গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে: এনডিপি চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের
1 min readনিজস্ব প্রতিবেদক :: ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)এর উদ্যোগে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)এর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
.
পার্টির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি সাইফুদ্দীন মনি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, এনডিপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মফিজুর রহমান লিটন, যুগ্মমহাসচিব আশরাফুল আলম, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি নাঈমুর রহমান দিপু, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি জনি, মহিলা পার্টির সভাপতি ঐশী রহমান প্রমুখ।
.
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র হত্যার কাহিনী হলো বাকশালের কাহিনী। সেই যে আমরা কথা বলার অধিকার হারিয়েছি এটা আর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এতবড় মহান নেতা, যিনি আমাদের জন্য সোনার বাংলা গড়ে দিলেন, তিনিই আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিলেন। ১লা জানুয়ারী ১৯৭৫ সালে সিরাজ সিকদার বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, আপনি তো এ বছরে বিজয় দিবস দেখতে পারবেন না। এটা কঠিন সত্য, ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বিজয় দিবস দেখতে পাননি। এটা সিরাজ শিকদার জানতো, ভারতীয়রা কি জানতো না? ভারতীয়রা চায়নি যে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকুক। ভারতীয়রা এ জন্যই চায়নি যে, বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, আমাদের দেশকে টিকে থাকতে হলে ব্রাহ্মণ্যবাদ থেকে ও ভারতীয় আগ্রাসন থেকে আমাদেরকে টিকে থাকতে হবে। জাতির দুর্ভাগ্য তিনি বাঁচতে পারেননি।
.
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট সাভার থেকে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি চেয়েছিলেন আমি বাকশালে যোগদান করি। আমি বললাম, মুজিব ভাই, এটা তো আপনার পথ না। আপনি সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এটা আপনি কইরেন না, এটা ভুল কাজ। আজকে যেমন আমি যেটা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত মনে করি বলে থাকি, তখনও আমি ভয়ভীতি ছাড়া যেটা সঠিক মনে করতাম সেটা বলে যেতাম। ১৩ আগস্ট আমি ৪ ঘন্টা সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে কাটিয়েছি। পরের দিন আমি বিলেতে চলে যাই। আমাদের জাতির বড় দুর্ভাগ্য, ওই দিন রাতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। সেই যে আমরা কথা বলার অধিকার হারিয়েছি, সেটা একের পর এক বহাল রয়েছে। এরপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র আনতে কাজ শুরু করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনিও বেশি দিন বাঁচতে পারেননি। এই যে আমাদের নেতাদেরকে হারানো, এর মূল কারণ ভারতীয় চক্রান্ত। ভারত চেয়েছে আমরা যেনো সিকিম হয়ে যাই। পাকিস্তান থেকে তারা আমাদেরকে আলাদা করেছে এই জন্য, তারা চেয়েছে আমরা একটা সিকিমের মতো হয়ে যাব। তারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি।
.
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি কি স্বাধীন। না, তিনি স্বাধীন নন। তিনি ভারতীয় ‘র’ বাহিনী দ্বারা চারদিক থেকে একটা বৃত্তে। গত একমাসে আপনারা কোন মিটিং এ দেখেছেন তাঁকে? না, তিনি ভার্চুয়াল মিটিং করেন। ঘরের ভিতরে তিনি আবদ্ধ; অন্তরীন আছেন। আজকে তিনি ভারত যা বলেন, তাই শুনেন। আজকে যেখানে খরচ হওয়ার কথা ১০ হাজার কোটি, সেখানে খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি। আমি পদ্মা ব্রিজের কথা বলছি। অধিকাংশ টাকা দেশে লুটপাট করে, কিছু টাকা ভারতেও যায়। আজকের ভারতের অর্থনৈতিক যে আয়, তাতে তিন নম্বর বৃহৎ আয় যায় বাংলাদেশ থেকে। আমরা যে উন্নয়ন উন্নয়ন করছি, এ টাকা থেকে একটা অংশ ভারত নিয়ে যায়।
.
তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের সকলের দরকার মিলে মিশে চলা। সহনশীলতার সাথে চলা। অধিকার সচেতন হওয়া। এবং গালাগালি বন্ধ করে মহানুভবতা দেখানো। আর ধর্মটাকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা দরকার। সকল মুসলমান রোযা, নামায করবেন। কুরআন পড়বেন। কেউ যদি এসব না করেন, আল্লাহ তার বিচার করবেন, আমাকে ও আপনাকে এর বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি যদি ভুল করি, আল্লাহ বিচার করবেন। এখন আমাদের দরকার সহনশীল হওয়ার, মিলেমিশে চলার। তাহলেই আমরা ন্যায্য অধিকার আদায়ে একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারব।
.
