আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সংক্ষিপ্ত জীবনী - Shimanterahban24
March 27, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

1 min read

একবিংশ শতাব্দীর একজন মুসলিম সাধক,যিনি একজন সফল মুসলিম লিডার, তিনি যেই ময়দানে অগ্রসর হয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা তার পদচুম্বন করেছে। তিনি প্রতিটি আন্দোলনে আপোষহীনতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাতিল যখনি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে, তিনি তখন গর্জে উঠেছেন। তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের নেতা, মুসলিম উম্মাহের এক দরদী রাহবার ও আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)।

জন্ম: ১৯৪৫ সালের ১০ই জানুয়ারী মোতাবেক রোজ শুক্রবার বাদ জুমা কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

নাম: নূর হোসাইন। পিতা- মাওলানা আবদুল ওয়াদূদ। উপাধি- কাসেমী।

শিক্ষা জীবন: তিনি বাবা মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সাথে তাকেও প্রথমে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী গ্রামের কাশিপুর মাদ্রাসায়। এখানে পড়েন মুতাওয়াস-সিতাহ পর্যন্ত। তারপর বরূড়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া দারূল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে হেদায়া পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।

দারুল উলূম দেওবন্দে গমন: বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও তার অগাধ প্রতিভার ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দে পাড়ি জমান। কিন্তু ভর্তির নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় সাহারানপুর জেলার বেরিতাজপুর মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে জালালাইন জামাত পড়েন। তারপর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ও ইলমি পিপাসাকে নিবারণের জন্য ভর্তি হন দারুল উলূম দেওবন্দে। দারূল উলুমে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আপন মেধা ও প্রতিভায় আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে অন্যান্য ছাত্রদের মধ্য হতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নেন। সফলতা তার পদচুম্বন করতে থাকে। এখানে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা সায়্যেদ ফখরূদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী (রাহ.)এর কাছে বুখারী শরিফ পড়েন। মুরাদাবাদী (রাহ.)এর অত্যন্ত নিকটতম ও স্নেহভাজন হিসেবে তিনি অল্প সময়ে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে ছিলেন।তাকমিল জামাত পড়ার পর আরো তিন বছর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রি অর্জনে নিমগ্ন থাকেন। এ সময় তাকমিলে আদব, তাকমিলে মাকুলাত, তাকমিলে উলুমুল আলিয়া সমাপ্ত করেন।

শিক্ষকবৃন্দ: তার প্রসিদ্ধ কয়েকজন উস্তাদ হলেন, মাওলানা ফখরূদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী (রাহ.) কারী তাইয়্যেব (রাহ.) ওয়াহিদুজ্জামান কিরানাভী (রাহ.) শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রাহ.) মাওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.), মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী, মাওলানা শরীফুল হাসান (রাহ.) মাওলানা নাসির খান (রাহ.) মাওলানা আনযার শাহ (রাহ.)সহ আরো বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরাম।

কর্মজীবন: মুরাদিয়া মাদরাসায় তিনি প্রথমে তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আহাদ (রাহ.)এর পরামর্শে আল্লামা কাসেম নানুতুবী (রাহ.)এর প্রতিষ্ঠিত ভারতের মুযাফফার নগরে মুরাদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরূ করেন। সেখানে একবছর শিক্ষকতা করেন।

১৯৭৩ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে সর্বপ্রথম শরীয়তপুর জেলার মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন।

১৯৭৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। তিনি ফরিদাবাদ মাদরাসায় দীর্ঘদিন যাবত দারূল ইকামার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে চলে আসেন জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদ্রাসায় সদরুল মুদারসির পদে যোগদান করেন। এখানে তিরমিজি শরিফের দরস দেন। মালিবাগে ৬ বছর শিক্ষকতার করেন।

এরপর তিনি ১৯৮৮ সালে রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ১৯৯৮ সালে তুরাগ থানায় জামিয়া সুবহানিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

এছাড়াও তিনি চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, শামসুল উলূম কাওলা মাদরাসা, টিকরপুর জামেয়া, জামেয়া ইসহাকিয়া মানিক নগর’সহ দেশের কয়েকটি মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুরুব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিভিন্ন পদে থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন। ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং হাইয়্যাতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

আধ্যাত্মিক জীবন: ১৯৭৩ সালে শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রাহ.)এর কাছে প্রথমে বায়াআত হন। তার ইন্তেকালের পর মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.)এর কাছে বায়আত হন।

