কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতনের এডহক কমিটি গঠন: স্থান পেলেন যারা
1 min readমীম সালমান :: দীর্ঘদিনের লালিত সপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণ করত: আজ ৩১ অক্টোবর (শনিবার) কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়নাধীন কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির জন্য এডহক কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে।অত্র বিদ্যানিকেতনের শুভাকাঙ্ক্ষী ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জনাব আবুল কালাম সাহেবের সভাপতিত্বে সকাল ১০ ঘটিকা হইতে বিদ্যানিকেত প্রাঙ্গণে শুরু হয় আজকের এই অভিভাবক সম্মেলন। অভিভাবক সম্মেলনে উপস্থিত হন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় শতাধিক অভিভাবক বৃন্দ। উপস্থিত অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ছয় মাসের জন্য এডহক কমিটির তিনজন অভিভাবক নির্বাচিত করা হয়।
নির্বাচিত অভিভাবকরা হলেন ১. সাবেক সেনা কর্মকর্তা জনাব আবুল কালাম সাহেব (পুর্ব কাড়াবাল্লাহ) ২. পুর্ব বড়চাতল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব ফখর উদ্দিন চৌধুরী সাহেব (পুর্ব বড়চাতল)৩. জনাব এবাদুর রহমান সাহেব (পশ্চিম কাড়াবাল্লাহ)।
সম্মেলন পরবর্তী সময় এডহক কমিটিতে মনোনীত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এতে তারা সাক্ষাৎকারে এডহক কমিটির মনোনীতরা যাহা বলেছিলেন তাহা নিম্নরূপ –
১. সাবেক সেনা কর্মকর্তা জনাব আবুল কালাম সাহেব তাহার সাক্ষাৎকারে বলেন, কাড়াবাল্লাহ বিদ্যাকিতনের এডহক কমিটিতে আমাকে মনোনীত করার জন্য সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তিনি বলেন কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতন হচ্ছে আমাদের গৌরব ও মানুষ গড়ার আঙ্গিনা। প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষাবোর্ড থেকে যদি আমাকে অভিভাবক নির্বাচিত করা হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে আমি সর্বোপরি বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি শেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
২. বিশিষ্ট সমাজসেবী জনাব ফখর উদ্দিন চৌধুরী সাহেব বলেন, এডহক কমিটিতে আমাকে মনোনীত করার জন্য সকল অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি অত্র এলাকার যুব সমাজকে। যারা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে আজকে একটি সুন্দর আয়োজন করেছেন। ফখর উদ্দিন চৌধুরী সাহেব আরো ও বলেন, শিক্ষা বোর্ড যদি আমাকে অভিভাবক নির্বাচিত করে, তাহলে প্রথমে চেষ্টা করবো এই প্রতিষ্ঠানের অতীতের ঘটে যাওয়া সমস্যা গুলো সমাধান। তারপর আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো কিভাবে এই প্রতিষ্ঠানকে আলোর মুখ দেখাতে পারি।
৩. জনাব এবাদুর রহমান সাহেব বলেন, কাড়াবাল্লাহ বিদ্যাকেতনকে আলোর মুখ দেখাতে আজকের এই সুন্দর একটি উদ্যোগে আমাকে এডহক কমিটিতে মনোনীত করার জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তিনি বলেন যদি আমাকে অভিভাবকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় তাহলে আমি এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতিকরণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
এডহক কমিটি প্রসঙ্গে প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার এনামুল হক সাহেবের অনূভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতির জন্য আমার শিক্ষক স্টাফ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা দেখা দিয়েছে তাহা সমাধানের অপেক্ষায় আমরা ও প্রহর গুনছিলাম। অবশেষে অত্র এলাকার যুব সমাজের সার্বিক তৎপরতায় আমরা আপনাদেরকে নিয়ে সুন্দর একটি আয়োজন করতে পেরেছি, সে জন্য সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে আমরা সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশী।
প্রধান শিক্ষকের সাথে একাত্মতা পোষণ করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ আরোও বক্তব্য রাখেন অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রবীন শিক্ষক মাষ্টার নিয়ামত আলী সাহেব, মাষ্টার কামরুল ইসলাম সাহেব, মাষ্টার জহিরুল ইসলাম সাহেব গং।
