সিলেটে এএসআই আশেক এলাহির কথিত বোন বেপরোয়া; অতিষ্ঠ কাকুয়ারপারবাসী
1 min readমোঃ মুন্না মিয়া ;; সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেনের নেতৃত্বে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামের এক যুবককে নির্যাতনে মারা হয়েছে। এর প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে পুলিশ বাহিনী থেকে এসআই আকবরসহ ৪জনকে বরখাস্ত করা হয় এবং এএসআই আশেক এলাহিসহ আরও ৩জনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। মূলত নির্যাতনে নিহত হওয়া রায়হানকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন আশেক এলাহি। আশেক এলাহি এরআগেও ‘মক্কেল’ ধরে এনে আকবর’র কাছে দিতেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই আশেক এলাহিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
এই আশেক এলাহির এক কথিত বোন হচ্ছেন অজিফা বেগম। তিনি শহরতলীর এয়ারপোর্ট থানাধীন কাকুয়ারপার গ্রামে বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম মন্নান। মন্নানকে ‘মন্নান ড্রাইবার’ বলে চিনেন কাকুয়ারপার এলাকার লোকজন। অজিফা বেগম কাকুয়ারপার এলাকায় ‘আশেক এলাহির’ বোন হিসেবে পরিচিত। আশেক এলাহি সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় চাকরিকালে স্থানীয়দের সঙ্গে নিজের বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর এসআই আশেক এলাহির বোন হিসেবে স্থানীয়দের সঙ্গে দাপট দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। এসআই আশেক এলাহির বোনের পরিচয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে দিয়ে দেয় মামলা। এরমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশ্রব আলী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলে অভিযোগ মিথ্যা হওয়ায় মামলাটি রেকর্ডভুক্ত হয়নি। তারা আশেক এলাহির কথিত বোনের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা আশ্রব আলী বলেন, আমাদের হয়রানি করার লক্ষ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ করায় সেটি রেকর্ডভূক্ত হয়নি। তিনি এদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি আরও জানান, ওই মন্নান ড্রাইবারের বউ সুদখোর। সে এলাকার সাধারণ মানুষকে উচ্চ হারে সুদ দিয়ে বিপদে ফেলে। বিভিন্ন সময়ে কৌশলে বিভিন্ন কিছু হাতিয়ে নেয় সুদখোর অজিফা। ১/১১ এর সময় স্থানীয় আফিয়ার কাছে ৬০ হাজার টাকা সুদ দেয়। আফিয়া উচ্চ হারে সুদের টাকা পরিশোধ করবে না বলে জানালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমার কাছে নালিশ নিয়ে এলে আমি সুদের টাকার বিচার করতে পারবো না বলে জানাই। পরে স্থানীয় উস্তার আলী মটরকে জামিনদার বানালে সে সমাধান করতে পারেনি। পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে বিমানবাহিনীর কাছে নালিশ দেয় মন্নান ড্রাইভারের বউ। তাদের ডেকে গ্রামের বিচারি ব্যক্তিদের নিয়ে আসতে বলা হয়। তখন আফিয়া ও মন্নানের বউ আমাদের নিয়ে যায় বিমানবাহিনীর কার্যালয়ে। এসময় বিমানবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার সামনে জিবনে সুদ খাবে না বলে মুচলেকা দিয়ে আসলেও পরবর্তীতে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যায়। এদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ।
স্থানীয় কাকুয়ারপার পঞ্চেয়াত কমিটির সভাপতি প্রভাত চক্রবর্তী বলেন, মন্নান ড্রাইবারের পরিবারকে আমরা পঞ্চেয়াত কমিটি ডাকলে আমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। এলাকার মুরব্বিদের মূল্যায়ন করে না। এই পরিবার খুবই বেপরোয়া। এলাকার লোকজনের কাছে তারা এসআই আশেক এলাহির বোন হিসেবে পরিচিত হওয়ায় পুলিশি ভয়ে কেউ কথা বলে না। কেউ কথা বললে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তেমনি কথা বলায় আমাদের এলাকার প্রবীণ মুরব্বী বীরমুক্তিযোদ্ধা আশ্রব আলীকে থানায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছে।
কাকুয়ারপার পঞ্চেয়াত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নজমুল আলম বলেন, এই পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে একাধিকবার আমরা বিচার শালিস করি। একটি বিচারও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা করেছেন।
তাদের বাড়িতে রাত বিরাতে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত করে। কেন যাতায়াত করে এনিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। তাদের বর ছেলে অপু নিজেই মাদকাসক্ত। হয়তো মাদক সেবন ও ব্যবসা চলে এ বাসায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনকে জোর দাবি জানান নজমুল আলম।
তিনি আরও জানান, মন্নান ড্রাইবারের এক ছেলে পুলিশের কনস্টেবল। ছেলে কনস্টেবল হওয়ায় এবং এসআই আশেক এলাহির বোন পরিচিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত এলাকার সাধারণ মানুষেকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। কেউ কথা বললে দিয়ে দেয় মামলা।
কাকুয়ারপার পঞ্চায়েত কমিটির সহ কোষাধ্যক্ষ শিশির কুমার দেব বলেন অজিফা বেগমের কর্মকাণ্ড এলাকাবাসী সবাই অবগত।অজিফার ছেলে অপু সিলেট বাইপাস মহাসড়কের জায়গা দখল করে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছে।যে সড়কপথ দিয়ে প্রতিনিয়ত পাথার বোঝাই ট্রাক যাওয়া আসা করে,মূল সড়কের পাশে ব্যবসা করায় যেকোনো সময় ট্রাক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে দোকানের ভিতর ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পঞ্চায়েত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী খান বলেন অজিফা তার বাড়ির পশ্চিম পাশে রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন জায়গায় বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের সরঞ্জাম দেখা যায়।এলাকাবাসীর যুবসমাজকে মাদক থেকে রক্ষা করতে অনতিবিলম্বে প্রশাসনকে দাবি জানাচ্ছি এদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এগুলো নির্মূল করা।
ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ইমরান বলেন এয়ারপোর্ট থানায় থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেন এএস আই আশেক এলাহি, তিনি একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন কাকুয়ারপারে তার এক বোন থাকে। তার বিরুদ্ধে কোন শালিসি বিষয় থাকলে তার কথিত বোনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য!
সরেজমিন গিয়ে জানাযায় বিগত ৫ বছর আগে এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি আফরোজ আলীর বিরুদ্ধে জিডি এন্ট্রি করেছিল অজিফার পরিবার।বিগত ২ মাস আগে আফরোজ আলীর ২০ বছরের ভোগদখল করে আসা রেস্টুরেন্ট দখল করার জন্য আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অজিফা বেগম।মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকার সার্বিক বিষয় তদন্ত করে আফরোজ আলী রেস্টুরেন্ট এর মালিক হিসেবে ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবার প্রতিবেদক কে বলেন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণীত।