বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ হয়, নাকি ব্যভিচার?
1 min read
[কাকলী আক্তার মৌ]
রোজী আজকে থানায় যাচ্ছে, সে আজকে একটা ধর্ষণ মামলা করবে,তাকে নাকি একটা ছেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে।
বিষয়টা কাল্পনিক নয়,সমাজে প্রতিদিন এমনটা দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিদিন কোন না কোন রোজীর ভাগ্যে এমনটা ঘটেই চলেছে, পত্রিকায়ও প্রতিদিন এমন অনেক খবর প্রকাশিত হয়।
অনেকে গুরুত্ব দেয়, অনেকে দেয় না।
আমিও এতদিন বিষয়টা নজর এড়িয়ে গেছি। কিন্তু ইদানিং দেখছি সংখ্যাটা দিনে দিনে অত্যাধিক মাত্রায় বেড়েই চলেছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ হয়; সে সঙ্গাট আমার জানা ছিল না, আইনের বই খুলেও দেখেছি, ধর্ষণের সঙ্গাটার সাথে কোন ভাবেই মিলাতে পারছি না।
হয়ত আমার সাথে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।
আসুন দেখি,দ্বীনের ও আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ কাকে বলে?
দ্বীনের ধারা মতে,ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সংঘঠিত হয়। আর তা হল- যিনা বা ব্যভিচার। বল প্রয়োগে সম্ভ্রম লুণ্ঠন।
কোরআন ও হাদীস মোতাবেক,ছেলে-মেয়েদের অশালীন চলাফেরা ও বিবাহ পূর্ব সকল প্রকার শারীরীর সম্পর্ককে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তারপরও মুসলিম ধর্মের কেউ যদি বিবাহ পূর্ব শারীরীর সম্পর্ক স্থাপন করে সেটা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তা যিনা বা ব্যভিচার নামেই প্রকাশিত হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সঙ্গা:
১ম: স্ত্রী লোকটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে।অথবা
২য়: স্ত্রী লোকটির সম্মতি ব্যতি রেখে।অথবা
৩য়: স্ত্রী লোকটির সম্মতিক্রমেই,যে ক্ষেত্রে মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে
স্ত্রী লোকটির সম্মতি আদায় করা হলে।অথবা
৪র্থ: স্ত্রী লোকটির সম্মতিক্রমেই,যে ক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে স্ত্রী লোকটির স্বামী নয় এবং পুরুষটি ইহা জানে যে,স্ত্রী লোকটি তাকে এমন অপর একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সাথে সে আইন সম্মতভাবে বিবাহিত হয়েছে বা
বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে।অথবা
৫ম: স্ত্রী লোকটির সম্মতিক্রমে অথবা সম্মতি ব্যতিরেখে যদি স্ত্রী লোকটির বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, যৌনাঙ্গ অনুপ্রবেশ হলে তা যৌন সহবাসের অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে এবং তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
আইন ও দ্বীনের ধারা উভয়ই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।
এখন আপনারা বিবেচনা করে দেখুন তো
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ বলে কি কিছু আছে?
আমি যতটুকু দেখেছি, জেনেছি বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ বলতে আইনে কোন কিছু নাই। তবে চটকদার বিজ্ঞাপনে থাকলেও থাকতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, যে নারী বিয়ের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে নিজের দেহ স্বেচ্ছায়, সম্মতিতে বিলিয়ে দেন। সেই বিলিয়ে দেওয়াটাকে
আর যাই হোক ধর্ষণ বলা চলে না। কারণ, সেখানে যাই ঘটুক না কেন উভয়ের সম্মতিক্রমেই ঘটে থাকে।
এখন কেউ কেউ বলতে পরেন, তাহলে মামলা করে কেন? এ ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মত হল,কয়েকটা কারণে হতে পারে,
১ম: ছেলেটা মেয়েটাকে পরবর্তীতে বিবাহ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করায়।অথবা
২য়: ব্লাক মেইলের বিষয় জনিত।অথবা
৩য়: ছেলেটাকে মামলাজটে ফেলে তাকে কাবু করা।অথবা
৪র্থ: প্রতিশোধ স্পৃহা।অথবা
৫ম: স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরকীয়ায় লিপ্ত নারীটা অবৈধ সম্পর্কের কারণে গর্ভবতী,সেটা আবার সমাজের লোক জেনে গেছে।
নিজের আত্মরক্ষার্থেও হতে পারে।
দ্বীনের ধারা মতে সম্মতিতে হোক আর অসম্মতিতেই হোক বিবাহ পূর্ব যৌন সম্পর্ককে দ্বীনের আইনে যিনা-ব্যভিচার বলেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর শাস্তিও নির্ধারিত।
এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন, বিয়ের প্রলোভনে শারীরীক সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ বলবেন
নাকি অন্য কিছু?
আমি তো বলব,যে নারী বিবাহের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে নিজের অমূল্য ইজ্জত বিলিয়ে দেয়;
সে আর যাই হোক নেককার স্ত্রী কখনোই হতে পারে না। তার একটাই পরিচয় হতে পারে;
সেটা হল সে লোভী।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বুঝা ও চলার তৌফিক দান করেন।আমিন।
গবেষণার কলম থেকে-
আমি ঘুমন্ত কবি,নির্বাক ছবি
Kakoli Akther Mou