তোমার কাছে যা বিলাসিতা; অন্যের কাছে তা বেঁচে থাকার লড়াই - Shimanterahban24
April 2, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

তোমার কাছে যা বিলাসিতা; অন্যের কাছে তা বেঁচে থাকার লড়াই

1 min read

[কাকলী আক্তার মৌ]

তোমার কাছে যা বিলাসিতা;
অন্যের কাছে তা বেঁচে থাকার লড়া।
এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়েছি, গাড়িতে উঠব তখনি দেখলাম রাস্তার পাশে একটা জটলা।ওখানে গিয়ে দেখি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এক ধনীর দুলাল
রিক্সাওয়ালাকে কষে চড় মেরেছে আর অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। অন্যরা দর্শক হয়ে তা দাড়িয়ে দেখছে। ঐ লোক চড় ও গালি খেয়ে ভাড়া না নিয়েই চলে যাচ্ছে। আমিও তখন তার কাছে গিয়ে
বিষয়টা জানার চেষ্টা করলাম। তখন তিনি কেঁদে তার জীবনের কঠিন সংগ্রামের কথা গুলো সংক্ষেপে আমাকে বলেছিলেন।

বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। অভাবের কারণে আমি বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারেননি।
খবু কষ্ট করে এইচএসসি পাস করি। ব্যক্তি জীবনে হতদরিদ্র কিন্তু সৎ থাকার চেষ্টা করছি। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য খুব কষ্টে ও পরিশ্রমে একটা পিয়নের চাকরি যোগাড় মাসের শেষে সব মিলিয়ে ১৪০৭৫/- টাকা বেতন পাই। মা বাবা ও এক বোন নিয়ে ভালই চলে যাচ্ছিল। উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়ার পর বাবা একদা বিয়ে করিয়ে বউ ঘরে আনলেন। খরচের পরিমান বাড়ল।
বছর ঘুরতেই ঘর আলো করে জমজ সন্তান জন্ম নিল। এদিকে বিবাহ উপযুক্ত বোনকে টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছিলাম না। তারপরও ধারদেনা করে বোনকে বিয়ে দেই। আমার বাবা-মা বৃদ্ধ; শয্যাশায়ী। ডাক্তার ও ঔষধের উপর তারা
টিকে আছেন। আমার নিজের,সন্তানের ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না।
কারণ আমার মাসিক আয় ১৪০৭৫/- এবং ব্যয় ছিল ২৪০০০/-
(মা-বাবার ঔষধ ৪০০০/-,বাজার সদাই ৭০০০/-,বাসা ভাড়া ৪০০০/-,
বিদ্যুত ও গ্যাস বিল ১৫০০/,
ছেলে মেয়ের পড়াশুনা বাবদ ৩০০০/-,যাতায়াত ২০০০/-,
মাসিক ঋণ পরিশোধ ২৫০০/-)
ব্যক্তি জীবনে সৎ থাকার কারণে হারাম পথেও যেতে পারছিলাম না। তাই একদা সিদ্ধান্ত নিলাম,
দিনে চাকুরি করব আর রাতে রিক্সা চালাব। যেই ভাবা সেই কাজ;ঐ দিন থেকেই অফিসের ডিউটি শেষ করে আর বাসায় যাই না; না গিয়ে বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রিক্সা চালাই। সৎ পথে,
পরিশ্রম করে রোজগার করি তারপরও বাজে চিন্তা
মাথায় আনি না। আর আজ হক কথা বলতে গিয়ে ছেলের বয়সী একজনের হাতে চড় খেলাম। এই কথা বলে বেশি দাড়ালেন না; নতুন যাত্রীর সন্ধানে চলে গেলেন।

উনার কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ অোমার বাবাও এক সময় রিক্সা চালাতেন। আমি জানি একজন রিক্সাওয়ালা কত কষ্ট করেন। রমিজ উদ্দিনের মত এরকম পরিশ্রমী ব্যক্তিকে আমি অন্তর থেকে স্যালুট করি। রাস্তা-ঘাটে চলার সময় এরকম হাজার হাজার রমিজ উদ্দিনের দেখা তোমরা পাবে, কেউ হয়ত চিনবে আবার কেউ হয়ত চিনতে পারবে না।

সকল পাঠকের কাছে বিনীত অনুরোধ, কোন পরিশ্রমী ব্যক্তির সাথে খারাপ আচরণ করবে না, ভাড়া নিয়ে বিরোধ করবে না। যদি সম্ভব হয় কৌশলে অভাবী লোকদের সহযোগীতা কর।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাড়া বা মজুরী দেয়ার চেষ্টা কর। মনে রাখবে তোমার কাছে যা বিলাসিতা; অন্যের কাছে তা বেঁচে থাকার লড়াই।

আমার আত্মজীবনী থেকে সংকলিত.
আমি ঘুমন্ত কবি,নির্বাক ছবি-
Kakoli Akther Mou

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.