এডহক কমিটি প্রসঙ্গে এলাকার যুব সমাজের পক্ষ প্রতিবেদন জানান অত্র প্রতিষ্ঠানের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সেনা কর্মকর্তা জনাব আব্দুল বাছিত চৌধুরী। তিনি বলেন এই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আমাদের প্রেরণার বাতিঘর, এখান থেকে ফুটে উঠবে আলোর মশাল। তাই অতীতে প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে সকল সমস্যা সংগঠিত হয়েছিল তাতে আমরা মর্মাহত! তিনি বলেন, আমি এই এলাকার যুব সমাজের পক্ষ থেকে এবং কাড়াবাল্লাহ বড়চাতল প্রবাসী শাখার পক্ষ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও উপস্থিত জনতাকে এটাই আস্বস্ত করতে চাই যে, আজ থেকে শুরু করে আগামী দিনে এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে এলাকার যুব সমাজ থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে নেবে, তবুও এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আর কোন ধরণের ক্রাইম চলতে দেয়া হবেনা। তিনি প্রধান শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এই প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে যদি আপনার শিক্ষক স্টাফ কোন ধরণের বাধা কিংবা সমস্যার সম্মুখীন হয়, তাহলে সাথে সাথে আমাদেরকে অবগত করবেন, আমরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে সকল বাধাবিঘ্নতার কঠোর জবাব দেবো ইনশাআল্লাহ। আব্দুল বাছিত চৌধুরী সাহেবের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করে যুব সমাজের পক্ষ থেকে আরোও বক্তব্য রাখেন মোঃ রায়হান আহমদ, মোঃ নুরুল ইসলাম গং।
উল্লেখ্য : কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতন একটি সুপ্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান, ২০০২ সালে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠানটি আজ দেশবিদেশে পরিচিত। শুরুতেই বহুমাত্রিক সফলতার চাবিকাঠি হয়ে দাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্ররা আজ দেশবিদেশের আনাচে-কানাচেতে বিভিন্ন পেশায় লিপ্ত। অল্পদিনে আলোর মুখ দেখা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতন অন্যতম। এলাকার মানুষ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে বুক ভরা আশা আর চোখ ভরা সপ্ন দেখতে থাকে। এলাকার মানুষের জন্য গর্বেরধন হয়ে দাড়ায় কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতন। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে এখনো মানুষের সপ্ন দেখার শেষ নেই।
কিন্তু বিগত অর্ধযুগ ধরে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দেখা দেয় ধূম্রজাল! যা এখনো অব্যাহত। ২০১২ সালে সর্বশেষ কমিটি গঠন হওয়ার পর ১৪ সালের কমিটি গঠনে সমস্যা দেখা দিলে এখন পর্যন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি! গ্রুপিং আর অন্তর কোন্দলের কারণে অপেক্ষার প্রহর নিয়ে অতিক্রম হলো ৬ টি বছর! বিগত ৬ বছরেও আসে নাই স্থায়ী কোন সমাধান। ইতিপূর্বে যারাই সমাধানের পথ খোঁজেছিলো এবং কমিটি গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, তারাই আবার বিভিন্ন মামলামোকদ্দমায় জর্জরিত হতে হয়েছিলো! সবমিলিয়ে একটি শ্বাসরুদ্ধকর সময় অতিক্রম করছে বিদ্যালয়টি। যেখানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ২ বছর পরপর কমিটি গঠন হতো সেখানে আজ ৬ টি বছর ধরে অযোগ্য ও অদক্ষ্য একজন সভাপতি দ্বারা বিদ্যালয় তার সূনাম-সূখ্যাতি ও প্রতিষ্ঠানের ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করছে এলাকাবাসী এবং স্টুডেন্টদের অভিভাবকরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ নেতৃত্ব বাছাই করতে সোচ্চার হয়ে ওঠে এলাকার সর্বস্তরের যুব সমাজ, তারা প্রতিজ্ঞা করে বিদ্যালয়ের চলমান সমস্যা নিরসনের। একে একে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে তাদের পথচলা। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির জন্য দৌড়ঝাঁপ করে বিভিন্ন অফিস আদালতে। এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুব সমাজের সাথে এক জোট হয় স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরাও। অবশেষে যুব সমাজের দাবির মুখে গত ২৫/১০/২০ তারিখে এডহক কমিটির অনুমোদন প্রদান করে সিলেট জেলা শিক্ষাবোর্ড। লিখিত অনুমতি হাতে পৌছার পর আজই ৩১/১০/২০ ইংরেজি শনিবার বেলা ১০ টায় ডাকা হয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সম্মেলন। অবশেষে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ও তাদের সার্বিক মতামতের ভিত্তিতে কাড়াবাল্লাহ বিদ্যানিকেতনের সার্বিক সমস্যা সমাধান এবং প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়া উন্নতির লক্ষ্যে আগামী ছয় মাসের জন্য গঠন করা হলো এডহক কমিটি।