March 20, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper

বিশ্বকাপ উন্মাদনা: মুমিনের করণীয়

1 min read

আবু তালহা তোফায়েল :: আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়।’ (সুরা আনফাল : ১-৩)

‘অচিরেই এমন ফেতনার আত্মপ্রকাশ হবে, যা (ওই সময়ে) বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম থাকবে। আর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি তখন চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম থাকবে। আর চলমান ব্যক্তি তখন দ্রুতগামী ব্যক্তি থেকে ভালো থাকবে।’ (সহিহ্ মুসলিম : ৭১৩৯)

সম্প্রতি গোটা বিশ্বে টপ অব দ্যা ওয়ান টপিক হচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ বা ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ। এ নিয়ে কত আয়োজন, কত মাতামাতি, বিশ্লেষণ যা সবারই জানা৷ কত উল্লাস, উন্মাদনা, হাসি-কান্না৷

বিশেষ করে আমাদের দেশের সাপোর্টাররা কত এক্সাইটেড, খেলার শুরু থেকে নিয়ে জাতীয় পত্রিকার সূত্র দ্বারা জানা যায় এপর্যন্ত বিষপানে আত্মহত্যা ও হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন দুইজন। তাছাড়া হাজার-হাজার ফুট লম্বা পতাকা, বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার-ফ্যাস্টুন উত্তোলনের কথা বাদই দিলাম। এগুলো লাগাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ত ঘটছেই, এমনকি বিল্ডিং থেকে পড়ে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারাও যাচ্ছে অনেক। এখানেই সীমাবদ্ধ না। দুই দলের সাপোর্টাররা দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতেও পিছপা করে না। অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও ট্রল করা ত আছেই।

সারকথা হচ্ছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা আমাদের এতটাই গাফেল করে দিয়েছে যে, আমাদের কী করা উচিৎ এবং কী করণীয় সেই মূল্যবোধটুকু হারিয়ে ফেলেছি। এমনকি নিজের ভালোটাও বুঝি না। ভিনদেশীয় পতাকা উড়িয়ে বলি “হৃদয়ে বাংলাদেশ, সমর্থনে….” কতটা বোকা জাতি আমরা, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। রুটিরুজি বাদ দিয়া, পরিবার আত্মীয়স্বজন ছেড়ে দিয়ে মেতে আছি বিশ্বকাপ উন্মাদনায়, আর নাম লেখাচ্ছি কাফির-মুশরিক-বেইমান ও ফাত্তানদের খাতায়। বিশ্বব্যাপী এই খেলাযোগ ও বিনোদন সম্পূর্ণ হারাম, কেননা এইসব কিছু আবিষ্কারের একটাই উদ্দেশ্য যে, মুমিনের ঈমান হরণ করা, খেলায় মনোনিবেশ করে গাফেল করে দেওয়া।

হাদীসের ভাষায় এতোসব আয়োজনকে বলে “ফেতনা”। আর ফেতনার সূত্রই হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা ও উদ্দেশ্যহীন কাজ। আর ফিতনার প্রকারভেদ অনেক।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের এক অংশে স্পষ্টকরে বলেছেন, শেষ জামানায় আগুন হাতে রাখার চেয়ে ঈমান রাখা কঠিন হবে, চতুরদিকে ফেৎনায় গ্রাস করবে। এই কথাগুলোর বাস্তব চিত্র এখন আমরা পরিলক্ষিত করেছি।

এতোসব উল্লাস উন্মাদনা থেকে বাঁচতে মুমিনদের করণীয় কি, তা কোরআন ও হাদীসে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসে সব ধরনের ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। মুমিন-মুসলমানের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বারবার বলা হয়েছে, ফেতনার সময় কী করতে হবে, কীভাবে চলতে হবে। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেতনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। ফেতনার ভয়াবহতা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘বস্তুত ফেতনা-ফ্যাসাদ কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ (বাকারা : ১৯১)

মুমিন কাকে বলে?

