সিলেটের প্রবীণ শায়খুল হাদিস, মাহমুদ হোসাইনের দাফন সম্পন্ন - Shimanterahban24
March 29, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

সিলেটের প্রবীণ শায়খুল হাদিস, মাহমুদ হোসাইনের দাফন সম্পন্ন

1 min read

জাবের আহমেদ :: সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিডহর গ্রামের কৃতিসন্তান, প্রবীন আলিমে দ্বীন শায়খুল হাদিস, মাওলানা মাহমুদ হুসাইন হাতিডহরি (রহ:) গতকাল ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাত- ৮.৩৩ মিনিটের সময়, ৯২ বছর বয়সে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে আপন মাওলার সান্নিধ্য চলে যান।
আজ ১৮ অক্টোবর, রবিবার বিকাল- ৩ ঘটিকার সময়, স্থানীয় ইউনিয়ন অফিসবাজারস্থ “হাফিজ আহমদ মজুমদার বিদ্যানিকেতন” স্কুল মাঠে অসংখ্য ভক্ত ও ছাত্রদের উপস্থিতিতে হযরতের নামাজে জানাযাহ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজের ইমামতি করেন হযরতের বড় ছেলে, বাংলাদেশের অন্যতম মুহাদ্দিস, বহুগ্রন্থের প্রণেতা, জামিয়া মাদানীয়া “আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর ” বিয়ানীবাজার, সিলেট এর তিরমিযী শরীফের উস্তাদ। হযরত মাওলানা, সালেহ আহমদ সালিক (কালিগঞ্জী হুজুর) দা.বা.।
শায়খুল হাদিস, মাওলানা, মাহমুদ হুসাইন (রহ:) ১৯২৮ সালের ২৫ শে জুন।জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিডহর গ্রামে, এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শায়খুল হাদিস, মাহমুদ হুসাইন (র.) ছিলেন হাজারো নাইবে রাসুল গড়ার একজন আদর্শবান উস্তাদ। প্রচারবিমুখ, নিরহংকারী সত্যিকারের ওলী-আল্লাহ ছিলেন তিনি। জামেয়া ইসলামিয়া ফয়জে আম মুনশিবাজার মাদরাসার প্রায় অর্ধশতাব্দীর হাদিসের উস্তাদ ছিলেন এবং হযরত আব্দুল গফফার শায়খে মামরখানি রাহিমাহুল্লাহর দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত সহচর।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন হাতিডহর প্রাথমিক স্কুলে। তারপর জকিগঞ্জ ভরণ মাদরাসায়। ১৯৪২ সালে ভর্তি হন মুন্সিবাজার মাদরাসায়; সেখানে হিদায়াতুন নাহু পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৪৬ সালে ভর্তি হন বদরপুর আলিয়া মাদরাসায়; সেখানে উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন ঝিংগাবাড়ি আলিয়া কানাইঘাট মাদরাসায়।
সর্বশেষ ১৯৫৪ সালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন।
ইলমে হাদিসের নিবেদিতপ্রাণ এই মনীষী বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। ১৯৫৬ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ইছামতি কামিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত গঙ্গাজল হাসানিয়া আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ এক বছর ঝিংগাবাড়ী আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ ১৯৬৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৪৬ বছর জামেয়া ফয়জে আম মুনশিবাজার মাদরাসার শিক্ষক ও শায়খুল হাদিস ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিনি আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। সেই হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। যখন আলিয়া মাদরাসা সমূহ সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখনই তিনি সরকারি মাদরাসার লোভনীয় চাকরি ছেড়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষকতায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তাঁর চিন্তা-দর্শন ছিলো, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে একসময় আলিয়া মাদরাসা সমূহে ইলমে দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা থাকবে না। তিনি মনে করতেন যে, আগেকার যুগে সরকারি মাদরাসায় তাকওয়া-পরহেজগারি ছিল, তাই আমলদার আলিম হওয়ার লক্ষ্যে সেখানে পড়া ও পড়ানো দ্বীনের কাজ ছিল। বর্তমান সময়ে সরকারি মাদরাসা সমূহে সেই পরিবেশ নেই। সেজন্য তিনি হাসানিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদ থেকে ইস্তিফা দিয়ে মুনশিবাজার মাদরাসায় যোগদান করেন। তাকওয়া-পরহেজগারিতা তাঁর জীবনের মূল সম্পদ ছিলো। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন সুদৃঢ়।
তিনি প্রথমে শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রাহিমাহুল্লাহর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। পরে ভারতের ইসলামি শরিয়াহ আদালত “এমারতে শরিয়াহ”র প্রতিষ্ঠাতা মুজাহিদে মিল্লাত শায়খ আল্লামা আব্দুল জলিল বদরপুরি রাহিমাহুল্লাহর খলিফা এবং নদওয়াতুল আযকার বাংলাদেশের সাবেক আমির ছিলেন। তিনি ইজাজত প্রাপ্ত একজন শায়খ ছিলেন। কিন্তু প্রচলিত পীর-মুরিদি ধারার মতো নিজেকে জাহির করতেন না। তিনি সবসময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতেন।একই গ্রামের সন্তান হিসেবে নিজে দেখেছি, তাঁর চাল-চলন, আচার-ব্যবহার অত্যন্ত সাধাসিধে ছিলো। এককথায় বলা যায়, তিনি একজন প্রকৃত নায়েবে রাসূল ও ওলী-আল্লাহ ছিলেন।
তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে আল্লামা সহুল উসমানি রাহিমাহুল্লাহ এবং শায়খুল হাদিস ওয়াত তাফসির আল্লামা হরমুজ উল্লাহ শয়দা রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখযোগ্য।
তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, শায়খুল হাদিস মাওলানা আউলিয়া হোসাইন (রামধা মাদরাসা),
মাওলানা শফীকুর রহমান কিশোরগঞ্জি,পীরে কামিল মাওলানা শোয়াইবুর রহমান বালাউটি রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরি ফুলতলি, মাওলানা আবদুস সালাম রাহিমাহুল্লাহ, ইছামতি কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা মাশুক আহমদ, ভার্থখলা মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহিম, সুবহানিঘাট মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নজমুল ইসলাম শাপলাবাগি প্রমুখ।
সাংসারিক জীবনে তিনি একজন আদর্শ পিতা ছিলেন। তাঁর সন্তানদের তিনি ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে মাওলানা সালেহ আহমদ সালিক সাহেব; জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসার বর্তমান উসতাযুল হাদিস এবং বহু গ্রন্থপ্রণেতা। মাওলানা মনজুর আহমদ ছালিম সাহেব; মেওয়া মাদরাসার উসতাযুল হাদিস। মাওলানা সিদ্দিক আহমদ; একজন সফল ব্যবসায়ী (লাইব্রেরি)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.