ফটিকছড়িতে আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গণসংবর্ধনা প্রদান
1 min read
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ;; চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নব নির্বাচিত আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গণ সংবর্ধনা প্রদান করেছে ফটিকছড়ি তৌহিদি জনতা ঐক্য পরিষদ।
আজ ২৫ নভেম্বর (বুধবার) বাদ জোহর নাজিরহাট বাজার চাউলহাটা মসজিদ সংলগ্ন চত্বরে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
মাওলানা আবু মাকনুন মুহাম্মদ আজিজির সঞ্চালনায় হেফাজতের নায়বে আমীর নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামীম মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও বাবুনগর মাদরাসার মহাপরিচালক মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
এদিকে বিকেল তিনটায় আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কাটিরহাট পৌঁছলে মোটর শোভাযাত্রা ও মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। কাটিরহাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের শোডাউনে আমীরে হেফাজতকে সংবর্ধনাস্থলে নিয়ে যায় ফটিকছড়ি হেফাজত নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা। এসময় রাস্তায় দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আমীরে হেফাজতকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানান। আমীরে হেফাজত গাড়ি থেকে হাত নেড়ে তাঁদের অভিবাদনের জবাব দেন এবং সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মাদরাসা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান হয়
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রথমে মহান আল্লাহ তায়া’লার শোকরিয়া আদায় করেন এবং আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন,আমাদের মনে রাখতে হবে,আমরা সকলেই মুসলমান। মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদের প্রভু। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিম আমাদের সংবিধান। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কলিজার টুকরা নবী। ইসলাম ও মুসলমানের উপর কোন প্রকারের আঘাত আসলে ঐক্যবদ্ধভাবে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এটাই হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
হেফাজতে ইসলাম কোন দল বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেনি,করবেও না। হেফাজতে ইসলামের কাজ হলো আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হেফাজতে ইসলাম সুশৃঙ্খলভাবে সেই কাজেই করে যাচ্ছে। বিশ্বনবী সা. এর ইজ্জত রক্ষার জন্যই ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ব্যনারে আমরা শাপলা চত্বরে গিয়েছিলাম। এদেশের মানুষ ইসলাম প্রিয়,নবীপ্রেমিক। বিশ্বনবী সা. এর ইজ্জত রক্ষায় লক্ষ কোটি নবীপ্রেমিক তৌহিদি জনতা প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে প্রস্তত রয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রান্সে রাসূল সা.এর অবমাননার কড়া প্রতিবাদ জানান আল্লামা বাবুনগরী।
আমীরে হেফাজত আরো বলেন,
আকিদায়ে খতমে নবুওয়াত তথা বিশ্বনবী সা.কে সর্বশেষ নবী ও রাসূল অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। হিন্দু,বৌদ্ধ ও খ্রীস্টানদের মতো অমুসলিম পরিচয়ে কাদিয়ানীরাও এদেশে থাকতে পারে,এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে ৯০% মুসলমান ও নবীপ্রেমিকদের এই দেশে
মুসলিম পরিচয়ে কাদিয়ানীরা থাকতে পারে না। ইসলাম ও মুসলমানদের কোন পরিভাষা তারা ব্যবহার করতে পারে না।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। হেফাজতের সকল আন্দোলন সংগ্রাম ইসলাম বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে। নাস্তিক মুরতাদ সহ ইসলাম বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের ঈমানী আন্দোলন ছিলো,আছে,থাকবে ইনশাআল্লাহ। এসময় ফটিকছড়িবাসীকে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন,হেফাজতে ইসলামের সূচনা হয়েছিলো রক্ত দিয়ে এবং আগামী দিনে হেফাজতে ইসলাম কায়েমও থাকবে রক্তের নজরানার বিনিময়ে।
আমীরে হেফাজতের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন,আল্লামা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আমাদের ফটিকছড়ির কৃতি সন্তান হলেও তিনি গোটা বাংলাদেশের গৌরব। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ইসলামি ব্যক্তিত্ব। সত্যের আহবানে সদাজাগ্রত একজন বীর তিনি। আল্লামা বাবুনগরী একটি ইতিহাস,একটি বিপ্লব। তিনি এদেশের লক্ষ কোটি তৌহিদী জনতার প্রাণের স্পন্দন, সাহসের প্রতীক ও আশার আলো। ঈমানী চেতনায় বলিয়ান বাতিলের বিরুদ্ধে এক সাহসী বীর আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বক্তাগণ বলেন, ফটিকছড়ির এ লৌহ মানব আল্লাহ প্রদত্ত প্রজ্ঞা,প্রতিভা, উন্নতচরিত্র,দূরদর্শী চিন্তা,গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত,আমানতদারীতা ও আপোষহীনতার কারণে গত ১৫ ই নভেম্বর দারুল উলুম হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত ওলামা প্রতিনিধি সম্মেলনে
দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমাদের ফটিকছড়ি বাসীর জন্য বহু বড় নেয়ামত ও গৌরবের বিষয়।
নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনে ২০১৩ সালে যেমন আমরা মুজাহিদদে মিল্লাত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুমগরী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে ছিলাম তেমনিভাবে আগামী দিনেও ইসলামের জন্য যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থেকে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো আমরা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে থাকবো। আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় ইসলামের জন্য প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন,মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী,মাওলানা হারুন আজিজি নদভী,মাওলানা হাবীবুল্লাহ নদভী,
মাওলানা জুনায়েদ বিন জালাল,মাওলানা ইউসুফ আনছারী,মুফতী খালেদ আমতলী মাদরাসা,মুফতী শওকত বিন হানিফ নানুপুরী,মাওলানা হাবীবুল্লাহ আজাদি,মাওলানা মাহমুদ শাহ ধর্মপুরী বাবুনগর মাদরাসা,মাওলানা হাবীবুল্লাহ ধর্মপুরী,মাওলানা ইয়াইয়া নাজিরহাট মাদরাসা,মুফতী আব্দুল হাকিম নাজিরহাট মাদরাসা,মাওলানা কারী আবু সাঈদ রাবারবাগান মাদরাসা,মুফতী তারেক,মুফতী মিজানুর রহমান ইসলামাবাদী ইয়াহইয়া উস সুন্নাহ ফাউণ্ডেশন,মাওলানা নেজাম,মাওলানা নোমান,মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ,মাওলানা ফরিদ, মাওলানা দিদারুল আলম,মাওলানা শফী দাঁতমারা মাদরাসা,মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুনাফকিল,মাওলানা আইয়ুব ধর্মপুরী, মাওলানা ওসমান শাহনগরী,মাওলানা ইন’আমুল হাসান,মাওলানা জুনাইদ আহমদ প্রমূখ।
প্রধান অতিথি আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর দুআর মাধ্যমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।