জমিয়ত রাসূলের পতাকাবাহী একমাত্র সংগঠন - Shimanterahban24
March 29, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

জমিয়ত রাসূলের পতাকাবাহী একমাত্র সংগঠন

1 min read
জমিয়ত

[এম আতিকুর রহমান কামালী]

বৃটিশ কবলিত ভারতের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ১৯১৯ সালে ২৩ নভেম্বর জমিয়তে উলামা নামক যে সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশের শীর্ষস্হানীয় উলামায়ে কেরামগণের সমন্বয়ে জমিয়ত গঠিত হয়। তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জমিয়ত ১৯১৯ সালে আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক রূপ লাভ করলেও ভারতবর্ষে তার কার্যক্রম অনেক পূর্বে থেকেই চলে আসছিল। ফতুওয়া, জিহাদী আন্দোলন, রেশমী রুমাল আন্দোলন, অবশেষে ২৩ নভেম্বর ১৯১৯ সালে ওয়ালী উল্লাহীর বিপ্লবী আন্দোলনের ৪র্থ পর্ব, সর্বভারতীয় সকল চিন্তাধারার আলিমদের সঙ্গঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আত্মপ্রকাশ করে।

দেশ ভিন্নতার কারণে দলিয় বিভক্তি হয়ে পাকিস্তানে ১৯৪৫ সালে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়।

২২ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু করে। দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শায়খুল হাদিস শায়খ জিয়া উদ্দিন (হাফি.) ও মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ( হাফি.)

জমিয়তের নাম করণ করা হয়েছে কুরআনের তিনটি আয়াতের আলোকে।
১। واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا
থেকে “জমিয়ত” নাম চয়ন করা হয়েছে।
২। إنما يخشي الله من عباده العلماء
থেকে “উলামা” শব্দ নেয়া হয়েছে।
৩। ان الدين عند الله الأسلم
থেকে “ইসলাম” শব্দটি গ্রহণ করে দলের নাম “জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম” রাখা হয়েছে। ( ড. খালিদ মাহমুদ সুমরু, পাকিস্তান )

মোহাম্মদ ইবনে কাসিমের আজাদ কৃত গোলাম মূসা ইবনে উবায়দা( রা.)বলেন, একদা মোহাম্মদ ইবনে কাসিম আমাকে সাহাবী হযরত বারা ইবনে আজীজ (রা.) এর নিকট রাসূল (সা:) এর পতাকা ( কোন বর্ণের ছিল ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তা চতুষ্কোণ বিশিষ্ট কালো সাদা রেখাযুক্ত কম্বলের ন্যায় ছিল।
( তিরমিযী ও আবু দাউদ / মিশকাত- ৩৭১২ )
হাদিসে সাদা কালো ডোরা বা রেখা বিশিষ্ট চাদর বা কম্বল। যা আমরা দেখতে পাই জমিয়তের পতাকার মধ্যে।

সপ্তম হিজরিতে খায়বার যুদ্ধে যখন মুসলমানরা ইহুদিদের হাতে চরম মার খাচ্ছিল তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কাল আমি পতাকা এমন এক পুরুষের হাতে দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসে এবং যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালোবাসেন।’ সকালে সবাই রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাজির হলো। প্রত্যেকের ধারণা ছিল যে পতাকা তার হাতে আসবে। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আলী কোথায়?’ সবাই বলল, চোখের অসুখের কারণে তিনি পেছনে পড়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তার কাছে লোক পাঠাও।’ অতঃপর তাঁকে আনা হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ মুখের লালা হজরত আলী (রা.)-এর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য সুস্থতার দোয়া করলেন। ফলে তিনি এমনভাবে সুস্থ হলেন যেন এর আগে তাঁর চোখে কোনো অসুখ ছিল না। অতঃপর তাঁর হাতে পতাকা দিয়ে বললেন, ‘ধীরে-সুস্থে এগিয়ে যাও ও তাদের মুখোমুখি অবস্থান নাও।’ (বুখারি : ৪২১০)। এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের বিজয় দান করেন।

