হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা - Shimanterahban24
March 23, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

1 min read
হেফাজতে ইসলাম

[কে,এম, আতিকুর রহমান কামালী]

উম্মতে মুহাম্মদির একটি বিপ্লবী কাফেলার নাম হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ধর্ম নিয়ে উপহাস ও কটুক্তির প্রতিবাদে এক সন্ধিক্ষণে হেফাজতে ইসলামের জন্ম ও উত্থান। যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে।
সূচনাকালে হেফাজতের সংগ্রামী আমির ছিলেন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি (রহ.) মহাসচিব অকতোভয় সৈনিক আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী দা.বা.
২০১১ সালে এই সংগঠনটি, সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে। ২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবী করে ব্যপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করে। হেফাজতর ইসলামের এই দাবীর কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফার ব্যাখ্যা প্রদান করে।
হেফাজতের ১৩ দফা দাবি সমূহ;
১। সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২। আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩। শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪। ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫। ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
৭। মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯। রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১১। রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র রাসুলপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২। সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও রাসুলপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।
উল্লেখীত ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে, ২০১৩ সালের ৫ মে আমিরে হেফাজতের ডাকে “ঢাকা অবরোধ” ও শাপলা চত্বরে যে অভূতপূর্ব সমাবেশ হয় তা ছিল ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের ছোট-বড় ৩০ হাজার কওমি মাদ্রাসার প্রায় ৫০ লক্ষ ছাত্র শিক্ষক ও তৌহিদী জনতা জমায়ত হন।
দাবি না মানায় মতিঝিলে  রাত্রিজাপন করছিল বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা।
কিন্তু শাপলা চত্ত্বরে গভীর রাতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে, হেফাজতের কর্মীদের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে সরকারী আইন-শৃংখলা বাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করে। “অপারেশন সিকিউর শাপলা” নামক হত্যাকান্ডে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে।
৬ই মে, সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে, ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তীতে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়ায় সরকারের টনক নড়ে। যদিও ২০১৩ সালে হেফাজত সরকারের সাথে আপসে গিয়ে ১৩ দফা আদায় করতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার গ্রেফতার কৃতদের মুক্তি এবং তাদের অধিকাংশ দাবি মেনেছিল।
অনেকে বলে হেফাজত দাওরায়ে হাদিস সনদ নিয়ে সরকার দলিয় হয়ে গেছে, আসলে এই ধারণাটি সঠিক নয়।
কারণ, কওমি মাদ্রাসার সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সাথে হেফাজতের আপসের কোনো সম্পর্ক নেই। সনদের ব্যাপারে বোঝাপড়া (Memorandum of Understanding) হয়েছে, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইয়াতুল উলিয়ার সাথে সরকারের। কাকতালীয়ভাবে হেফাজতের আমির যিনি তিনিই হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই প্র্যাকটিস পরিবর্তন হয়ে গেছে। হেফাজতের আমির, ও বেফাকুল মাদারিসের সভাপতি, হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান পৃথক ব্যক্তিগণ।
আমিরে হেফাজতের ইন্তেকাল; 
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং রোজ; শুক্রবার (১০৩-১০৪ বছর বয়সে)
আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি (রহ.) ইন্তেকাল করেন। রাব্বে কারিম উনার দ্বারাজাত কে কবুল করুন, আমিন।
ফ্রান্সের একটি সাময়িকীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে তৎকালীন ঢাকা হেফাজতের আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) ডাকে ২ নভেম্বর সোমবার দুপুরে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস অভিমুখে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল, পল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল হয়ে বেলা পৌনে ১টার দিকে শান্তিনগর মোড়ে এসে তারা পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যান।
লক্ষ মানুষের উপস্থিতি দেখে সরকার দলিয় নেতাকর্মী বিব্রত। আমজনতার হেফাজতের প্রতি আস্থা ফিরে এসেছে, যারা বলেছিল হেফাজত শেষ, তাদের মুখে চুনকালি পরেছে।
পরবর্তীতে ১৫-১১-২০২০ রবিবার নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অকতোভয় সৈনিক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কে আমির ও বাংলার মাদানী আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) কে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়।
২১-১১-২০২০ইং শনিবার হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্দোগে ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় মদদে রাসূল সা. এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিলের প্রধান অতিথি ছিলেন নবগঠিত কমিটির সংগ্রামী আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বিশেষ অতিথি মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.)। লক্ষাধিক তৌহিদী জনতার সমাগমে সিলেট শহরের বিভিন্ন নগরী লোকে লোকারণ্য ছিল।
হেফাজতে ইসলাম সিলেটের এই শক্তিশালী অবস্থান দেখে ভয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছে নাস্তিক্যবাদি শিক্ষিত শয়তানরা।
মহাসচিবের ইন্তেকাল;
১৩ ডিসেম্বর সোমবার ২০২০ইং ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় বাংলার মাদানী আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.) শেষ’নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরওয়ার্দিগারে আলম যেন আমাদের কে কাসেমী মিশন বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
বিগত ২৩ ডিসেম্বর বাদ জোহর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় আমীরে হেফাজতের কার্যলয়ে এক বিশেষ বৈঠকে সভপতিত্ব করেন হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। উপস্থিত ছিলেন আল্লামা হাফিদ জুনাইদ বাবুনগরী। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা খিলগাও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজাুনুল উলূম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস আল্লামা নূরুল ইসলাম দা.বা. কে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়।
এছাড়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি আরও বৃদ্ধি করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়। এতে, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মনোনীত হলেন জাগ্রতকবি মাওলানা কবি মুহিব খান।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি
বিশেষ বৈঠকে খতীবে বাঙ্গাল আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীবকে আমির ও বাংলার সিংহপুরুষ আল্লামা মামুনুল হককে মহাসচিব মনোনীত করে ঢাকা মহানগর কমিটি। এবং মাওলানা হাফিজ তাজুল ইসলামকে (পীর সাহেব ফিরোজশাহ) আমির ও মাওলানা লোকমান হাকীমকে মহাসচিব মনোনীত করে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষাণা করা হয়।
হেফাজতের প্রতি আশাবাদী 
অতীতের ঘটনা পরস্পরে বিশ্লেষণ করলে প্রস্ফুটিত হয়, হেফাজত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের পক্ষপাতী। তবে সংগঠনকে ধরে রাখার জন্য নেতাকর্মীরা নির্ধারিত সময়ে জেলা-উপজেলায় শানে রেসালত সম্মেলন করে থাকেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মিছিল মিটিং করেন।
আগামী দিনে যারা হেফাজতের নেতৃত্ব দিবেন তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের পাশাপাশি সংগঠন কে যদি মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলন পরিচালনা করা যায়, তাহলে এর ফল হবে ইতিবাচক ও দূরপ্রসারী।
লেখক; সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ জগন্নাথপুর উপজেলা শাখা। 
জয়েন্ট সেক্রেটারি, ছাত্র জমিয়ত জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট ক্যাম্পাস শাখা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.