১৯৯৫ সালে মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.) বাংলাদেশে আসলে সেসময় তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। বর্তমানে তিনি খানকায়ে মাহমুদিয়ার আমির।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে যোগদান করেন। তারপর ১৯৯০ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। ২০১৫ সালের ৭ই নভেম্বর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। অদ্যাবধি তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সময় থেকেই কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্বে ছিলেন। এর ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আন্দোলনের সময় সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত হলে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আসেন। শুরু থেকে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আন্দোলনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসীকতার সাথে ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ এবং ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)এর ইন্তিকালের পর গত ১৬ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে নবগঠিত কমিটিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী কেন্দ্রীয় মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

আন্দোলন-সংগ্রাম: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর রাজপথে যেসব গুরূত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হচ্ছে- খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, তাসলিম নাসরিনের নাস্তিক্য মতবাদবিরোধী আন্দোলন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার আন্দোলন, বাবরি মসজিদ রক্ষা আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষা নীতি থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেওয়ার প্রতিবাদী আন্দোলন, স্কুল পাঠ্যপুস্তক সংশোধনী আন্দোলন, রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন, সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে থেমিস দেবির মূর্তি অপসারণ আন্দোলন, কাশ্মীর-ফিলিস্তিন’সহ বিশ্বের দেশে দেশে মুসলিম নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন এবং সম্প্রতি ফ্রান্সে রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদে দুর্বার আন্দোলন অন্যতম।

তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশি-বিদেশি যে কোন আগ্রাসী তৎপরতার বিরূদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদি ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় স্বার্থে সব সময় সবার আগে কথা বলতেন। বিএসএফ’র সীমান্ত হত্যাকা-ের বিরূদ্ধে তিনি দুর্বার প্রতিবাদি ছিলেন। তাঁর সোচ্চার প্রতিবাদের কারণে ভারত আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের অখ-তা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রীস্টান মিশনারী অপতৎপরতা ও আধিপত্যবাদি অপশক্তির ইন্ধনে কথিত শান্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্রের বিরূদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। বাংলাদের সমুদ্র সীমা নিয়ে প্রতিবেশি দেশসমূহের আগ্রাসী পদক্ষেপেরও তিনি সোচ্চার প্রতিবাদ করেছেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সব সময় ন্যায়, ইনসাফ ও সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ার পাশাপাশি স্বাধীন-সার্বভৌম ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ঈমান-আক্বিদার বিরূদ্ধে যে কোন অপতৎপরতার বিরূদ্ধে সোচ্চার থাকতেন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রায় প্রতিটি বক্তব্যেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রুর সুরক্ষার কথা জোরালোভাবে উল্লেখ করতেন। এছাড়াও তিনি বিহির্বিশ্বের যে কোন নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে ভূমিকা পালন করতেন।

ইন্তিকাল: এই মহান বুযূর্গ আলেম শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) আজ (১৩ ডিসেম্বর) রবিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মহান মাহবুবে আ’লার ডাকে সাড়া দিয়ে পরকালের পথে যাত্রা করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

ইন্তিকালের সাময় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান রেখে যান।

উল্লেখ্য, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী গত ১ ডিসেম্বর ঠা-াজণিত কারণে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েলে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ঞুঢ়ব ২ ৎবংঢ়রৎধঃড়ৎু ভধরষঁৎব রোগ নির্ণয় হয়।

পরিশেষে বলবো- হাদিসের মসনদে তিনি শায়খুল হিন্দের প্রতিচ্ছবি। সিয়াসতের ময়দানে তিনি হুসাইন আহমাদ মাদানীর প্রতিচ্ছবি। তাযকিয়ায়ে নফসের জগতে তিনি মাহমুদ গাঙ্গুহীর প্রতিচ্ছবি। তিনি দেওবন্দের সন্তান, তিনিই দেওবন্দিয়্যাতের লালনকারী।

একবিংশ শতাব্দীর এই মুসলিম সাধক এখন বাংলাদেশের বিশ কোটি মানুষের কাছে আপোষহীন নেতা হিসেবে পরিচিত, তিনি হাজার হাজার ছাত্র গড়েছেন, তিনি তার সাহসিকতায় বাংলাদেশের ইসলাম প্রেমী তাওহিদী জনতার অন্তরের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি যেন হাজার বছর বেঁচে থাকেন। আমরা যেন এই সাধকদের যথাযোগ্য কদর করতে পারি।

