আল্লামা আহমদ শফীকে হারানোর দুই বছর
1 min read
উম্মাহর রাহবার, দেশের শীর্ষ আলেম, উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আমীর, পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)এর আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন। তাঁকে হারানোর আজ দুই বছর।
আজকের এই স্মরণীয় দিনেও হযরতের বর্ণ্যঢ কর্মমুখর জীবন, বহুমুখী অবদান এবং স্মৃতিসমূহ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.) রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তারপর দশ বছর বয়সে তিনি আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপর ১৯৪১ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত গমন করে বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি চার বছর ইলমে তাফসির, ইলমে হাদিস,
ইলমে ফিকহ অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন।
এ সময় তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের তৎকালীন সভাপতি শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)এর সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর কাছে আধ্যাত্মিক দীক্ষালাভ ও খেলাফত প্রাপ্ত হন।
শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মজলিশে শূরা তাঁকে মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করে। পরবর্তীতে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পান।
–
২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মাদরাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হলে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর প্রতিষ্ঠাতা আমীন মনোনীত হন। তখন থেকে ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্বসমূহ অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে পালন করে যান।
শায়খুল ইসলাম (রহ.)এর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, বহুমুখী প্রতিভা, দক্ষ নেতৃত্ব এবং তাঁর সফল পরিচালনায় উম্মুল মাদারিসের বহুমুখী ব্যাপক উন্নতি-অগ্রগতি, মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর প্রকাশনা শুরু, হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষা ও নাস্তিকতা উৎখাতের আন্দোলনে বিশাল অর্জন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রেখে সনদ লাভ, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন, কাদিয়ানীবিরোধী খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে থেমিস দেবি উৎখাত, ব্যাপক আধ্যাত্মিক ও দায়াহ কার্যক্রম পরিচালনার খিদমত, কর্মজীবনের সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি দুই ডজনের অধিক আরবী, উর্দূ ও বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করে যান। এক কথায় এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাঁর অর্জন বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
এই মহান ব্যক্তিত্ব, শীর্ষ ও মুরুব্বী আলেম এবং উম্মাহর রাহববার ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। তাঁর ইন্তিকালে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি তাওহিদী জনতার অন্তরে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। পরদিন শনিবার স্মরণকালের বৃহৎ জানাযা শেষে তাঁর পুরো জীবনের কর্মস্থল জামিয়া আহলিয়া দারুল হাটহাজারীতে তাঁর গড়ে তোলা “মাকবারায়ে দারুল উলূম”-এ চির শায়িত করা হয়।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) ইন্তিকাল করলেও তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মগাঁথা জীবন থেকে উম্মাহ, দেশ ও জাতি উপকৃত হতে থাকবেন যুগের পর যুগ ধরে। তিনি মরেও অমর হয়ে থাকবেনতাঁর কোটি কোটি অনুসারীর অন্তরে। দয়াময় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা, তিনি যেন আমার প্রিয় শায়েখ ও উম্মাহদরদী এই শীর্ষ রাহবারের নকশে কদমের উপর চালার মাধ্যমে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.)এর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফীক দান করেন; আমিন।
মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মুনির আহমদ-এর ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে…