মিডিয়ার অপব্যবহার; বাতিলের দেখানো পথেই হাঁটছি আমরা
1 min read
আব্দুল্লাহ সালমান
মহান রবের অশেষ কৃপায় আমরা সঠিক পথের দিশা পেয়েছি। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ ও সর্বোপরি মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছি। এজন্যে মালিকের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদম আ. থেকে নিয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত প্রতিটি যুগেই সত্যের পথে মানুষকে আহ্বান করার জন্যে দ্বীন ও শরিয়তের বিধি বিধান দিয়ে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। এবং তাদেরকে দান করেছেন সমসাময়িক জ্ঞানের ভাণ্ডার। যেমন মুসা আ. এর সময়ে জাদুবিদ্যার প্রভাব ছিল বেশি। আল্লাহ তাঁকে লাঠির মধ্যে এমন জাদু (মু’জিযা) দিয়ে দিয়েছিলেন, যার সামনে তখনকার সকল জাদুকরদের জাদু হার মেনে ছিল। ঈসা আ. এর যুগে চিকিৎসাবিদ্যার প্রভাব ছিল। আল্লাহ তাঁকে এমন শক্তি দিয়েছিলেন, তিনি হাত বুলিয়ে দিলেই কঠিন কঠিন রুগাক্রান্ত মানুষ ও সুস্থ হয়ে যেত। আমাদের নবী মুহাম্মদ স. এর সময় সাহিত্যের প্রভাব ছিল। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ব ইতিহাসের সেরা সাহিত্যগ্রন্থ কুরআন দান করেছেন।
নবী-রাসুল প্রেরণ এবং তাদের সমসাময়িক জ্ঞান দানই ইশারা দেয় আমাদের জন্যেও ইলমে দ্বীন শিক্ষার পাশাপাশি সমসাময়িক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
বর্তমান যুগে মিডিয়ার প্রভাব অনেক। মিডিয়ার কল্যাণে অনেক কঠিন কাজও হয়ে গেছে সহজতর। বাতিলগোষ্ঠী ইসলামের বিরুদ্ধে মিডিয়াকে রণতরী হিশেবে গড়ে তুলেছে। আমরা মিডিয়াকে একটা সময় বয়কট করায় পিছিয়ে আছি অনেকটা। এতে আমাদের তেমন কোনো অবস্থান তৈরি হয় নি এখনও। সময়ের তাগিদে দূরদর্শী মুরব্বি হযরাতগণ মিডিয়ায় কাজ করার জন্যে আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন এবং সাহস যুগাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে আমাদের সরে তাজ আল্লামা বাবুনগরী হুজুরের একটি ভিডিও সাক্ষাতকার প্রকাশ হয় হাটহাজারী মাদরাসার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সেখানেও তিনি বলেন, “মিডিয়া এখন ওদের (বাতিলের) হাতে। মিডিয়াকে আমাদের হাতে আনতে হবে।”
তাঁদের নির্দেশে আমাদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষ মিডিয়ায় পা রেখেছেন। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে দাঁড় করিয়েছেন। বর্তমানে মিডিয়া জগতে আমাদের মোটামুটি একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে বলা যেতে পারে। কিন্তু দুঃখ নিয়ে বলতে হয়, আমাদের মিডিয়াকর্মীরাও বাতিলের দেখানো পথেই হাঁটছেন। শরিয়তবিরোধী কার্যকলাপে মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন। ইসলাম যে জিনিসের অনুমতি দেয় না সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন, প্রচার করছেন। বেশি কিছু না, ছোট একটি উদাহরণ দিচ্ছি-
আমরা প্রায়ই দেখি আমাদের কিছু পত্রিকায় নিউজ, প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন লেখার সঙ্গে মহিলাদের, সুন্দরী মেয়েদের ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি আপলোড করা হচ্ছে। হারাম খেলাধুলা, হারাম বিনোদনেরও নিউজ প্রচার করা হচ্ছে।
ওলামায়ে কেরাম জায়েয কাজের ছায়াছবিকে জায়েজ বলেছেন, হারাম কাজের ছায়াছবি হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। বেগানা মহিলাকে দেখা হারাম হলে ( বিনা প্রয়োজনে) তার ছবি এবং ছায়াছবি দেখাও হারাম। ইসলামের দৃষ্টিতে যে খেলাধুলা এবং বিনোদন হারাম তার প্রচার করাও হারাম। তাহলে আমরা হারামে লিপ্ত হয়ে কীভাবে ইসলামের কাজ করছি? শরিয়ত তো আমাদের এসবের অনুমতি দেয় নি।
একজন সংবাদকর্মীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি উত্তর দিয়েছেন এটা সংবাদপত্রের নিয়মের ভেতরে পড়ে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এ নিয়ম কে তৈরি করেছে? আমরা কার নিয়ম মেনে চলছি? নিশ্চয় উত্তরে ফোটে উঠবে কোনো বাতিল গোষ্ঠীর নাম।
আমরা তো শয়তানের পথ অবলম্বন করে তাকে খুশি করে ফেলছি।
অথচ আল্লাহ বলছেন,
یاایهاالذین امنوا ادخلوا فی السلم كافة- ولاتتبعوا خطوت الشیطان- انه انه لكم عدو مبین-
“হে ইমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানকে অনুসরণ করো না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” (সুরা বাকারা, আয়াত ২০৮)
আমাদের কাজ কি আল্লাহর ঘোষণার বিরুদ্ধে হচ্ছে না?
