সরকারের মহৎ উদ্যোগ বনাম অসচেতন জনগণ
1 min read[সুলতান আহমদ]
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ে কিছু লিখার জন্য মন অনেকদিন ধরে কাছুমাছু করছে। আবার অনেকেই অনুরোধও করছে মেসেঞ্জারে যেন এবিষয়ে কিছু লিখি। তাই লিখতে বসলাম।
বাংলাদেশী মানে মূলত বাঙালি। বাঙালি মানেই অধিকাংশ হুজুগী, কারণ অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেশি। আবার বাঙালিদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের অধিকাংশই আবার জ্ঞানপাপী তথা কুশিক্ষিত। আবার যারা সুশিক্ষিত, তারা কিন্তু অধিকাংশের চাপে পড়ে নির্বাক। এই বাঙালির উদ্দেশ্যে কী লিখা যায়। লিখার কি কোনো সার্থকতা থাকবে? তবুও অনেকটা মনের তথা বিবেকের কাছে বাধ্য হয়ে লিখতে বাধ্য হলাম। অবশ্য সব কথাই যে লিখতে পারব, তাও না।
অনেকে এরপরেও আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে। এটা স্বাভাবিক। আমি পরমতকে শ্রদ্ধা করতে ভালবাসি। কিন্তু জ্ঞানপাপীদের মতকে শ্রদ্ধা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। যারা চোখ থেকেও অন্ধ সেজে বসে আছে।
এই করোনা ভাইরাসটি যদি চীনে উৎপত্তি না হয়ে বাংলাদেশে প্রথম উৎপত্তি হতো, তাহলে জানি না, সরকার বিরোধীরা কত বড় দামী একটা মহামূল্যবান ঔষধ পেতো? অথচ এটি চীন থেকে বিস্তার লাভ করে বিশ্বের মহা-মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে সম্পূর্ণ অসহায় করে ফেলে পর্যুদস্তু করে ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রে ভয়ঙ্কর অশুভ হাত বিস্তার করে বাংলাদেশেও গত আট মার্চ এর প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া গেল। আজ সতেরই এপ্রিল-এ আটারশত আটত্রিশ জন করোনা রোগী হিসেবে সরকারিভাবে শনাক্তের ঘোষণা দিল। যার মধ্যে পঁচাত্তর জন স্রষ্টার কাছে চিরদিনের জন্য ফিরে গেল। আটান্ন কি ঊনষাট জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেল। অবশিষ্টরা এখনও সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা পাচ্ছে। জানি ধীরে ধীরে প্রতিদিন এই সংখ্যাগুলো জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে।
এর শেষ কোথায় তা আসলে পৃথিবীর কেউ জানে না।
সরকারিভাবে আটই মার্চ শনাক্ত হওয়ার পর দেশের অল্পকিছু মানুষ সরকারকে দেশ-লকডাউন করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিতে শুরু করল। কিন্তু সরকার ষোলই মার্চ প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করে দিল। ছাব্বিশ-এ মার্চ সরকারি অফিস, আদালত, কলকারখানা বলতে গেলে রাষ্ট্রীয় নব্বই শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিল।
এর পরে সরকারের আসল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। রাষ্ট্রীয় গুদামে রাষ্ট্রের জনগণের জন্য সংরক্ষিত রাখা রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রশাসন, আইন, প্রশাসনসহ বিভিন্নহাত দিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিতরণ করতে শুরু করল। যেখানে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় কোনো ছেদ ছিল না। কিন্তু আমরা তো নিজের ভালো অতি-বেশি বোঝার বাঙালি! কেউ শুরু করলো চুরি। আবার কেউ সমালোচনা শুরু করলো কেন রাষ্ট্র এভাবে লক-ডাউন হয়ে থাকবে? কতদিন থাকবে এই লকডাউন?
হায় জনতা! কত…… দিন…… বাঙালি হয়ে থাকবে, মানুষ হবে না?
এভাবে সরকার দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য লকডাউন করেছে, তাতে সরকারের বিরাট ক্ষতি ছাড়া তো লাভের অনু পরিমাণও কিছু নেই। শুধু দেশের মানুষকে এই মহামারীর হাত রক্ষার চেষ্টা ছাড়া।
মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে কিছু বিধি-নিষেধ প্রশ্নবিদ্ধ আমার কাছেও। যেসব এলাকায় এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, সেখানে এত কঠোর কড়াকড়ির দরকার আছে কিনা, বিশেষ করে শুক্রবারের জুমার নামাজের বিষয়ে। বাংলাদেশের মানুষ এখন আগের চেয়েও অনেক বেশি প্রকৃত ধার্মিক। ধর্মান্ধ মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় এখন অনেক কম বলে মনে করি। ভাইরাসের অস্তিত্বহীন উপজেলাগুলোতে এই কড়াকড়ি ধার্মিক মানুষের মনে ক্ষুব্ধতার সৃষ্টি করছে। অবশ্য ‘সরকারের সব ধরণের উদ্যোগ-ই মহৎ উদ্দেশ্যে’ এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ তো নেই-ই, বরং পুরোপুরি আস্থা আছে।
জনগণকে মহামারী ভাইরাস থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের এত প্রচেষ্টা। কিন্তু জনগণকে কি বুঝে? অথবা বুঝতে চায়? কোনোটাই না। বরং জনগণ আছে চোর-পুলিশ খেলায়। রাষ্ট্রের সম্পদ সরকার জনগণের মাঝে সাধ্যমত বিলিয়ে দিয়ে ফতুর হওয়ার পথে, তবুও জনগণ কি এর মূল্যায়ন করতে জানে? অথবা এতটুকু সদিচ্ছা কি জনগণের আছে? বরং যত দোষ নন্দ ঘোষ। নিজের দোষ কখনও দেখার সামর্থ্য বাঙালির নেই, আছে শুধু অপরের দোষ খুঁজে বেড়ানোর, যেন নিজের দোষটা সহজেই চাপা দিতে পারে।
প্লিজ, জনগণ একটু বুঝতে চেষ্টা করুন। সরকারের উদ্যোগগুলো কিন্তু শুধু সরকারের জন্য নয়, এটি জনগণের জন্য । জনগণকে বাঁচাতেই সরকারের প্রচেষ্টা। ‘জনগণ বাঁচলেই সরকারের প্রাণ বাঁচে’- এটাই হচ্ছে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের প্রধান পরিচয়। এই মহামারী ভাইরাসের পরে রাষ্ট্রের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- তা নিয়ে সরকার কত বেকায়দায় তা একমাত্র সরকারই বুঝলে হবে না, জনগণকেও তা বোঝার চেষ্টা থাকতে হবে। নইলে বাঙালির প্রকৃত মনুষ্যত্বের মুক্তিকে সুদূর পরাহত বলে মনে করবো।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাউশি, ঢাকা। সাবেক সহকারী অধ্যাপক, কক্সবাজার সরকারি কলেজ