৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জমিয়তের প্রত্যক্ষ বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল: আল্লামা কাসেমী
1 min read
নিজস্ব প্রতিবেদক :: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর ভূমিকা ছিল মজলুমের পক্ষে এবং পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের নিপীড়ন থেকে জাতিকে মুক্ত করার পক্ষে।
তিনি বলেন, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জমিয়ত নেতা মাওলানা মুফতী মাহমুদ সাহেবের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, তোমরা স্বাধীনতাকামী জনগণের পক্ষে কাজ করো। উক্ত নির্দেশনার আলোকে তৎকালীন জমিয়তের দায়ীত্বশীলেরা দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে জমিয়তের অবদান ও ভূমিকাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, ইতিহাসের বাস্তব সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধের গোড়ায় ভূমিকা রেখেছেন ইসলামী চেতনাধারী মানুষেরা এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। কারণ, ন্যায়, ইনসাফ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার নীতিবোধের জায়গা থেকে গোটা উপমহাদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছিলো জমিয়ত। ভারতের জমিয়ত তো বটেই, পাকিস্তানের জমিয়তও বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য দাবি ও স্বাধীকারের পক্ষে ছিলো সোচ্চার। তিনদেশে একই সাথে দলটি শক্ত ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করেছিলো। বাংলাদেশের আর কোনো দল এই অবদান দাবি করতে পারবে না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো দলই উপমহাদেশব্যাপী বিস্তৃত ছিলো না। এই সত্যকে প্রমাণ করেছেন নিষ্ঠাবান ঐতিহাসিক ও গবেষক জনাব মুসা আল হাফিজ।.
গতকাল (১৩ অক্টোবর) মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত “মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত: ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দায়” শীর্ষক আলোচনা সভায় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় লেখক মুসা আল হাফিজের “মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত: জ্যোতির্ময় অধ্যায়” বইয়ের উপর বক্তাগণ নিজের অভিমত তুলে ধরে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দলগতভাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভূমিকা গৌরবময়। বিদগ্ধ গবেষক জনাব মুসা আল হাফিজ নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগ থেকেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নিপীড়িত বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করছিলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে শোষণবিরোধী লড়াইয়ে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছিলো। এমনকি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার দুই দিন আগেই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দলীয় প্রেসরিলিজের মাধ্যমে সারা দেশের নেতা-কর্মীদেরকে স্বাধীনতার জন্য ময়দানে নামার নির্দেশনা দেয়। এ সত্যকে এতোদিন গুম করে রাখা হয়েছে।
বক্তারা দাবি পেশ করে বলেন, এ সত্যকে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেয়া হোক। পাশাপাশি এই সত্যও জাতির সামনে জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে যে, ভারত- পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রেখেছে। মুসা আল হাফিজের বইয়ে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে এটাও প্রমাণ করা হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করার জন্য জমিয়তুল আনসার নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সভাপতিত্বে এবং মুফতী বশীরুল হাসান খাদিমানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া মান্নান, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহা উদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা তাফাজ্জল হক আজিজ, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, লেখক মুসা আল হাফিজ, খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ও মাওলানা রুহুল আমীন সাদী।
উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরি, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা গোলাম মাওলা, যুব জমিয়ত নেতা মুফতী জাবের কাসেমী, মাওলানা ইসহাক কামাল, ছাত্র জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইখলাসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হুজায়ফা ওমর প্রমুুখ।