অনেকে বলে থাকেন আগে আমরা জনপ্রিয় হই, তাহলে আমরা অনেক বেশি কাজ করতে পারব।
এসব কথা জ্ঞানের অভাবের ফলেই হয়ে থাকে। আমরা নবী স. এর জীবনীতে পাই, তিনি যখন মক্কায় ইসলাম প্রচার করা শুরু করেন। তখন কাফেররা তাঁকে বলল, তুমি কি চাও? যদি তুমি নেতৃত্ব চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানাব। তুমি যদি আরবের কোনো সুন্দরী মহিলাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমরা এনে দেব। তবুও এই কার্যকলাপ থেকে বিরত থাক।
নবীজি স. কি করলেন? তিনি তাদের জবাবে বললেন, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর দ্বীন প্রচার করা। আমি অন্য কিছুই চাই না।
তিনি আমাদের মতো চিন্তা করলে বলতেন, আগে নেতা হয়ে যাই। তখনতো সবকিছু আমার হাতে চলে আসবে, আমি যা চাইব তাই করতে পারব। তখন নাহয় দ্বীন প্রচার করব।
কিন্তু তিনি এমনটা করেন নি। এ থেকে আমরা কী বোঝলাম? হারাম পন্থায় জনপ্রিয়তা অর্জন করার কোনো অধিকার শরিয়ত আমাদের দেয় নি।
একদিকে হারামে লিপ্ত, অন্যদিকে ইসলামের কাজ করছি বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। এর জন্যে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।
রবের ঘোষণা,
لا تحسبن الذین یفرحون بما اتو و یحبون ان یحمدوا بمالم یفعلوا فلا تحسبنهم بمفازۃ من العذاب ولهم عذاب الیم-
” তুমি মনে করো না যারা নিজের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের উপর প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বরং তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ংকর আযাব।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৮)
যদি ইসলামের কাজ করাই মাকসুদ হয়ে থাকে তাহলে আজই তাওবাহ করে এসব থেকে ফিরে আসতে হবে। শরিয়ত মোতাবেক মিডিয়ায় কাজ করতে হবে। আল্লাহর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে জনপ্রিয়তা ক্ষণিকের ব্যাপারমাত্র।
আল্লাহ বলেন,
وما امرنا الا واحدۃ كلمح البصر-
“আমার আদেশ তো এক কথায় চোখের পলকেই কার্যকর হয়।” (সুরা কামার, আয়াত ৫০)
আল্লাহর এ কথার উপর আমাদের বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে। রবের আদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে।
হারাম পন্থা অবলম্বন করে আমরা দুনিয়া পেয়ে যেতে পারি কিন্তু আখেরাত পাওয়া সম্ভব না। আখেরাতে আমাদের কষ্ট আর বেদনাময় সময় পার করতে হবে।
আল্লাহ, আমাদের সবাইকে সঠিক বোঝ দান করুন। হারাম থেকে দূরে রাখুন। শরিয়ত মোতাবেক কাজ করে আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: সম্পাদক, সীমান্তের আহ্বান
নির্বাহী সম্পাদক: জনকল্যাণ২৪.কম