ইসলাম ছাড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়: আল্লামা বাবুনগরী
1 min read
হাটহাজারী প্রতিনিধি :: শাইখুল হাদিস ও শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন,বর্তমান সময়ে আমাদের জান, মাল ও ইজ্জত-সম্মানের সামান্যও নিরাপত্তা নেই। জুলুমবাজদের ছত্রছায়ায় বিচারহীনতার যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তাতে প্রতিদিনই দেশজুড়ে খুন, গুম ও ধর্ষণের মতো ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
গতকাল ১১ অক্টোবর রবিবার দারুল উলুম হাটহাজারীর দাওরায়ে হাদীস মিলনায়তনে দুই সহস্রাধিক ছাত্রকে বুখারী শরীফের পাঠদানকালে ৬৭ নং হাদীসের ব্যখ্যায় এসব কথা বলেছেন তিনি। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী পাঠের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি অনুলিখন করেছে দাওরায়ে হাদীসের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আবু জেবায়ের।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন,ক’দিন আগে নোয়াখালীতে একজন অসহায় নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখনো হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যাবে। অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। মানুষ অপরাধ করতে সাহস পাবে। এভাবে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনটি জিনিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যথা– ১. জনগণের জীবনের নিরাপত্তা। ২. সম্পদের নিরাপত্তা। ৩. সম্মানের নিরাপত্তা।
এই তিনটি জিনিসই আমাদের দেশে ভূলণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের বিকল্প নেই। ১৪০০ বছর পূর্বেই ইসলাম এ বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধান দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সবচেয়ে অশান্ত, অন্ধকার ও বর্বর সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
নবীজী সা. এর আবির্ভাবের পূর্বে বিশ্ব ছিল নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা ও অমানবিকতার নিকষ কালো আঁধারে ঘেরা। হত্যা, লড়াই ও ধ্বংশযজ্ঞ পরিচালনা তাদের নিত্যকার ঘটনা ছিল। অসহায় মানুষদের ন্যায়, ইনসাফ ও মুক্তির শেষ আশাটুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল।
এমন দুঃসময়ে রাসুল (সা.) আবির্ভূত হয়ে বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিলেন— ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। (বুখারী শরীফ: ৬৭)
আল্লাহ তাআলা অপরাধ প্রতিরোধে পবিত্র কুরআনে বিধান নাজিল করে দিলেন— “আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।” (সূরা মায়িদাহ : ৪৫)
এরপর ইতিহাস স্বাক্ষী– নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলামী শাসন বাস্তবায়নের ফলে সেই অন্ধকার দুঃসময় বদলে গিয়ে এমন সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে এসেছিল যে, পৃথিবীতে এমন আলোকিত সময় আর কখনোই ছিল না। এখনও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী শাসনের বিকল্প নেই। ইসলাম ছাড়া কোনো মতবাদ ও পদ্ধতিই পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি এবং হবেও না।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তির বিপক্ষে নই। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ইসলামের দেখানো পথেই ফিরে আসতে হবে। ইসলামই একমাত্র শান্তির পথ।