ক্ষতিতেই কল্যাণ
1 min read[কাকলী আক্তার মৌ]
“হে আল্লাহ তুমি যা করছো,আমার জীবনে যা ঘটছে সবই আমার কল্যাণে,
আমি তোমার দরবারে তাই আমার ক্ষতির জন্যও সদা তোমার শুকরিয়া আদায় করি”।
নিজের একটু খানি কষ্ট, লোকসান বা ক্ষতি দেখলেই যারা নিজের ভাগ্যকে, ভাগ্য বিধাতাকে দোষারুপ করতে থাকে আমার আজকের এই ঘটনাটা মূলত তাদের জন্য।
ঘটনাটা অনেক দিন আগেকার;
বিলাত প্রবাসী কেরামত চাচা নিজের মা বাবার সাথে দেখা করা ও সময় কাঁটানোর জন্য কোন এক শীতের দিনে বাংলাদেশে গমণ করেন, দুই মাস দেশে অতিবাহিত করার পর ছুটি শেষ হওয়ায় তিনি পুণরায় বিলাত ফিরার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
বিদায় কালে আত্মীয়-স্বজনরা তাকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে যায়। কেরামত চাচা সবাইকে বিদায় দিয়ে বিমানে উঠে বসেন। নির্দিষ্ট সময়ে বিমান উড্ডয়ন করে। তার ফ্লাইটটা ছিল ট্রানজিট ফ্লাইট,
দুবাই গিয়ে বিমান বদলাতে হবে।
যাই হোক- তিনি বিমানে করে দুবাই এয়ারপোর্ট পৌছালেন; সুন্দর মতই,কুশলে।
দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ঠিক ঘন্টা তিনেক পরেই তার ফ্লাইট,তাই তাকে সেই সময়টা দুবাই এয়ারপোর্টেই কাঁটাতে হবে। সেই সুযোগে তিনি এয়ারপোর্টের ভিতরের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে
সময় কাঁটাতে লাগলেন, কিছু জিনিষপত্রও ক্রয় করলেন। কখন যে সময় পার হয়ে গেল তিনি টেরই পেলেন না। এদিকে মাইকে এনাউন্স করে
ফ্লাইটের সকল যাত্রীকে দুই নম্বর গেটে গমণের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি এনাউন্স শুনে রওনা দিলেন। যখন তিনি বোর্ডিং পাস নিতে যাবেন তখনই খেয়াল করলেন তার পাসপোর্ট,বিমানের টিকেটসহ বোর্ডিং পাস রাখার হ্যান্ড ব্যাগটা হাতে নেই।
তখন তিনি চিন্তায় পড়ে পাগল হওয়ার মত অবস্থা,
এদিকে ফ্লাইট উড্ডয়নের সময় হয়ে এসেছে। মাইকে বার বার উনার নাম এনাউন্স করে বিমানে উঠার কথা বলছে, আর এদিকে আমাদের কেরামত চাচা পাগল হয়ে ব্যাগ খুঁজতে ব্যস্ত।
বিমান প্রায় ২০ মিনিট তার জন্য
অপেক্ষা করে অবশেষে তাকে না নিয়েই
হিথ্রুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেল🛫।
এদিকে তার করুণ কান্নায় এয়ারপোর্টর আকাশ বাতাস ভারী হওয়ার মত অবস্থা। নিজের ভাগ্য ও স্রষ্টাকে তিনি বার বার দোষারোপ করতে লাগলেন আর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন।
ঘন্টা তিনেক পর এয়ারপোর্টের নিরাপত্তারক্ষীরা
কেরামত চাচার হ্যান্ড ব্যাগ উদ্ধার করতে স্বক্ষম হল। তখন তিনি আর কি করবেন,
পরবর্তী ফ্লাইটের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন আর নিজের ভাগ্য ও ভাগ্য বিধাতাকে দোষতে লাগলেন।
এরই মধ্যে এয়ারপোর্টে খবর আসে যে,হিথ্রুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া কেরামত চাচার সেই বিমানটা যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে ক্র্যাশ করেছে, পাইলটসহ বিমানের সকল আরোহীই মারা গেছে।
এই খবরটা দেখে কেরামত চাচা আবার কাঁদতে লাগলেন। আবশ্য তার এখনকার সেই কান্নাটা কষ্টের নয়; মহান স্রষ্টার শুকরিয়া জানাতেই এখনকার সেই কান্না। পূর্বের সেই অশুভ ব্যবহারের জন্য মহান স্রষ্টার কাছে বার বার তওবা করে
ক্ষমা চাইতে লাগলেন।
আল্লাহর অশেষ কৃপায় সেই দিনের কেরামত চাচা আজো বেঁচে আছেন,আজও তিনি সেই দিনের ঘটনাটা ভুলতে পারেননি। তবে ঐ ঘটনার পরে তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন তিনি
কোন ক্ষতির সম্মুখীন হলে নিজেকে, নিজের ভাগ্যকে আর দোষারোপ করেন না। তার মুখ দিয়ে
তখন একটা কথাই বের হয়,আর তা হল,
“হে আল্লাহ তুমি যা করছো,
আমার জীবনে যা ঘটছে সবই আমার কল্যাণে,
আমি তোমার দরবারে ক্ষতির জন্যও
শুকরিয়া আদায় করি।”
এখান থেকে তোমরা কি শিক্ষা নিবে জানি না;
তবে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে।
তাই,আমি কেরামত চাচার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলাম,এখন থেকে আমার জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন কেরামত চাচার মত আমিও বলব “হে আল্লাহ তুমি যা করছো,
আমার জীবনে যা ঘটছে সবই আমার কল্যাণে,
আমি তোমার দরবারে
ক্ষতির জন্যও শুকরিয়া আদায় করি”।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
আমার আত্মজীবনী থেকে সংকলিত-
Kakoli Akther Mou