সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: কে এম আবু তাহের - Shimanterahban24
March 27, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ও ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: কে এম আবু তাহের

1 min read

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে অব্যাহত বাংলাদেশী খুনের প্রতিবাদ জানিয়ে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কে এম আবু তাহের বলেছেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এখন ভয়ঙ্কর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।
.
আজ (২১ ডিসেম্বর) সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু মধ্য রাতের নির্বাচানের ভোটারবিহীন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে রক্তাক্ত সীমান্ত এখন বাংলাদেশের সীমান্ত। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে আমার দেশের জনগণ ও কৃষকদের লাশ পড়া থামছে না।
.
কে এম আবু তাহের বলেন, যারা সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তারা কখনো আমাদের বন্ধু হতে পারে না। তাদেরকে তোষামোদ করার রাজনীতি দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। যারা আমার দেশের ফেলানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে সীমান্তের কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমাদের দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত হত্যা করে। যারা আমাদেরকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করে। যারা চুরি করে ফেনী নদীর পানি তুলে নিয়ে যায়। যারা আমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে চায়। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদী আগ্রাসন চালায়। আমার দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়, তারা কখন আমাদের বন্ধু হতে পারে না।
.
সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান তুলে ধরে কে এম আবু তাহের বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গত ১২ বছরে সীমান্তে প্রায় সাড়ে ৫৫০ বাংলাদেশীকে খুন করেছে বিএসএফ। এই করোনার মধ্যেও চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন ৪৩ জন বাংলাদেশী। সীমান্তে নো-ম্যান্স ল্যান্ড ও নদীতে প্রায়ই বাংলাদেশীর রহস্যজনক লাশ পাওয়ার খবরে আসে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের তরফ থেকে পতাকা বৈঠক করে লাশ গ্রহণ ছাড়া ভরসা রাখার মতো কোনো তৎপরতা-ই এখন চোখে পড়ে না। বরং কখনো কখনো বর্ডার গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসব হতভাগ্য নিহত বাংলাদেশীদেরকে চোরাচালানী বা অবৈধ গরুব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে বিএসএফের নিষ্ঠুরতার পক্ষেই যেন সাফাই গেয়ে যান। বিএসএফ’র সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে রাষ্ট্রের এমন নতজানু ভূমিকা গভীর বেদনাদায়ক ও লজ্জার।
.
এনডিপি চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বের কোথাও আমরা এমনটা দেখি না যে, কেবল অবৈধ সীমান্ত পারাপার বা চোরাচালানের জন্য নিরীহ মানুষ হত্যার মতো নিষ্ঠুরতা ঘটে। ভারত-চীন বা ভারত-পাকিস্তান বর্ডারেও সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ডের খবর দেখা যায় না। বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা যে হারে পাখী শিকারের মতো নির্বিঘ্নে বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করে চলেছে, বিশ্বে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
.
তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের তরফ থেকেই সরকারীভাবে বার বার বলা হচ্ছে, উভয় দেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে। গত বছর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় উভয় পক্ষ থেকে বলা হল, সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে’ উন্নিত হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন ভারত সফরের পূর্বে উভয়ে দেশের সম্পর্ককে ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো’ বলে অভিহিত করেছেন। আরো এক ধাপ এগিয়ে চলতি বছরের ৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্তের সম্পর্ক’। ১৩ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সুগভীর, বহুমাত্রিক ও রক্তের অক্ষরে লেখা। এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন নির্লজ্জভাবে বলেছেন, সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্ট ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে। এর কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না।
.
কে এম আবু তাহের বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা উল্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশের মানুষদের হত্যা করার-ই ন্যায্যতা দান করছে। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী। সীমান্ত হত্যার দায় বাংলাদেশ এড়াতে পারে না। মধ্যরাতের ভোটে নির্বাচিত নতজানু সরকারের মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা স্বাধীন দেশের মন্ত্রী নন; তাদের কথা বার্তায় মনে হয়, তারা যেন ভারতেরই প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন।
.
তিনি বলেন, ভারত আমাদের ঘাড়ের উপর ভর করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে, দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত হত্যা করছে, একের পর এক অসম চুক্তি করতে সরকারকে বাধ্য করে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারত শুধু নিয়েই যাচ্ছে। ভোটার বিহীন নির্বাচনে গঠিত নতজানু সরকার প্রতিবাদ করার সাহসটুকুই শুধু হারায়নি, বরং নির্লজ্জভাবে ভারতের পক্ষে সাপাই গাইতেও দ্বিধা করে না। এমনটা গোটা জাতির জন্য খুবই দু:খের ও লজ্জার।
.
এনডিপি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে, কৃষকদেরকে রক্ষা করার জন্য এবং সীমান্ত অঞ্চলে যেসব ভাইয়েরা হত্যা, জুলুম, আধিপত্য বিস্তারের শিকার হচ্ছেন, তাদেরকে রক্ষায় সারা দেশের মানুষকে ঐকবদ্ধ্য হতে হবে। যেভাবে আমরা ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ, নিপীড়ন ও হত্যার হাত থেকে রক্ষায় এক সাথে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি, তদ্রুপ ভারতীয় আগ্রাসন, আধিপত্য বিস্তার ও সীমান্ত হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসতে হবে। আমাদেরকে এই শপথ নিতে হবে যে, বর্ডারে একটি প্রাণও আমরা আর বিএসএফকে কেড়ে নিতে দেব না।
.
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে সুসম্পর্ক থাকাটাই আমাদের কাম্য। কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশীদেরকে লাগাতার হত্যা করে যাবে, আর বাংলাদেশ সুসম্পর্ক রক্ষার জন্য চুপচাপ সয়ে যাবে; আমরা এমন স্বামী-স্ত্রীর ও রক্তের সম্পর্ক চাই না। আমরা চাই সীমান্তে বাংলাদেশের স্বার্থ ও নাগরিকদের জানমালের হেফাজতে সরকার সাহসীকতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। অন্যথায় ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে সরকার ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াক। এভাবে একটা স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। অন্যথায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জানমাল রক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.