যাত্রা মোহন সেনের বংশধরের মানবেতর জীবনযাপন মানবাধিকার কর্মী; পাশে বিপ্লব চৌধুরী
1 min readসেলিম চৌধুরী :: চট্টগ্রামের মুকুটহীন রাজা বঙ্গীয় প্রাদেশিক স্বরাজ দল-এর সাধারণ সম্পাদক , প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি কলকাতা কর্পোরেশনের পর পর ৫ বার নির্বাচিত মেয়র, চট্টগ্রাম থেকে আইনসভার নির্বাচিত সদস্য দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। জন্ম ১৮৮৫ সালে পটিয়া থানার (বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলা) বরমা গ্রামে। পিতা আইনজীবী যাত্রামোন সেনগুপ্ত ছিলেন স্বদেশমুক্তি আন্দোলনের নেতা। সর্বভারতীয় নেতা হিসেবেও তিনি বহুল পরিচিত। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সহধর্মিণী ছিলেন লন্ডনের কেম্ব্রিজ শহরের সম্ব্রান্ত পরিবারের কন্যা নেলী সেনগুপ্তা। তিনি ১৯৩৩ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী ও কলিকাতা কর্পোরেশনের অলডারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালের ২১ জুলাই দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত অন্তরীল অবস্থায় মৃত্যফুবরণ করেন। কলিকাতা, চট্টগ্রাম শহর ও চন্দনাইশ-সাতকানিয়া এলাকায় ছিল তাদের বিশাল জমিদারী। কিন্তু তারই একমাত্র উত্তরাধিকারী যাএা মোহন সেনের চতুর্থ পুএ বীরেন্দ্র মোহন সেন প্রকাশ (বিভূতি রঞ্জন) এক মাএ ছেলে মিলন সেন গুপ্তের ৬ সদস্যর পরিবার নিয়ে করুন অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। নিজ গ্রামের বাড়ীর ভাঙা জরাজীর্ণ কুটিরের দুই শতক জায়গাও আজ হুমকির মুখে,তাদের শত বিঘা জমি আজ অন্যর দখলে। নাতি নাতনিরা তাদের প্রতিষ্টিত ইস্কুলে বিনা বেতনে পরতে পারেনা। তিনি একজন মুক্তি যোদ্ধা কিন্তু টাকার অভাবে ঢাকায় যেতে না পেরে গেজেট ভুক্ত হতে পারেন নি। সাটিফিকেট আছে। কিন্তু কোন মূল্যায়ন নেই। পাননা বয়স্ক ভাতা,টাকার অভাবে চিকিসা করতে পারছেন না।বয়সের বারে আজ নুয়ে পরার অবস্থা। তার উপর মহামারীর এহেন পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে দিন আতিপাত করতে হচ্ছে। তাকিয়ে থাকছে কারো না সাহায্যর আসায়। একটা জাতির জন্য কত বড় লজ্জাজনক বিষয় তা বুঝবার ক্ষমতা সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক নেতাদের এখনও হয়েছে বলে মনে করি না।
নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তী জীবনে একজন পেশাদার আইনবিদ হিসাবে তাঁর দান-ধ্যানের কথা উল্লেখ করলে সকলে বিস্মিত হবেন সন্দেহ নাই।চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে অবস্থিত ‘‘যাত্রামোহন সেন হল’’, ‘‘ওল্ডহ্যাম ক্লাব’’, ‘‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’’ তাঁরই দানকৃত জমি এবং এসব গৃহাদি নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর অর্থানুকূল্য এখনও জীবন্ত সাক্ষী। পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য তিনি পরিকল্পিতভাবে জে, এম, সেন হল প্রতিষ্ঠা করেন। রহমতগঞ্জ পোষ্ট অফিসটিও তাঁর দানকৃত জমিতে অবস্থিত। কুসুমকুমারী ছিলেন তাঁর পুত্র মনমোহন সেনের বাল্য বিধবা। পুত্রবধূকে সমাজকর্মে ও শিক্ষাব্রতে উদ্বুদ্ধ করবার মানসে তিনি স্কুলের জমি দান করে নিজেই এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন রহমতগঞ্জে এবং আমৃত্যু কুসুম কুমারী এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে তা মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যালয় দু’টি ‘‘কুসুম কুমারী পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়’’ ও ‘‘কুসুম কুমারী পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’’ নামে খ্যাত। নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি ‘‘ডাঃ খাস্তগীর বালিকা স্কুল’’ প্রতিষ্ঠা করেন। ডাক্তার ছিলেন তাঁর শ্বশুর। জীবনের প্রথমভাগে তিনি তাঁর শ্বশুরের বিরাট পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন; তা তিনি ভুলেননি। এই স্কুলকে উচ্চ ইংরেজী মানে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে তিনি বিপুল পরিমাণ জমি দান করেছিলেন। জামাল খান রোডে অবস্থিত ডাঃ খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত একটি প্রথম শ্রেণীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বরমা গ্রামে তাঁর মা-বাবার নামে তিনি ‘ত্রাহি-মেনকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখনো এই বিদ্যালয় স্বকীয় গৌরবে বর্তমান আছে। এখানে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘‘বিনোদিনী বালিকা বিদ্যালয় আমাদের অক্ষমতায় লুপ্ত হয়েছে। স্বগ্রামে তিনি এক দাতব্য চিকিৎসালয়।আমরা এমনই অকৃতজ্ঞ যে বর্তমানে আমরা এর নাম ‘‘বরমা পল্লী চিকিৎসালয়’’ দিয়েছি।
তাঁর দানকৃত জমিতে নূর মুহম্মদ তরফ কিনে সেখানে তিনি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায়, এই মসজিদ পরিচালনার জন্য তিনি অনেক জমি দান করেছেন। তিনি কি উদার মনের লোক ছিলেন এবং অসাম্প্রদায়িক তাঁর আদর্শ ছিল দেশবাসী তা ভুলতে বসেছে। এমনি এক কৃতি পুরুষকে যদি আমরা সম্মান না জানাই তবে দেশে জ্ঞানগুণী জন্ম হবে আমরা কি আশা করতে পারি? আমাদের সমাজে যারা নিজেদের উচু বুদ্ধিভিত্তিক বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসের মানুষ মনে করে পথ চলেন তাঁরাই তো যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের সিকি পরিমাণও নয় তা বুঝেনা। চট্টগ্রামে দীর্ঘ ২০/২৫ বছরে কত না কিছু দেখেছি। ইতিহাসের মানুষ বলে বৌ-বাচ্চার জন্মদিনও হয় মহাসমারোহে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যারা ইতিহাসের নক্ষত্র তাঁদের জন্ম মৃত্যুবার্ষিকী তাদের পরিবার কিভাবে চলে কেউ খবরও রাখে না। রাখেন না যাত্রা মোহন সেনের ট্রাষ্টে যারা ভোগ করেন তারাইও। বুদ্ধি ও জ্ঞানপাপী মুখে আমরা থুথু দিই। সরকারের প্রতি বিনীত দাবি যাত্রা মোহন সেন এর ব্যবহারিত ঐতিহাসিক বাড়ীটি বর্তমান রহমতগঞ্জের (শিশু বাগ) ইতিহাসের জন্য বর্তমান জন্মের জন্য স্মৃতি রক্ষা করতে সমগ্র চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ইতিহাস ধরে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা।চট্টগ্রামের মেয়র, জেলা প্রশাসক ও তাদের সম্পত্তির উপর জনকল্যাণে গড়ে উঠা সকল প্রতিস্টানের প্রধান সহ সর্বস্তের সমাজ কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল এর কর্মী বিপ্লব চৌধুরী।