প্রাণীর ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ হারাম উল্লেখ করে ফতোয়া প্রকাশ - Shimanterahban24
March 23, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

প্রাণীর ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ হারাম উল্লেখ করে ফতোয়া প্রকাশ

1 min read

মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী :: কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস দাবি করে ইসলামে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ হারাম বলে উল্লেখ করেছেন দেশের র্শীষ উলামা মাশায়েখগণ।

মূর্তি-ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনে কোরআন সুন্নাহ্’র আলোকে দেশের শীর্ষ আলেম ও মুফতিগণের আজ বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে দেশের শীর্ষ উলামা মাশায়েখগণ এক সংবাদ সম্মেলনে এ ফতোয়া প্রকাশ করেন।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী ও মুফতী এনামুল হক বসুন্ধরা। এসময় মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মুফতী আরশাদ রহমানী বসুন্ধরা, মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদপুর, মুফতী মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী,মাওলানা জুনাইদ আল-হাবীব,মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া,মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাও. খোরশেদ আলম কাসেমী, মাও.খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা মাশায়েখ ও মুফতিগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল ঢাকার বসুন্ধরাস্থ ইসলামী রিসার্চ সেন্টারে দেশের শীর্ষ মুফতিগণের উপস্থিতিতে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই ফতোয়া তৈরী করা হয়।ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন, মুফতি আব্দুল মালেক, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা এনামুল হক কাসেমী, মুফতি মুহিউদ্দীন মাসুম, মাওলানা তাউহিদুল ইসলাম।