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত নেতা মুফতি মনির কাসেমী বলেন, বিগত এক যুগের শাসন দেখে আমাদের এখন বলতে মনে চায়, ’৭৪-এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চললেও সেটাই বর্তমানের চেয়ে অনেক ভাল ছিল। আমরা এখন এতটা নির্যাতিত ও নিপীড়িত যে, ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময়কেই এখনকার চেয়ে ভাল ছিল বলতে মনে চায়। এখন সত্য কথা বলবেন, এই সাহস আপনার, আমার কারোর নাই। কারণ, যে কোন সময় সাদা গাড়ি নিয়ে আসবে। আগে তো শুধু সাদা গাড়ি আনত। এখন রঙিন গাড়িও আনে। কখন যে সাদা বা রঙিন গাড়ি করে নিয়ে যাবে, কোথায় নিয়ে যাবে কেউ কখনোই বলতে পারবেন না। খুন, গুম, হত্যা এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে গেছে।
.
মুফতি কাসেমী বলেন, এই দু:সহ পরিস্থিতি থেকে যদি বের হতে হয়, আপনি আমি আমাদের সকলকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সোচ্চার হতে হবে, ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে ময়দানে নামতে হবে। নারী, পুরুষ, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, মুসলমান সকলকে ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাঁধে কাধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, তখন কেউ রুখতে পারবে না।
.
সভাপতির বক্তব্যে কে এম আবু তাহের বলেন, দেশের মানুষের শুধু কথা বলার অধিকার হারায়নি, সকল বিষয়ে স্বাধীনতা হারিয়েছে। ভোটের অধিকার হারিয়েছে। ন্যায় বিচার ও ইনসাফ হারিয়েছে। সর্বত্র এখন লুটপাট। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জন্য সবকিছু জায়েয। কিন্তু সাধারাণ মানুষের জন্য কিছুই নাই। মানুষ এখন জুলুমের শিকার হয়ে আদালতে গেলে বিচার পায় না, পুলিশের কাছে সহযোগিতা পায় না। সীমান্তে নির্বিচারে দেশের মানুষকে বিএসএফ হত্যা করছে। রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আগে দিনের বেলায় ভোট চুরি ও ভোট ডাকাতি হতো। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দিনের বেলায় আর ভোট চুরি বা ডাকাতি পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে নাই। রাতেই তারা বাক্স ভর্তি করে নিয়েছে। এ জন্য ক্ষমতাসীনরা প্রশাসন যন্ত্রকে নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে। প্রশাসনের কাউকে প্রমোশন দিয়ে এটা করা হয়েছে, কাউকে টাকা দিয়ে, কাউকে টাকা ও বাড়ি-গাড়ি দিয়ে। বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণের এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুরতার নজির আর কোথাও নেই। সুতরাং এখন আমাদের একটাই দাবি, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সে জন্য অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে হবে।
.
কে এম আবু তাহের আরো প্রশাসনের প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে একটি দলের পক্ষ হয়ে করছেন। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করুন। আপনাদের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাব, আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলব, আপনার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেমন জনগণের পক্ষে চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করে কাজ করেছেন, সেভাবে সবসময় জনগণের সাথেই থাকুন। দেশের জনগণের কেউ আপনার ভাই, বোন, বন্ধু, পিতা, চাচা, প্রতিবেশি। সুতরাং জনগণ মানে তো আপনাদেরই লোক। আপনারা দেশকে ভালবাসুন, দেশের মানুষকে ভালবাসুন। দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। আপনারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবেসে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি মারা যান, তবে আপনারা শহীদের মর্যাদা পাবেন দুনিয়াতেও, আখেরাতেও।
.
এনডিপি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের জাতির জন্য এখন সঠিক নেতৃত্ব দরকার এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। ঐক্যবদ্ধ জাতি যদি সঠিক নেতৃত্বের হাতে পরিচালিত হয়, তাহলে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই আমাদেরকে অধিকার সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সহনশীল হতে হবে, দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে। ইনশাআল্লাহ, তাহলে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং ভারতীয় আগ্রাসনকে বিতাড়িত করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত ও নিরাপদ রাখা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
.
সব শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সমৃদ্ধি, শান্তি কামনা করে এবং ৩০ লক্ষ শহীদ ও করোনায় মৃতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত করা হয়। দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।