নারীর নিরাপত্তা কোথায়?
1 min readলেখক: এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ট মাখলুক।মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত।আল্লাহ তায়ালা মানুষ কে সুস্থ বৃহত্ত জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহ প্রদত্ত ইলম দিয়ে মানুষ ভালো মন্দ বিবেচনা করবে।গ্রহন করবে ভালো, বর্জন করবে মন্দ।এটাই মহান রবের বিধান।সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষ যেমন শ্রেষ্ট। সকল ধর্মের মাঝে ইসলাম তেমনি শ্রেষ্ট ধর্ম।ইসলমের সকল বিষয় মানুষের জন্য কল্যাণকর।মানুষের বিবেক বুদ্ধি সীমিত হওয়ার দরুণ অনেক সময় তা বুঝে আসে না।আবার অনেক সময় বুঝে আসলেও ইসলমের প্রতি বিদ্বেষ মনোভবের কারণে তার বিরধীতা করে। সত্য মিথ্যা বিবেচনা না করেই সঠিক হুকুমকে অমান্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।ঠিক এমনি একটা বিষয় হলো পর্দা করা।আর এটা মহান রবের ফরজ হুকুম।
কেউ কেউ মনে করেন হিজাব বা পর্দা হচ্ছে নিপীড়নের একটি প্রতিক।আরও মনে করেন, যে সকল নারী পর্দা মেনে চলেন তারা মূলত তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত নয়।আর সুস্থ সভ্যতা বলে-ইসলাম পর্দার বিধানের মাধ্যমে নারীকে আবদ্ধ করে নি বরং নারীর মান ইজ্জত ও জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুদৃঢ় করেছে। ধর্ষণ থেকে মুক্তি দিয়েছে। সুতরাং এ ধরনের বাজে ও ভিত্তিহীন মন্তব্য তারাই করতে পারে যাদের জ্ঞানের পরিসীমা সংক্ষিপ্ত। ধর্ম নিরপেক্ষ ও ধর্মবিরধী চিন্তাধারা তাদের মগজকে নিকোষ করে দিয়েছে।অতএব তারা ইসলমের সর্বজনীনতা ও সর্বকালীনতা বুঝতে একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়ে।
পৃথিবীর সকল ধর্মের ধর্ম গ্রন্থেই নরীর নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। আর তা হলো, আবৃত রাখা বা ঢেকে রাখা।একমাত্র পর্দার মাধ্যমেই একজন নারী তার জীনকে সরক্ষণ করে রাখতে পারে। ইসলামী সৌন্দর্যে তার জীবনকে সাজাতে পারে। সুসজ্জিত হয়ে ওঠে তার পূর্ণাঙ্গ জীবন।পরিত্তান পায় সমস্ত কুদৃষ্টির সবোল থেকে।ধর্ষণকারীর ধর্ষণ থেকে। এটাই নরীর নিরাপত্তা। একজন পর্দাশীল নারী দেশ,জাতি,সমাজের কাছে গৌরবময় ও প্রশংসনীয়।
যুগে যুগে নরীদের নিরাপত্তার জন্য নানান ধরণের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে,হচ্ছে এবং হবে। নারীর নিরাপত্তার জন্য গ্রীক সভ্যতার সময় নারীকে যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য ধাতুর এক ধরণের পোষাক পরিধান করিয়ে লক করে দেওয়া হতো। অন্যদিকে ভারতের হারিয়ানাতে যৌন নিরাপত্তার জন্য নারীদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবার এখন বর্তমান আধুনিক যুগে নারীর নিরাপত্তার জন্য মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ করা হচ্ছে কিন্তু এসব করেও কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীর নিরাপত্তা? আফসুস! আফসুস! যত দিন যাচ্ছে নারীর নিরাপত্তা আধুনিকার নামে বিলিন হচ্ছে। প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে, উন্নয়নের জোয়ার বয়ছে। সবকাছুই পরিবর্তন। কিন্তু নারীর উপর নির্যাতন ও নিপীড়নের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