ফতোয়াটি ২টি প্রশ্নে ভাগ করা হয়। ১টি প্রশ্ন ছিলো: মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তি নির্মাণ স্থাপন ও সংরক্ষণে ইসলামী বিধান কি? এবং প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে শরিয়া বিধানের দিক দিয়ে কোন পার্থক্য আছে কি?
মুফতিগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রশ্নের যা রায় দেন তা হলো, কোরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষ বা অন্য যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য-মূর্তি নির্মাণ, স্থাপন, সংরক্ষণ ও পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও সন্দেহাতীতভাবে না জায়েয,স্পষ্ট হারাম এবং কঠোরতর আযাবযোগ্য গুনাহ্। আর যদি পূজার উদ্দেশ্যে হয় তাহলেতো স্পষ্টই শিরক। প্রাণীর ভাস্কর্য ও পূজার মূর্তির মাঝে শরিয়তের দৃষ্টিকোণে হারাম ও নিষিদ্ধ হওয়ার দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নেই।
কুরআনের দলিল: فَاجۡتَنِبُوا الرِّجۡسَ مِنَ الۡاَوۡثَانِ وَاجۡتَنِبُوۡا قَوۡلَ الزُّوۡرِ ۙ
সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক। সুরা হজ্ব আয়াত ৩০।
এই আয়াতে পরিস্কারভাবে সব ধরণের মূর্তি পরিত্যাগ করার ও মূর্তিকেন্দ্রীক সকল কর্মকাণ্ডকে বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
হাদীস শরিফেও রাসুলে কারিম সা. মূর্তি ভাস্কর্য সম্পর্কে পরিস্কার বিধান দান করেছেন: عَنْ مُسْلِمٍ، قَالَ كُنَّا مَعَ مَسْرُوقٍ فِي دَارِ يَسَارِ بْنِ نُمَيْرٍ، فَرَأَى فِي صُفَّتِهِ تَمَاثِيلَ فَقَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ ‏”‏‏.‏
মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‌’ঊদ রা. থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, (ক্বিয়ামাতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে। (মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮)
حَدَّثَنَا أَبُو زُرْعَةَ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ دَارًا بِالْمَدِينَةِ فَرَأَى أَعْلاَهَا مُصَوِّرًا يُصَوِّرُ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي، فَلْيَخْلُقُوا حَبَّةً، وَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً ‏”‏‏
আবূ যুর’আ রহ. থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা রা. এর সাথে মাদীনাহর এক ঘরে প্রবেশ করি। ঘরের উপরে এক ছবি নির্মাতাকে তিনি ছবি তৈরি করতে দেখলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি- (আল্লাহ্‌ বলেছেন) ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি অত্যাচারী আর কে, যে আমার সৃষ্টি সদৃশ কোন কিছু সৃষ্টি করতে যায়? তাহলে তারা একটি দানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি অণু পরিমাণ কণা সৃষ্টি করুক! (মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১১১, আহমাদ ৯০৮৮)
দৃষ্টান্তস্বরূপ এখানে কয়েকটি হাদীস পেশ করা হলো। এ প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কোরআন সুন্নাহর এই সুস্পষ্ট বিধানের কারণে, মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও স্থাপন ইত্যাদি সকল বিষয় হারাম হওয়ার ব্যাপারে গোটা মুসলিম উম্মাহ একমত পোষণ করেছেন।
ফতোয়াটির ২য় প্রশ্নের উত্তর হলো,
কিছু কিছু লোক যারা প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বলে যে ভাস্কর্য মূর্তি এক নয়, তাদের দাবি শরিয়া বিধানের দিক থেকে তো এক নয়-ই এমনকি অভিধানিকভাবেও ভুল।
কারণ অভিধানিকভাবে প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। ভাস্কর্যের প্রকৃত অর্থ দেখে নিতে পারেন, বাংলা একাডেমী, ইংলিশ বাংলা ডিকশনারি, সংসদ বাংলা অভিধানের মাঝে।
প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করতে গিয়ে এই লোকগুলো যে আয়াতটি পেশ করে তা হলো, সুরা সাবার ১৩নং আয়াত। এতে বলা হয়েছে:یَعۡمَلُوۡنَ لَہٗ مَا یَشَآءُ مِنۡ مَّحَارِیۡبَ وَتَمَاثِیۡلَ وَجِفَانٍ کَالۡجَوَابِ وَقُدُوۡرٍ رّٰسِیٰتٍ ؕ তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। (সুরা সাবা,আয়াত ১৩)।
এই আয়াতে বর্ণিত تماثيل তথা ভাস্কর্য নির্মাণের কথাকে কেন্দ্র করে যারা প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ বলে দাবি করে করে। তারা মুলত এ আয়াতের বিশুদ্ধ তাফসিরকে পাশ কাটিয়ে যায়। কারণ বিশুদ্ধ তাফসিরে উক্ত আয়াতে বর্ণিত ভাস্কর্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিষ্প্রাণ বস্তুর ভাস্কর্য। তবে অনেকে এটাকে প্রাণীর ভাস্কর্য বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তারা একথাও স্পষ্ট করছেন যে, সুলাইমান আ. এর যুগে তা বৈধতা থাকলেও পরবর্তিতে শেষ নবী সা. এর শরিয়তে বিশুদ্ধ হাদিসে প্রাণীর ভাস্কর্যকে কঠোরভাবে নিষেধ করার মাধ্যমে উক্ত বৈধতা রহিত হয়ে গেছে। যেমন ভাই বোনের পরস্পরের বিয়ে হযরত আদম আঃ এর যুগে বৈধতা ছিলো,আমাদের শরিয়তে সেটা রহিত হয়ে গেছে। (তাফসিরে কুরতুবি ১৪/২৭২, আলবাহরুল মুহিত ৮/৫৫২, ফাতহুল বারী ৬/৪৬৭, ফাতহুল মুলহিম ৪/৩৫)
ভাস্কর্যের পক্ষে আরেকটি দলিল এভাবে পেশ করা হয় যে, আলফ্রেড গিয়োম তার সীরাতে ইবনে হিশামের ইংরেজি অনুবাদে এভাবে উল্লেখ আছে যে, মক্কা বিজয়ের সময় মহানবি সা. ৩৬০টি মূর্তি ভাঙ্গার অনুমতি দিলেও মাঝে থাকা মেরির ছবি দেখে তাতে হাত রেখে তিনি বলেন,এটা তোমরা ভেঙ্গো না। এটি একটি অসত্য বর্ণনা। নবী সা. এর পবিত্র সীরাত যাদের অধ্যায়ে এসেছে এবং প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী ও তার বিধানের ব্যাপারে যারা অবগত আছেন তারা এই মিথ্যাচার সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা বিশুদ্ধ হাদীস সমূহের দ্বারা কাবা শরিফের সকল মূর্তি অপসারণ ও প্রতিকৃতি মুছে ফেলার কঠোর নির্দেশ প্রমাণিত রয়েছে।
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَمَّا رَأَى الصُّوَرَ فِي الْبَيْتِ لَمْ يَدْخُلْ، حَتَّى أَمَرَ بِهَا فَمُحِيَتْ، وَرَأَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ ـ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ ـ بِأَيْدِيهِمَا الأَزْلاَمُ فَقَالَ ‏ “‏ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ، وَاللَّهِ إِنِ اسْتَقْسَمَا بِالأَزْلاَمِ قَطُّ ‏”‏‏.‏
ইবনু ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত: নবি‎ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কাবা ঘরে ছবিগুলো দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৫২)
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ، وَحَوْلَ الْكَعْبَةِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ نُصُبًا فَجَعَلَ يَطْعَنُهَا بِعُودٍ فِي يَدِهِ وَجَعَلَ يَقُولُ ‏{‏جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ‏}‏ الآيَةَ‏.‏
আবদুল্লাহ্‌ ইবনু মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন (বিজয়ীর বেশে) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কা‘বা শরীফের চারপাশে তিনশ’ ষাটটি মূর্তি ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেনঃ ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে’। (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)”- (বনী ইসরাঈল/ইসরা : ৮১, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৭৮)
মোট কথা, মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মাঝে শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। পূজার উদ্দেশ্য না হলেও তা সন্দেহাতীতভাবে না জায়েয ও স্পষ্ট হারাম এবং কঠোরতর আযাবযোগ্য গুনাহ্। ইসলামের এমন সুস্পষ্ট বিধানকে পাশ কাটিয়ে, প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মাঝে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ বলা সত্য গোপন করা এবং কোরআন ও সুন্নাহ্’র বিধান অমান্য করার নামান্তর।
উপরন্তু কোরআন ও সুন্নাহর বিধানের সামনে বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্য-মূর্তির উপমা টেনে আনা, ইসলামের একটি অকাট্য বিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। কোন মুসলিম দেশের শাসকদের শরিয়ত বিরোধী কাজ মুসলমানদের জন্য অনুসরণ যোগ্য নয়। তাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় হচ্ছে কোরআন সুন্নাহ্ এবং ইসলামী শরিয়ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.