মুমিন মানে খাওফে ইলাহীর তাড়নায় প্রকম্পিত এক বান্দা। আল্লাহর ওপর খালেছ দিলে বিশ্বাস, তার ওপর অবিচল আস্থা এবং আল্লাহর হুকুমে জীবনকে উৎসর্গকারী এক সত্তার নাম ‘মুমিন’। হাজারো প্রশংসিত গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিকে এক শব্দে ‘মুমিন’ বলে অভিহিত করা যায়। আরও ১০ ব্যক্তি থেকে পৃথক করে সঠিক পন্থায় দীনি আলোয় যখন কোনো ব্যক্তি উদ্ভাসিত হবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন তিনিই ‘মুমিন’।

মুমিন-মুসলমানের উচিত, যাবতীয় ফেতনা থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ফেতনা সৃষ্টি হয় এমনসব বিষয় ও কাজ থেকে বিরত থাকা; অন্যদেরও ফেতনা মুক্ত রাখা। কাউকে ফেতনার কাজে সহযোগিতা না করা। আর এটাই হলো ইমানের জন্য নিরাপদ কাজ। ফেতনা সৃষ্টি শয়তানের কাজ। ফেতনার সময় মুমিনদের করণীয় সম্পর্কে হাদিসের সুস্পষ্ট বাণী রয়েছে। ওইসব হাদিসের ওপর আমল করলে যাবতীয় ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

চুপ থাকা ব্যক্তিকে কোনো ধরনের ফেতনা কখনো স্পর্শ করতে পারে না। সেই সঙ্গে ফেতনা সৃষ্টিকারী ঘটনা ও বিষয়ের দিকে দৃষ্টি না দেওয়া, এমনকি উঁকিও না মারা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফেতনার দিকে তাকাবে ফেতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন আত্মরক্ষা করে।’ (সহিহ বোখারি : ৭০৮১)

ফেতনার সময় সৎ কাজ আঁকড়ে ধরা এবং অসৎ কাজ পরিহার করে চলা। সেই সঙ্গে আল্লাহভীরু মুত্তাকিদের সঙ্গে চলাফেরা করা, ফেতনা সৃষ্টিকারীদের সঙ্গ ত্যাগ করা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন ফেতনা তীব্র আকার ধারণ করবে, তখন তোমরা সৎ কাজকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকবে। তোমাদের মধ্যে বিশেষ লোক (সৎ ও চরিত্রবান) যারা রয়েছে তাদের প্রতি মনোনিবেশ করবে এবং সর্বসাধারণকে (যারা ফেতনার সঙ্গে জড়িত) এড়িয়ে চলবে।’ (আল ফিতান : ৭২১)

সম্প্রতি সময়ে লক্ষ্য করে দেখা যায়, আমরা সহজে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছি। কারণ কোনো দল হারলে তখন আমাদের অনেকেই আত্মহত্যা করে বা হার্ট অ্যাটাক করে বসে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ঐ দলের প্রতি তার কতটুকু ভালোবাসা। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যতক্ষণ আমাকে তোমাদের পিতা, ধন-সম্পদ, সন্তান, স্ত্রী এমনকি তোমাদের প্রাণের থেকেও বেশী না ভালোবাসবে, ততক্ষণ তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।’ (বুখারী ১৫, মুসলিম ৪৪)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, ‘তিনটি গুণ যার আছে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে : যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবার চেয়ে প্রিয়, যে কোনো বান্দাকে ভালবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালবাসে এবং আল্লাহর রহমতে কুফর থেকে মুক্তিলাভের পর পুণরায় সে দিকে প্রত্যাবর্তন অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো ভয়াবহ মনে করে।’

যে মুমিনের হৃদয় ও মস্তিস্ক এই শ্বাশত সত্যের আলোয় আলোকিত তার সামনে কোনো মিথ্যা, কোনো কপটতা মুখ লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ফুটবল বিশ্বকাপ উন্মাদনা কিংবা কোনো মুশরিকের ভালোবাসা ইত্যাদি আবেগ উদ্দীপক শব্দসম্ভারের প্রকৃত পরিচয় তার কাছে গোপন থাকবে না। তিনি জানবেন, কুরআনের ভাষায় এগুলোকে বলে-‘তাযঈনুস শয়তান’ বা শয়তানের মায়াজাল বিস্তার।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।'( সূরা বাকারা : ২০৮)।

সুতরাং ধর্মপরিচয়ে মুসলিম আর পর্ব-উৎসবে অন্যকিছু এমনটির সুযোগ ইসলামে নেই।

তাই আসুন, আমাদের ঈমানকে মজবুত করি, মুশরিকদের ভালোবাসাকে না বলি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও জগৎকে আলোকিত করি।

লেখক: তরুণ আলেম ও সাংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.