১ তারিখ থেকে বারবার সে তার বান্ধবীর কাছে সাহায্য চাচ্ছে যে, তাকে যেন সে বাসা থেকে উদ্ধার করে।
ফাতিমার বান্ধবী ১৩ ডিসেম্বর তাকে উদ্ধারের জন্য বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১২৭।
কিন্তু ওয়ারেন্ট আসার পরেও পুলিশ প্রশাসন তাকে উদ্ধারের কোনো রকম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু সে প্রতিনিয়ত তার বান্ধবীকে বলে যাচ্ছে তাকে উদ্ধারের জন্য।
কিন্তু আশ্চর্যের সাথে বলতে হচ্ছে, দেশের এতো এতো গণমাধ্যম সবাই চুপ হয়ে আছে, এতোগুলো নারীবাদী সংগঠন, অথচ একজন নারীর পাশে দাঁড়ানো ত দূরের কথা, একটা কথাও বলেনি তারা। তথাকথিত মানবতাবাদী সংগঠনগুলোও চুপ হয়ে আছে।
অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ ছিলো, অন্যায় দেখলে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, তাতে সামর্থ না হলে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ কর, তাতেও সামর্থ না হলে অন্তর দিয়ে পরিবর্তন করতে হবে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। হাদীসের ভাষা “ফাল ইউগাইয়িরহু”; অন্তর দিয়ে পরিবর্তন করবেন কীভাবে? অন্তর দিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে, তাতেই পরিবর্তন হবে।
পরবর্তীতে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। জানাজানি হলে স্থানীয় কিছু দ্বীনি ভাইয়েরা আইনি লড়াই করছে এবং সারাদেশে এর ব্যাপাক সাড়া ফেলায় আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) নওমুসলিমা ফাতেমা (অর্পা)-কে অমুসলিম পরিবারের কাছে ফেরত না দিয়ে,
তাকে আপাতত ফরিদপুর সরকারি সেফ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রায় মুলতবী করে দিয়ে ২৭ ডিসেম্বর আদালত শুনানি দেবে বলে জানা যায়।
মূল কথা হচ্ছে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে ১০ পার্সেন্ট মুসলমান আছে না ৯০ পার্সেন্ট মুসলমান আছে সেটা বড় কথা না। বাংলাদেশের ৪১-এর ১-এর (ক)-এর সংবিধান অনুসারে একটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার রাখে। কিন্তু ফাতেমাকে কন্টিনিয়াসলি জোরপূর্বক হিন্দু হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এটা কোন প্রেমঘটিত কোনো কারণ না। এটা কোন টাকা-পয়সার লেনদেন বা এরকম কোনো কারণ না। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকের এরকম অধিকার হবার কথা না, যে-যেখানে-যেভাবে পারেন ফাতেমার পাশে দাঁড়ান। অন্তত অন্তর দিয়ে দোয়া করেন।
লেখক: তরুণ আলেম, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।