লাকসাম দীর্ঘ ৭ বছরও ২ বিএনপি নেতা ফিরে না আসায় জনমনে নানা প্রশ্ন?
1 min readলাকসাম প্রতিনিধি :: আজ আজ শুক্রবার নীরবে- নিস্তব্দে কেটে যাচ্ছে কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল বিএনপি’র প্রান পুরুষ এ অঞ্চলের গণ মানুষের নেতা লাকসামের দুই শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ন কবির পারভেজ নিখোঁজের ৭ বছর গুম দিবস।
অপহরণকারীদের পরিবার জানায়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর এ দিনে র্যাব-১১ পরিচয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সাদা পোষাকে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি ও দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু ও পৌর বিএনপির সভাপতি- ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির পারভেজকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে আলীশ্বর নামক স্থান থেকে এবং অপর বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে নিখোঁজ হিরুর মালিকানাধীন লাকসাম ফ্লাওয়ার মিল থেকে নগদ টাকা ও বেশক’টি দামী মোবাইল সেটসহ আটক করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পৌনে ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ওই যৌথবাহিনীর অভিযান চলে। ওইদিন গভীর রাতে অভিযানকারী যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আটক ১০ জনকে লাকসাম থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেও অপর দুই শীর্ষ নেতা হিরু-পারভেজের ভাগ্যে কি ঘটেছে দীর্ঘ ৩ বছরেও সন্ধান দিতে পারেনি কোন সংস্থা।
স্থানীয় জনৈক মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানায়, গত ৩০ আগষ্ট ২০১৬ গুমের মত একটি ভীতিপ্রদ ও অমানবিক ঘটনা বিভিন্ন দেশে যে ভাবে ঘটছে তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ এবং গুম বিরোধী জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য আর্ন্তজাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। আমাদের দেশেও এ দিনটি পালিত হয়েছে ক্ষোভ, উদ্ভেগ, উৎকন্ঠা ও চোখের জ্বলের মধ্য দিয়ে। গুমের ঘটনা পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ ও ট্র্যাজেটি। যাকে গুম করা হয় তাদের আত্মীয় স্বজন কেহই জানতে পারে না অপহৃতরা কোথায় আছে, কি ভাবে আছে, জানতে পারে না তারা কি জীবিত না মৃত। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুম হওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা তাদের লাশের সন্ধান পায় না। খুব ভাগ্যবান হলে কিছু কিছু লাশের সন্ধান পায়। সেই নিরীক্ষে এ অঞ্চলের গণ মানুষের নেতা হিরু- পারভেজের কি পরিনতি হয়েছে নিখোঁজের ৩ বছর পার হলেও আজও তাদের খোঁজ নেই।
শুধুমাত্র দু’পরিবার ঘরোয়া ভাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন ছাড়া স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে জোরালো কোন কর্মসূচী নেয়নি। বিগত দিনে এ দু’নেতার নানাহ কর্মসূচী ঘিরে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও পকেট বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অথচ বলতে বলতে দীর্ঘ ৩ বছর পার হলেও মনে হয় এইতো সেদিনের ঘটনা। তবে এ ঘটনার স্বাদ তীব্র ভাবে অনুভব করছেন অপহৃত দুই পরিবার-পরিজনরা।সর্বচ্চো আতংক আর অপহৃত দুই পরিবারের জন্য সারা জীবনের অলিখিত এক অজানা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে স্বজনদের। ওই অপহৃত দু’জনের সন্ধান পেতে এবং স্বজনদের কাছে ফিরে আসতে আজও অপেক্ষায় তারা।
জানা যায়, ২০১৩ সালের এ দিনে এ দক্ষিণ কুমিল্লার লাকসাম অঞ্চলের ২ বিএনপি নেতা অপহৃত ব্যাক্তিদের দু’পরিবার দাবী করছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ওই শীর্ষ নেতাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ ৭বছরেও তাদের কোন হদিস পাচ্ছে না। তেমনি কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে অপহৃত দুই নেতার পরিবার-পরিজনের। হিরু-পারভেজ এখনও বেঁচে আছেন, তারা ফিরে আসবে, না কি তাদের মেরে ফেলা হয়েছে তাহলে অন্তত দু’জনের লাশটি ফেরত দিন। কে দিবে স্বজনদের প্রশ্নের জবাব।
স্থানীয় লোকজন জানায়, দীর্ঘ ৭ বছর জুড়ে চোখের জ্বলে দিন কাটছেন অপহৃত দু’শীর্ষ নেতার পরিবার-পরিজন ও ভক্তদের। তাদের সন্ধান না পেয়ে স্বজনরা প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দুই নেতা নিখোঁজে স্তব্দ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের অলি-গলি। অপহৃতদের স্বজনরা আরো জানায়, থানায় ডায়েরী, কুমিল্লার কোর্টে মামলা তবুও থামছে না স্বজন-ভক্তদের কান্না। এ অঞ্চলের গণ মানুষের নেতা হিরু-পারভেজ নিখোঁজে এ অঞ্চলে একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তের মানুষগুলো যেন একাকার হয়ে গেছে। ৭ বছর জুড়ে তবুও নিরবে নিঃস্তব্দে কাঁদছে এ অঞ্চলের সকল পেশার মানুষ। দু’শীর্ষ নেতা নিখোঁজে অপহৃত পারভেজের ছোট ভাই গোলাম ফারুক লাকসাম থানায় ডায়েরী ও কুমিল্লা কোর্টে মামলা দায়ের করলে তার তদন্ত ভার লাকসাম থানা পুলিশের উপর ন্যাস্ত হয়। মামলা ও ডায়েরী তদন্তে ৩ বছর পার হলেও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকা এবং মূল পরিকল্পনাকারীদের সনাক্ত করতে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার লোকজনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে তাদের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন স্বজনরা। এ দিকে দু নেতা নিখোঁজের মামলায় পুলিশী প্রতিবেদনের নারাজী দিয়েছে মামলা ও ডায়েরীর বাদী গোলাম ফারুক।
অপহৃত দুই পরিবারের স্বজনরা জানায়, থানা পুলিশ মূল হোতাদের বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলে, ওই নাটকীয় প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী গোলাম ফারুক অনাস্থা আবেদন জমা এবং একই সাথে মামলাটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেছে।