দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেমদের পদচারণায় মুখরিত জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া - Shimanterahban24
March 28, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper

দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেমদের পদচারণায় মুখরিত জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া

1 min read

নূর হোসাইন :: রাজধানী ঢাকার উত্তরায় আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী প্রতিষ্ঠিত ‘জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া’ ক্যাম্পাস দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত আলেমদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছিল আজ।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৬টায় জামিয়া ক্যাম্পাসে আগমন করেন বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি আবুল কাসেম নুমানী। তিনি জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্যেশ্যে সংক্ষিপ্ত নসিহত ও মুনাজাত করেন।

নসিহতকালে তিনি বলেন, কোন কাজে যখন ইখলাস থাকে, তখন সে কাজ কেউ আটকিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের প্রত্যেকটা কাজ ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের সাথে করা উচিত। যখন ইখলাস ও লিল্যাহিয়্যাতের সাথে চেষ্টা, সাধনা ও পরিশ্রম থাকবে তখন সে কাজটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তাই সবাইকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎপথ অবলম্বন ও যেকোন কাজে সততা ,ইখলাস ও তাক্বওয়ার জিন্দেগী অবলম্বন করতে হবে। এতে আল্লাহর সাহায্য ও সফলতার জোর আশা করা যায়।

এরপর তাঁর বরকতময় হাতের ছোঁয়ায় জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়ার বহুতল শিক্ষা ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। এ সময় জামিয়া প্রধান আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী জামিয়ার শিক্ষা-কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিবরণী তুলে ধরলে তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন।

কিছুক্ষণ পরেই আগমন করেন দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরার অন্যতম সদস্য আল্লামা মাহমুদ হাসান রাজস্থানী। তিনিও দীর্ঘ সময় কুরআন ও হাদীসের আলোকে ছাত্র-শিক্ষদের উদ্দেশ্যে গুরত্বপূর্ণ হিদায়াতি বয়ান করেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটি বস্তুর পূর্বে মূল্যায়ন করো।’

১. বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনের মূল্যবান সময়কে।

যৌবন কখন শুরু হয়? বালেগ হওয়ার পর থেকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত। যৌবনকালের ইবাদতের মধ্যে ভিন্নরকম স্বাদ আছে। এই সময়ে শরীরে আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য করার সামর্থ্য থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায়ের শক্তি থাকে। গভীর রাতে জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার মতো প্রেরণা থাকে৷ শুধুমাত্র সদিচ্ছার প্রয়োজন হয়।

এ পর্যায়ে আরেক হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সূর্য একেবারে মাথার উপর চলে আসবে, এমন কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর আরশের নিচে জায়গা পাবে এমন যুবক, যে তার যৌবনকাল কাটিয়েছে রবের ইবাদতে।

২. অসুস্থতার পূর্বে সুস্থ সময়কে মূল্যায়ন করা।

মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন মনে অনেক ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগলেও শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। মসজিদে জামাতে শরিক হওয়ার অনেক ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। সুতরাং সুস্থতার নিয়ামতের মূল্যায়ন করো। ভালো কাজে অগ্রসর হও শরীর দূর্বল হওয়ার আগে। না হয় অসুস্থতা যখন তোমাকে ঘিরে ধরবে তখন ইবাদতের ইচ্ছা থাকলেও তুমি অপারগ হয়ে যাবে। তখন হতাশা ও আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

৩. দারিদ্রের পূর্বে ধনসম্পদকে কদর করবে।

যখন আর্থিক সামর্থ্য থাকে তখনই আল্লাহর পথে নিজের সম্পদকে কাজে লাগাও। ইলমের পথে নিজের মাল খরচ করো। সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কিছু করে যাও৷ আত্মিয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি ও দুর্দশাগ্রস্তদেরকে সহযোগিতা করে যাও। না হয় দারিদ্র্য এসে গেলে পূর্বের ধনসম্পদের কোন মূল্যই থাকবে না৷

৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে হবে।

যতদিন দেহে প্রাণ আছে ততোদিন ব্যস্ততা আসবেই। তোমার লক্ষ্যে সফল হতে হলে ব্যস্ততার মধ্যেও অবসরকে খুঁজে নিতে হবে। অধিকাংশ মানুষ বেহুদা কাজে নিজের সময় নষ্ট করে। তারা ভাবে এটাই তাদের ব্যস্ততা। কিন্তু আসল ব্যস্ততা হলো- নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করা। তোমার অবসর সময়টুকু আখেরাতের ফিকিরে কাজে লাগিয়ে নিজেকে মূল্যায়ন করো।

বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন তোমাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে এই চিন্তা করতেছে যে, আমাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য এই ছেলেই কাজে আসবে। অথচ তুমি তোমার সময় নষ্ট করে দিচ্ছো। তোমার অবসরকে কাজে না লাগিয়ে সময় অপচয় করছো। তুমিতো শুধু নিজেকে ধোঁকা দিচ্ছ না। তোমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদেরও ধোঁকা দিচ্ছ।

৫. মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্য দিতে হবে।

এই পৃথিবীতে আসার সিরিয়াল থাকলেও যাওয়ার কোন সিরিয়াল নাই। দুনিয়ার সময় খুবই অল্প। এই সময় খুবই দামী এবং মূল্যবান সম্পদ। তোমার জন্ম যেহেতু হয়েছে মৃত্যুও নিশ্চিত। সুতরাং অল্পদিনের এই হায়াতকে কদর করো। পরকালের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। অন্যথায় জীবনের কোন মূল্য থাকবে না। মরণের আগেই জীবনের স্বার্থকতা অর্জন করতে হবে।

বয়ানের পর উপস্থিত সকলেই একে-অপরের সাথে সালাম, মুসাফাহা ও পরস্পর কুশল বিনিময় শেষে সকালের দস্তরখানায় শরীক হন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেমেদ্বীন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মুহাদ্দিস মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মুফতি আব্দুস সালাম, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, মুহাদ্দিস মাওলানা আশেক মাহমুদ, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা শিব্বির আজহারী, মাওলানা ইসহাক কামাল, মাওলানা ইদ্রিস কাসেমী, মাওলানা সা’দ কাসেমী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.