সম্প্রতি নারীনির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে, বিশেষত উঠতি বয়েসী মেয়েরা চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এটা আমাদের সমাজের চরম ব্যর্থতা বলেই বা কাকে দোষারোপ করবো , নিজেরাই তো সমাজের মোড়ল মাতব্বর । এ অবস্থায় মা-বোনদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন প্রয়োজন অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, বিপর্যয়ের সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বেড়ে চলেছে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতা।আর এভাবেই পার হচ্ছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কিংবা আরো যুগের যুগ ।নির্যাতক আর শৈরাচারিরা বিচাকের আড়ালে নির্যাতন করেই চলছে অপরদিকে নির্যাতিত ও নিপীড়িতরা মিছিল করেই যাচ্ছে নিরাপত্তার ব্যানারে। কিইবা উপকার হচ্ছে? এভাবে নিরাপত্তা চাই! স্বাধীনতা চাই! স্লোগান দিয়ে।ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় চরম সত্য কথা এটাই যে, এভাবে স্লোগাণ দিয়ে নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশা করা কোনদিনও সম্ভব নয়।কারণ নিরাপত্তার অপর নাম আবৃত রাখা।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন – হে নারীগণ! তোমরা ঘরে অবস্থান করবে, পূর্বেকার জাহেলিয়াতের যামানার নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শনী করে বেড়াবে না।
(সুরা আহযাব ; ৩৩ আয়াত)
হে আমার প্রিয় বোন! তোমাকেই বলছি। আর দেরি নয়। তেমাকেই জাগতে হবে। তুমিই হবে সবার সেরা রমণী যদি তোমার নিজের কথা না ভুলে যাও। একটা কথা ভুলে যেওয় না, যেখানে হারাম অশ্লীল সেখানে আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা আশা করা যায় না । মহান আল্লাহ বলেছেন যার যার কর্মের ফলাফল তাকেই ভোগ করতে হবে। তাই একটু নিজেকে ভাবুন! কারো পিছু পিছু নয়। যারা তোমাকে নিয়ে করছে খেলা, মজায় মজায় কাটায় বেলা, তাদের পথ, মত ছেড়ে হিজাব পরিধান করো পর্দা করো,কুরআন ও হাদিছ দিয়ে জীবন গড়ো।
পর্দা নারীদের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।এই সম্পর্কে রাসূল সাঃ এর হাদীছ -আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।(তাবরানী)
বিষয়টা খুবই উপলদ্ধিত,বাহির থেকে হিজাব বা পর্দা দেখে এর ভিতরের অবস্থা অনুধাবন করা আদৌ সম্ভব নয়।বহির থেকে পর্দা ও পর্দাশীলদের পর্যাবেক্ষণ করা আর পর্দার মধ্যে জীবন যাপন কার দুটি খুবই ভিন্ন বিষয়। তা হলো, ধরণা করে বুঝা আর বাস্তবতা দেখে মেনে নেওয়া।
বাহিরে থেকে দেখলে মনে হবে ইসলাম একটি জেলখানা সরুপ। এখানে কোন স্বাধীনতা নেয়, অথচ আমরা যারা ইসলামের মধ্যে অবস্থান করছি,আমরা শান্তি , আনন্দ ও স্বাধীনতা অনুভব করছি। ঠিক তেমনি বিষয় -পর্দাশীল কোন নারীকে দেখলে মনে হয়, নারীটি নির্যাতিত ও অত্যাচারিত।তার বুঝি খুবই কষ্ট হচ্ছে। আসলে এটি একটি ভুল ধারণা। অভ্যস্ত হয়ে গেলে এতে কোন অসুবিধা বোধ মনে হয় না।এটাই তখন মনের আনন্দ হয়ে ওঠে। একজন পর্দাশীল নারীর মধ্যে ফুটে ওঠে স্বর্গীয় সৌন্দর্য, সতীত্বেরর আভা।আত্ননির্ভরতা ও আত্নমর্যাদায় উৎভাসিত হয় চেহারা। অত্যাচার বা নির্যাতনের সামান্যতম কোন চিহৃ না থাকে চেহারায়।এটাই চরম সত্য ও জলন্ত প্রমাণ।অতএব নারীর নিরাপত্তা ও শান্তি একমাত্র পর্দার হুকুম মেনে চলার মধ্যেই।
হে আমার বোন! আবারো বলছি, নিজেকে বোঝার জন্য।তুমি অনেক দামী। তোমার মর্যাদা সবার কাছে অমুল্য। ভেবে দেখ- যেখানে সেখানে সস্তা নুড়ি পাথর অসংখ্য পড়ে থাকে। সেগুলো দেখে কেউ মুল্যয়ন করেনা। খুবই তুচ্ছ ভেবে দলিয়ে পায়ের নিচে দেয়,এটাই স্ব্ভাবিক। কিন্তু মুল্যবান পাথর, হিরা, মনিমুক্তা যেখানে সেখানে পড়ে থাকেনা। তাকে অত্যন্ত যত্নের সাথে তালাবদ্ধ করে লকারে রাখা হয়।কেননা সে খুবই মুল্যবান।ঠিক তেমনি তোমাকে মুল্যবান মানুষের মত মানুষ হতে হলে নিজেকে তালাবদ্ধ করে রাখতে হবে। ঢেকে রাখতে হবে নিজেকে সংরক্ষণ করতে।
সর্বোপরি, পর্দা একজন নারীর নিরাপত্তার সর্বউত্তম মাধ্যম। সুতরাং একজন মুসলীম নারীর শোভনীয় কর্ম হচ্ছে সহীহ পর্দা করা।তাই আল্লাহর আহবানে ফিরে আসুন সঠিক পথে। আল্লাহর ভয়ে পর্দা করুন।নিজেকে হেফাজত করুন এবং অপরকেও হেফাতের সহায়তা করুন।দেশকে পশ্চাত্য সভ্যতা থেকে ফিরিয়ে আনুন।
আল্লাহ সকলকে কবুল করুন। (আমিন)