একবিংশ শতাব্দীর একজন মুসলিম সাধক,যিনি একজন সফল মুসলিম লিডার, তিনি যেই ময়দানে অগ্রসর হয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা তার পদচুম্বন করেছে। তিনি শাপলা চত্বরের রূপকার। তিনি প্রতিটি আন্দোলনে আপোষহীনতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাতিল যখনি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে, তিনি তখন গর্জে উঠেছেন। তিনি বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের নেতা, মুসলিম উম্মাহের এক দরদী রাহবার আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)।

জন্ম: ১৯৪৫ সালের ১০ই জানুয়ারী মোতাবেক রোজ শুক্রবার বাদ জুমা কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

নাম: নূর হোসাইন। পিতা- মাওলানা আবদুল ওয়াদূদ। উপাধি- কাসেমী।

শিক্ষা জীবন: তিনি বাবা মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সাথে তাকেও প্রথমে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী গ্রামের কাশিমপুর মাদ্রাসায়। এখানে পড়েন মুতাওয়াস-সিতাহ পর্যন্ত। তারপর বরূড়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া দারূল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে হেদায়া পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।

দারুল উলূম দেওবন্দে গমন: বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও তার অঘাত প্রতিভার ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দে পাড়ি জমান। কিন্তু ভর্তির নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় সাহারানপুর জেলার বেরিতাজপুর মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে জালালাইন জামাত পড়েন। তারপর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ও ইলমি পিপাসাকে নিবারণের জন্য ভর্তি হন দারুল উলূম দেওবন্দে। দারূল উলুমে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আপন মেধা ও প্রতিভায় আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে অন্যান্য ছাত্রদের মধ্য হতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নেন। সফলতা তার পদচুম্বন করতে থাকে। এখানে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা সায়্যেদ ফখরূদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী (রাহ.)এর কাছে বুখারী শরিফ পড়েন। মুরাদাবাদী (রাহ.)এর অত্যন্ত নিকটতম ও স্নেহভাজন হিসেবে তিনি অল্প সময়ে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে ছিলেন।তাকমিল জামাত পড়ার পর আরো তিন বছর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রি অর্জনে নিমগ্ন থাকেন। এ সময় তাকমিলে আদব, তাকমিলে মাকুলাত, তাকমিলে উলুমুল আলিয়া সমাপ্ত করেন।

শিক্ষকবৃন্দ: তার প্রসিদ্ধ কয়েকজন উস্তাদ হলেন, মাওলানা ফখরূদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী (রাহ.) কারী তাইয়্যেব (রাহ.) ওয়াহিদুজ্জামান কিরানাভী (রাহ.) শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রাহ.) মাওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.), মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী, মাওলানা শরীফুল হাসান (রাহ.) মাওলানা নাসির খান (রাহ.) মাওলানা আনযার শাহ (রাহ.)সহ আরো বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরাম।

কর্মজীবন: মুরাদিয়া মাদরাসায় তিনি প্রথমে তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আহাদ (রাহ.)এর পরামর্শে আল্লামা কাসেম নানুতুবী (রাহ.)এর প্রতিষ্ঠিত ভারতের মুযাফফার নগরে মুরাদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরূ করেন। সেখানে একবছর শিক্ষকতা করেন।

মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে সর্বপ্রথম শরীয়তপুর জেলার মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন।

ফরিদাবাদ মাদরাসায় ১৯৭৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসায় যোগদান করেন। তিনি ফরিদাবাদ মাদরাসায় দীর্ঘদিন যাবত দারূল ইকামার দায়িত্ব পালন করেন।

মালিবাগ মাদরাসায় ১৯৮২ সালে চলে আসেন জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে। এখানে তিরমিজি শরিফের দরস দেন। মালিবাগে ৬ বছর শিক্ষকতার করেন।

এরপর তিনি ১৯৮৮ সালে রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ১৯৯৮ সালে তুরাগ থানায় জামিয়া সুবহানিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

এছাড়াও তিনি চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, শামসুল উলূম কাওলা মাদরাসা, টিকরপুর জামেয়া, জামেয়া ইসহাকিয়া মানিক নগর’সহ দেশের কয়েকটি মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুরুব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিভিন্ন পদে থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন। ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং হাইয়্যাতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

আধ্যাত্মিক জীবন: ১৯৭৩ সালে শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রাহ.)এর কাছে প্রথমে বায়াআত হন। তার ইন্তেকালের পর মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.)এর কাছে বায়আত হন।

