জুলুম-অত্যাচার,শোষণই দুর্ভিক্ষের কারণ - Shimanterahban24
March 29, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper

জুলুম-অত্যাচার,শোষণই দুর্ভিক্ষের কারণ

1 min read
আবু তালহা তোফায়েল

কোনো জাতির মাঝে আল্লাহর অবাধ্যতা বেড়ে গেলে, জুলুম-অত্যাচার বেড়ে গেলে,শাসনের বদলে শোষণ হলে ও অবাধে সবাই পাপাচারে লিপ্ত হলে আল্লাহ্‌ নানানভাবে শাস্তি দেন।ভূমিকম্প,ঝড় তুফান,জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ইত্যাদি।

জুলুম একটি আরবি শব্দ।এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার।সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক,মানসিক,আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে।তবে জুলুমের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা হলো,কোনো কিছু নিজ স্থান বাদ দিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রয়োগ করা বা রাখা।এই সংজ্ঞাটি ব্যাপক অর্থবহ। সব ধরনের জুলুম এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

মানুষ মানুষের হক বা অধিকার নষ্ট করার অর্থই হলো তার জান মাল ও ইজ্জতের উপর আক্রমণ করা। আর এরও নাম জুলুম। জুলুম যে কত বড় অপরাধ এ প্রসঙ্গে হযরত সুফিয়ান সাওরী রা. বর্ণনা করেন,একসময় বনী ইসরাইলের মাঝে এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো যে,তারা তখন নিরুপায় হয়ে পথের মৃত জানোয়ার খেতে শুরু করল।ক্রমে পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটলো যে, মানুষ মানুষকে ধরে খাওয়ার উপক্রম হয়ে গেল। তখন সাধারণ মানুষেরা পেরেশান হয়ে মাঠে ময়দানে,পাহাড়ের চুড়ায় আশ্রয় নিতে শুরু করলো এবং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করার জন্য বাড়ী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। তখন আল্লাহ পাক সে যুগের নবীকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন,আপনি তাদেরকে সতর্ক করিয়ে দিন যে,আমার নিকট দোয়া করতে করতে যদি তাদের মুখের ও চোখের পানি শুকিয়েও যায় এবং যদি তাদের প্রার্থনার হাত আকাশ পর্যন্ত উঠে যায় তবুও কারো ক্রন্দনে আমি আমার করুণা বর্ষণ করব না,যতক্ষণ পর্যন্ত তারা একে অপরের উপর জুলুম করা থেকে বিরত না থাকবে।অতঃপর নবী তার জাতিকে একথা জানিয়ে দেন।

তাছাড়া দুর্ভিক্ষ হল কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি। সাধারণত ফসলহানি,যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ,গবাদিপশুর মড়ক, পোকাড় আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়।

অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের কারণেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি,যে জাতির মাঝে ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে,তাদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে পাকড়াও করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ- ১৭৮১২; মিশকাত- ৩৫৮২)।

তবে চিরন্তন সত্য হচ্ছে মজলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে সরাসরি কবুল হয়ে যায়।তাই মজলুমের দোয়াকে ভয় করতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ নবী সা.হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা.কে নসিহত করতে গিয়ে বলেন,তুমি মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করো।কেননা তার (বদদোয়া) মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (সহিহ বুখারি : ১৪৯৬)।

আরেক হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা না করে এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ না করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন’।আর যুদ্ধ দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসে।”
সূরা বাকারার ৫৯নং আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যালেমরা কথা পাল্টে দিয়েছে,যা কিছু তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। তারপর আমি অবতীর্ণ করেছি যালেমদের উপর আযাব, আসমান থেকে,নির্দেশ লংঘন করার কারণে।”
আযাব দ্বারা মহামারী হতে পারে,প্রাকৃতিক দুর্যোগও হতে পারে এবং দুর্ভিক্ষও হতে পারে।

জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি। অন্যের ওপর অন্যায় বা অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। আপদ-বিপদ, দুর্ভিক্ষ,দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। তাই আল্লাহ তাআলা সবাইকে তা থেকে নিষেধ করেছেন।এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন,‘হে আমার বান্দা,আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)। এই জাতিকে জুলুম সম্পর্ক কতটুকু হুশিয়ারি করেছেন, তা হাদীসের ভাষাই অনুমান হয়।

এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, যখন জমিনে জুলুম-অত্যাচার এবং শোষণ শুরু হয়,তখনই দুর্ভিক্ষের আবির্ভাব ঘটে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক, সীমান্তের আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.