পোশাক বদলালে দৃষ্টি ভঙ্গিও বদলে যায়
1 min read[কাকলী আক্তার মৌ]
ঐ ভিক্ষুক মহিলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বিদায় নিয়ে আসার পর চলন্ত গাড়িতে বসে একটা চিন্তাই বার বার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো যে,
আমরা শিক্ষিত হয়ে কি হলাম?মানুষ নাকি অন্য কিছু? যেখানে পরিধেয় পোশাকটাই সব কিছুর পরিমাপক।
যেথায় মানবতা,মানবিকতা ও মূল্যবোধের কোন মূল্য নাই। সব কিছুই যেন আছে, তবে ছায়া রূপে;
দেখা যায় কিন্তু স্পর্শ করতে গেলেই ধরা যায় না; হারিয়ে যায়।
যেন পোশাকের আবরণে আমরা সবাই হারিয়ে গেছি কোন অজানায়।
যেখানে পোশাকই সব কিছু;মানুষের কোন মূল্যই নাই। চিন্তার সাগরে নিমগ্ন হলাম, পোশাকই যদি আভিজাত্যের পরিমাপক হয়, পোশাকই যদি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে,মনে অহমিকা ভরে;
তাহলে দরকার নাই এমন চাকচিক্যময়
আভিজাত্য পোশাকের।
ভাবতে ভাবতে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।শ্রীমঙ্গলের একটা হোটেলে বিশেষ দাওয়াত ছিল;
যার কারণে মৌলভীবাজার ভ্রমণে এসেছি।
মন খারাপ হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিলাম যে,ওখানে আর যাব না। মৌলভীবাজার শহরে ঢুকে একটা মাঝারি মানের কাপড়ের দোকানে ঢুকলাম।
স্বল্প দামের সাদাসিধে পোশাক ক্রয় করে
ট্রায়াল রোমে ঢুকে পরিধেয় পোশাক বদল করে ক্রয়কৃত সাদাসিধে পোশাক পরে নিলাম;
উদ্দেশ্য শ্রীমঙ্গল যাত্রা।
ড্রাইভার সাহেবকে আগেই বলে রাখলাম যে,
হোটেল থেকে বেশ দূরে গাড়ি দাড় করানোর জন্য।
শ্রীমঙ্গল পৌঁছে ড্রাইভারও তাই করলেন।
আমি গাড়ি থেকে নেমে আমার সহযাত্রীকে সাথে নিয়ে হোটেলের প্রধান ফটকে গেলাম।
সাথে গাড়ি নেই,পরিধেয় বস্ত্রে চাকচিক্যও নাই,
তাই আমরা ঢুকতে পারলাম না। ঢুকতে যে পারব না সেটা আমি জানি, আমিও চাইছিলাম যেন,আমাকে ঢুকতে না দেয়।
ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে ড্রাইভার সাহেবকে বললাম,আমি এখন লাউয়াছড়ায় যাব,
এখানে আর থাকতে ভাল লাগছে না। মন খারাপ তাই মোবাইল নম্বরটাও বন্ধ করে দিলাম।পরে আমি ও আমার সহযাত্রীসহ লাউয়াছড়া উপস্থিত হলাম।
টিকেট ক্রয় করে উদ্যানে ঢুকেও পরলাম।উদ্যানে ঢুকে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। যেন এতক্ষণ ইট পাথরের দেয়ালে চাঁপা পরে ছিলাম,
এক্ষণি মুক্ত হয়ে দম ফিরে পেলাম,নয়তো মরেই যেতাম।
বনে ঢুকে মনের আনন্দে শ্বাস নিলাম।
অনেকক্ষণ সময় বনের ভিতরে ঘুরাঘুরি করলাম,
মনটা ভাল হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরে শুনতে পেলাম আমার সহযাত্রীর ফোন বাজতেছে।
তখন সে ফোন রিসিভ করে কথা বলে আমার কাছে দিল। যাদের দাওয়াতে আমি এসেছিলাম তারা নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি কখন যাব জানতে চাইছে।
তখন আমি তাঁদেরকে বললাম, আমি আপনাদের ওখানে এসেছিলাম কিন্তু আফসোস ঢুকতে পারিনি,
অনেক্ষণ অপেক্ষা করে চলে এসেছি।
তাই দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন,আমি এখন কমলগঞ্জ আছি, আমি আর আসছি না, এই কথা বলে লাইনটা কেঁটে দিলাম।
আমি জানি না উনারা আমাকে ভাল ভেবেছিল নাকি খারাপ! জানতেও চাই না।
তবে একই দিনে দুটো নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল
“পোশাক বদলালে দৃষ্টি ভঙ্গিও বদলে যায়,তখন রাজা আর প্রজা একই কাতারে এসে দাড়ায়।”
লাউয়াছড়া থেকে বের হয়ে পুনরায় মৌলভীবাজার আসি এবং
পানসী রেস্টুরেন্টে খাবার খাই।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে পরবর্তীতে শুধু মাত্র ভিক্ষুক মহিলার সাথে দেখা করার জন্য ফিরে এসেছিলাম আউশকান্দিতে।কিন্তু আফসোস, উনাকে আর দেখতে পাইনি।
হয়ত খাবারের তাগিদে অন্য কোথাও চলে গেছেন।
অবশেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
ভ্রমণের এক পর্যায়ে পুটিজুরীতে বিরতি দেই।ওখানের একটা স্থানীয় হোটেলে হালকা নাস্তা করে ঢাকায় ফিরে যাই।
এবার দেশে এসেছিলাম শূন্য হাতে কিন্তু ফিরে যাচ্ছি অনেক অনেক অভিজ্ঞতা পূর্ণ ঝুলি নিয়ে।
যাবার কালে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে,আজকের পরে আর কোন দিন চাকচিক্যময় পোশাক পরিধান করবো না, সবসময় সাদাসিধে পোশাকই পরবো; তাতে লোকে যে যাই বলুক।
সচিত্র বাংলাদেশের বিচিত্র অনুভুতি থেকে,
সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলি,কারো পরিধেয় পোশাক দেখে ব্যক্তির মর্যাদা পরিমাপ করো না।
সাদাসিধে পোশাক পরিধানরত সেই ব্যক্তিটা তোমার চেয়েও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে।
Don’t judge the book by this cover।
Journey to Bangladesh (Part-2)
আমার আত্মজীবনী থেকে সংকলিত-
Kakoli Akther Mou