১৯৯৫ সালে মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.) বাংলাদেশে আসলে সেসময় তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। বর্তমানে তিনি খানকায়ে মাহমুদিয়ার আমির।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে যোগদান করেন। তারপর ১৯৯০ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। ২০১৫ সালের ৭ই নভেম্বর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। অদ্যাবধি তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সময় থেকেই কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্বে ছিলেন। এর ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আন্দোলনের সময় সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তৃত হলে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আসেন। শুরু করে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আন্দোলনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসীকতার সাথে ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ এবং ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)এর ইন্তিকালের পর গত ১৬ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে নবগঠিত কমিটিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী কেন্দ্রীয় মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

আন্দোলন-সংগ্রাম: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর রাজপথে যেসব গুরূত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হচ্ছে- খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, তাসলিম নাসরিনের নাস্তিক্য মতবাদবিরোধী আন্দোলন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার আন্দোলন, বাবরি মসজিদ রক্ষা আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষা নীতি থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেওয়ার প্রতিবাদী আন্দোলন, স্কুল পাঠ্যপুস্তক সংশোধনী আন্দোলন, রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন, সুপ্রিমকোর্ট চত্বর থেকে থেমিস দেবির মূর্তি অপসারণ আন্দোলন, কাশ্মীর-ফিস্তিন’সহ বিশ্বের দেশে দেশে মুসলিম নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন এবং সম্প্রতি ফ্রান্সে রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদে দুর্বার আন্দোলন অন্যতম।

তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশি-বিদেশি যে কোন আগ্রাসী তৎপরতার বিরূদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদি ছিলেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় স্বার্থে সব সময় সবার আগে কথা বলতেন। বিএসএফ’র সীমান্ত হত্যাকা-ের বিরূদ্ধে তিনি দুর্বার প্রতিবাদি ছিলেন। তাঁর সোচ্চার প্রতিবাদের কারণে ভারত আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের অখ-তা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রীস্টান মিশনারী অপতৎপরতা ও আধিপত্যবাদি অপশক্তির ইন্ধনে কথিত শান্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্রের বিরূদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। বাংলাদের সমুদ্র সীমা নিয়ে প্রতিবেশি দেশসমূহের আগ্রাসী পদক্ষেপেরও তিনি সোচ্চার প্রতিবাদ করেছেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সব সময় ন্যায়, ইনসাফ ও সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়ার পাশাপাশি স্বাধীন-সার্বভৌম ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ঈমান-আক্বিদার বিরূদ্ধে যে কোন অপতৎপরতার বিরূদ্ধে সোচ্চার থাকতেন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় আগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রায় প্রতিটি বক্তব্যেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রুর সুরক্ষার কথা জোরালোভাবে উল্লেখ করতেন। এছাড়াও তিনি বিহির্বিশ্বের যে কোন নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে ভূমিকা পালন করতেন।

ইন্তিকাল: এই মহান বুযূর্গ আলেম শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) আজ (১৩ ডিসেম্বর) রবিবার মহান মাহবুবে আ’লার ডাকে সাড়া দিয়ে পরকালের পথে যাত্রা করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

ইন্তিকালের সাময় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান রেখে যান। জানাযার সময় এখনো নির্ধারণ হয়নি। জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দের বৈঠক শেষে একটু পরে জানাযার সময় জানানো হবে বলে উম্মাহকে জানিয়েছেন হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান।

উল্লেখ্য, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী গত ১ ডিসেম্বর ঠাণ্ডাজণিত কারণে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েলে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার Type 2 respiratory failure রোগ নির্ণয় হয়।

পরিশেষে বলবো- হাদিসের মসনদে তিনি শায়খুল হিন্দের প্রতিচ্ছবি। সিয়াসতের ময়দানে তিনি হুসাইন আহমাদ মাদানীর প্রতিচ্ছবি। তাযকিয়ায়ে নফসের জগতে তিনি মাহমুদ গাঙ্গুহীর প্রতিচ্ছবি। তিনি দেওবন্দের সন্তান, তিনিই দেওবন্দিয়্যাতের লালনকারী।

একবিংশ শতাব্দীর এই মুসলিম সাধক এখন বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে আপোষহীন নেতা হিসেবে পরিচিত, তিনি হাজার হাজার ছাত্র গড়েছেন, তিনি তার সাহসিকতায় বাংলাদেশের ইসলাম প্রেমী তাওহিদী জনতার অন্তরের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি যেন হাজার বছর বেঁচে থাকেন। আমরা যেন এই সাধকদের যথাযোগ্য কদর করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.