মুসলিমার স্বপ্ন (গল্প)
1 min read
[ইয়ামিন আরাফাত]
গ্রামের সাধারণ ঘরের মেয়ে মুসলিমা। বাবাকে ছোটবেলা হারিয়ে ফেলেছে। বড় ভাই আর মা কে নিয়ে তাদের সংসার। বড় ভাই সামান্য রোজগার দিয়ে সংসার চালায়। মুসলিমাকে নিয়ে মা আর বড় ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন। মুসলিমা একসময় উচ্চ শিক্ষিত হবে,তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে। দেশ ও সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন শুরু হতে না হতেই ভেঙে গেল। মুসলিমা ছিল খুব মেধাবী ও নম্র ভদ্র। সবেমাত্র মেট্রিক পাস করেছে। খুব ভাল রেজাল্ট করে উত্তির্ণ ও হয়েছে। মা আর ভাইয়ের স্বপ্নকে পূরণ করার লক্ষে একটি ভাল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। তার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন যেভাবেই হোক বোনকে উচ্চ শিক্ষিত করবে। মুসলিমা ও ছিল খুব ধার্মিক ও নম্র। কারো সাথে খারাপ আচরণ দূরের কথা চোখ তুলে ও তাকায় না। ধর্মের প্রতিটা বিধি-বিধান কঠোরভাবে পালন করত। সর্বসময় তার শরীর পর্দায় আবৃত থাকে। পর-পুরুষের সাথে কথা বলা একটুও পছন্দ করত না। স্কুল-জীবনে বান্ধবীদের সাথে অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করত না। সব সময় লেখা পড়া নিয়ে চিন্তা করত। যার কারণে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর কাছে সে ছিল আইডল। স্কুল জীবনে কোনো সহপাঠী তাকে ভালভাবে দেখতে পারে নি। তার পর্দাপ্রথা বা ধার্মিকতাকে সবাই পছন্দ করত,যার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই তাকে সম্মান করত। কিন্তু কলেজ জীবনে এসে এই পর্দাপ্রথা তার লেখাপড়ায় বাধা হয়ে দাড়াল। কলেজের প্রথম দিনই সে কয়েকটি বখাটে ছেলেদের অশালীন আচরণের স্বীকার হয়। বখাটেরা তার চেহারা দেখার জন্য তাকে চরমভাবে অপমানিত করে। মুসলিমা সকল অপমান সহ্য করে নিরবে ক্লাসে চলে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে যে ছেলেরা তাকে পর্দাপ্রথা নিয়ে অপমান করেছিল ওরা সবাই ছিল মুসলমানের সন্তান। প্রথম দিনের অপমানে মুসলিমা কয়েকদিন কলেজে আসে নি। দ্বিতীয়বার যখন সে কলেজে আসে ঐ দিন ও বখাটেদের হেনস্তার স্বীকার হয়। মান সম্মানের ভয়ে সে প্রতিবাদ করার সাহস পায় নি। কেননা ওরা প্রত্যেকেই ছিল বিত্তশালীদের সন্তান। আরো কয়েকদিন কলেজ থেকে বিরতি নেয়। কয়েকদিন পর তৃতীয়বারের মতো কলেজে আসে। কিন্তু নিয়তির পরিহাস সেদিন তাকে চরমভাবে হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছিল। অবশেষে ধর্মের মর্যাদা রাখতে গিয়ে তার মা আর ভাইয়ের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়ে গৃহবধূর শাড়ি পরে নেয়। আজ সে একজন গৃহিণী। গৃহস্তের ঘরে চোখের জল ফেলে সোনালী স্বপ্নের জন্য। আর এভাবেই সমাজ থেকে বিলিন হয়ে যায় এক-একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র।