মুতার যুদ্ধ; অষ্টম হিজরিতে রোমিও সামন্তরাজ মোরাহবিল মুতা নামক স্থানে মুহাম্মদ (সা.) প্রেরিত মুসলিম রাজদূতকে হত্যা করে। মুহাম্মদ (সা.) তখন বাধ্য হয়ে মুতার উদ্দেশে বাহিনী গঠন করেন এবং হজরত জায়েদ বিন হারেসাকে বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করে তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করেন। এরপর ঘোষণা করেন, ‘জায়েদের পর যুদ্ধ পরিচালনা করবে জাফর ইবনে আবু তালেব। তারপর যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা।’ মুতার প্রান্তরে মুসলিম বাহিনী পৌঁছার পর হজরত জায়েদ ইবনে হারেসা পতাকা হাতে যুদ্ধ শুরু করেন। তিনি শহীদ হলে পতাকা গ্রহণ করেন হজরত জাফর ইবনে আবু তালেব। যুদ্ধের তীব্রতা ও শত্রুর আক্রমণে তিনি এক হাত হারিয়ে ফেললে অপর হাতে পতাকা ধরে রাখেন। পরে যখন তাঁর দ্বিতীয় হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন তিনি দুই পা দিয়ে পতাকা উঁচু করে রাখেন। শত্রুরা তাঁর পা কেটে ফেললে তিনি মুখ দিয়ে কামড় দিয়ে পতাকা সমুন্নত রাখেন। তাঁর চার হাত-পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তিনি নিজে মাটিতে পড়ে গেছেন; কিন্তু পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি। শত্রুর সর্বশেষ আঘাত যখন তাঁর দেহকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে তখন পরবর্তী কমান্ডার আব্দুল্লাহ পতাকা গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে তৃতীয় কমান্ডার আব্দুল্লাহ শহীদ হয়ে যান। তখন আরেক সাহাবি হজরত সাবেত ইবনে আরকাম নিজে উদ্যোগী হয়ে পতাকা রক্ষায় এগিয়ে আসেন এবং রাসুলের পতাকা উঁচু করে রাখেন। তিনি মুসলিম বাহিনীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, তোমরা তাড়াতাড়ি চতুর্থ কমান্ডার মনোনীত করো। উপস্থিত সাহাবিদের পরামর্শে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সেনাধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। আল্লাহ তাআলার রহমতে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর হাতে মুতা প্রান্তরে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জিত হয়। (বুখারি, হাদিস : ৪০১৪)

ঐতিহাসিক মুতার যুদ্ধে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় তিনজন সাহাবি জীবন দিয়ে বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে গেছেন কিভাবে নিজেদের পতাকাকে ভূলুণ্ঠিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হয় এবং কিভাবে প্রাণের বিনিময়ে পতাকার মর্যাদা রক্ষা করতে হয়।

মক্কা বিজয়;; পতাকার মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে পতাকা ছিনিয়ে নেওয়ার দৃষ্টান্তও ইসলামের ইতিহাসে রয়েছে। মক্কা বিজয়ের দিন আনসারদের পতাকা ছিল খাজরাজ নেতা সাদ বিন উবাদা (রা.)-এর হাতে। তিনি আবু সুফিয়ানকে শুনিয়ে বলেন, ‘আজ হলো মারপিটের দিন, আজ কাবাকে হালাল করা হবে।’ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই স্থান অতিক্রম করার সময় আবু সুফিয়ান বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি শুনেছেন সাদ কী বলেছে?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন কী বলেছে? তখন তাঁকে সেই কথা বলা হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাদ মিথ্যা বলেছে, বরং আজ হলো সেই দিন, যেদিন আল্লাহ তাআলা কাবাকে সম্মানিত করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪২৮০)

তখন হজরত ওসমান ও আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেন, আমরা সাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নই, হয়তো সে কুরাইশদের মারপিট শুরু করে দেবে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) একজনকে পাঠিয়ে সাদের কাছ থেকে পতাকা নিয়ে তাঁর পুত্র কায়েসকে দিলেন। তবে কারো কারো মতে, পতাকাটি জুবায়ের (রা.)-কে প্রদান করা হয়। (জাদুল মাআদ : ৩/৩৫৬)

অতএব: ব্যক্তি গঠন ইসলামী শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।
দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণে আদর্শ রাষ্ট্রের বিনীর্মানে জমিয়তের বিকল্প নেই।

লেখক; সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্র জমিয়ত।
জয়েন্ট সেক্রেটারি, ছাত্র জমিয়ত জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট ক্যাম্পাস শাখা।
পরিচালক, জমিয়ত পরিবার অনলাইন গ্রুপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.