March 20, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

মানু‌ষের আত্মার মমত্ব

1 min read

[কাকলী আক্তার মৌ]

ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ হয়ে মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে নবীগঞ্জের আউশকান্দি কিবরিয়া চত্তরে এসে ড্রাইভারকে বললাম,ড্রাইভার সাহেব,গাড়িটা এখানেই থামান,নাস্তাটা এখানেই সেড়ে নিব;ফুলকলিতে।

ড্রাইভার গাড়িটা থামিয়ে চারপাশটা একটু দেখার জন্য নিচে নামলো।এর কিছুক্ষণ পরেই দেখি একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা গাড়ির গ্লাসের মধ্যে উঁকিঝুকি দিচ্ছেন।তার মুখের মধ্যে ক্ষুধার্থের একটা ভাব সহজেই অনুমেয়।

এর মধ্যেই ড্রাইভার এসে রাগান্বিত কন্ঠে মহিলাকে তাড়িয়ে দিতে চাইল।বিশালদেহী একজন মানুষের রাগত কন্ঠ শুনে মহিলাটি কাচুমাচু করে চলে যাচ্ছিল।আমি তখন ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম মহিলাটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে।

মহিলার দিকে তাকাতেই ড্রাইভার আমাকে বলল,Madam,don’t trust these people, they are liars,they are trying to deceive people.আমি তখন ড্রাইভারকে বললাম,ওসব আমি বুঝবো। আপনি উনাকে ডাক দিন।

আমি গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিলাম,
দরজা খুলে আমি গাড়ি থেকে নেমে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,কি সমস্যা আপনার?
তখন মহিলা বলল, আফা আফা ১০ টা টাকা দিবেন?দুই দিন ধরে ভাল কিছু খাইতে পারিনি।

তখন আমি বললাম, ১০ টাকা দিয়ে কি ভাল খাবার হবে? এই কথাটা শুনে তিনি কি ভেবে যেন চলে যাচ্ছিলেন।তখন তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি যে,উনার দুটো পায়ের পাতায় কোন আঙ্গুল নেই,সম্ভবত কেঁটে ফেলা হয়েছে।উনার এই অবস্থা দেখে মনের মধ্যে খুব কষ্ট অনুভব হল।জিজ্ঞেস কলাম,আপনার কোন ছেলে মেয়ে নেই?

তখন তিনি বললেন,কোন ছেলে নাই একটা মেয়ে আছে।সে এতিমখানায় থাকে।স্বামী অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছে।শুনেছি সে একটা বিয়েও করেছে,সুখেই আছে।
আমি হাঁটা-চলা করতে পারি না,তাই কেউ আমাকে কাজও দেয় না, এজন্যই ভিক্ষা করি।

রাস্তার চলন্ত দামি গাড়ি থামতে দেখলেই খাবারের জন্য টাকা চাই।
তার উক্ত কথা শুনে বললাম,দামি গাড়িই কেন?তখন তিনি উত্তর দিলেন,“শুনেছি দামি গাড়ির মানুষদের অন্তরটাও নাকি দামি,কিন্তু আজ পর্যন্তও কোন দামি অন্তরের দেখা পাইনি”
তাঁর এই কথাটা শুনে গাড়িটার প্রতি খুব ঘৃণা সৃষ্টি হল,কারণ গাড়িটা অত্যন্ত দামি কিন্তু আমার মত মানুষের অন্তরটা দামি হয়ে উঠতে পারেনি আজও।তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম,সকালের নাস্তাটা উনার সাথেই করবো;ফুলকলিতে।

তখন ড্রাইভার আমাকে বলল,Madem,in this situation,do not allow the woman to enter the shop.তখন আমি ড্রাইভারকে বললাম, I said, we will not enter, we will bring food out.
ড্রাইভারকে দিয়ে খাবার আনিয়ে নিলাম,
মহিলাকে নিয়ে নিজ গাড়িতে বসে পরিতৃপ্তি সহকারে খাবার খেলাম।

বিদায় নিয়ে আসার সময় মহিলাকে বললাম, “পড়াশুনা করে,দামি গাড়িতে চড়ে অন্তরকে দামি করতে পারিনি,তবে মাঝে মাঝে দামি অন্তরের সাথে বসে খাবার খাওয়া ও কথা বলার সৌভাগ্য ঠিকই হয়;যেমনটা আজকে হল।”
মহিলাটি আমার এই কথার অর্থটা কি বুঝতে পেরেছিল?নাকি না? সেটা জানি না।
“ভাল থাকবেন,সুস্থ্য থাকবেন”
এই কথাটা বলে উনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

মাঝে মাঝে ভাবি,আমার যদি অনেক অনেক ক্ষমতা আর অর্থ থাকত তাহলে এই সকল অভুক্ত মানুষের
আহারের খরচের দায়িত্বটা নিজ হাতে তুলে নিতাম।

বিদায় নিয়ে আসার পর গাড়িতে বসে একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল, আমার মত মানুষ এত এত শিক্ষা অর্জন করে কি লাভ হলো? যদি একজন অভুক্ত মানুষের চিৎকার গাড়ির কাঁচ ছেদ করে আমার মত মানুষের আত্মার মমত্ব
ভেদ করতে না পারে?

সচিত্র বাংলাদেশে বিচিত্র অনুভুতি থেকে;
পাঠকদের উদ্দেশ্যে বিনীত আরজ,রাস্তা-ঘাটে চলার পথে এমন অনেক অভুক্ত মানুষের দেখা তুমি পাবে,
তাঁদের সাথে দেখা হলে,তাঁদেরকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না; চাহিবা মাত্র- স্বামর্থ অনুযায়ী তার হাতে কিছু খাদ্য তুলে দিও।
তোমার দেওয়া একটু খাদ্যে একটা মানুষের আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে; আর তুমি লাভ করবে প্রভুর আশীর্বাদ। যেটা তোমার পরকালের সঙ্গী হবে।

লেখক: সীমান্তের আহ্বানের নিয়মিত লেখক। বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় লেখকের সাথে ঘটে যাওয়া বাস্তব এই বিরল ঘটনা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.