করোনার বিস্তার টেকাতে সমন্বিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই; আবু তাহের চৌধুরী
1 min readসেলিম চৌধুরী, পটিয়া প্রতিনিধিঃ- চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবু তাহের চৌধুরী বলেছেন করোনাভাইরাস বিস্তার টেকাতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। গত সপ্তাহে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২০০ পরিবার কে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। বর্তমানে সরকারি এাণ নিয়ে এলাকায় রাজনীতি চলছে।
আমি নির্বাচন করবনা কিন্তু মানব সেবা উক্তম সেবা বলে মনে করি। যারা সরকারের দেওয়া এাণ নিয়ে রাজনীতি করে তাদের আমি ঘৃণা করি। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এলাকার একদম গরীব অসহায় দুঃখী দরিদ্র মেহনতী দিনমজুর কর্মহীন মানুষের মাঝে শিগগিরই ৫০০ পরিবারকে এাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে ইতিমধ্যে সাইফুর রহমান, মীর আবদুল আওয়াল আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন। সমাজ সেবক আবু তাহের চৌধুরী আরোও বলেন, এসময়ে রাজনীতির উর্ধ্বে মানব কল্যাণে সমাজের বিত্তশালী এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। বাইরে করোনা দলের ফোঁসফাঁস, দ্বারে কড়া নাড়ে কোভিড নাইন্টিন। দ্বার তো খোলা যাবে না। তবে কি বলতে চায় তা শুনতে কান পাতব আমরা। তার আগে চলুন তো পরখ করি আমার দ্বার রুদ্ধ আছে তো? আমরা প্রস্তুত তো?
নিজ শরীরের প্রস্তুতি দিয়ে শুরু করি।এই সময়টাতে সুষম খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ধর্মীয় আচারগুলো ঘরে বসে পালন করতে হবে। দিনে একবার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে, যেখানে সেখানে চোখ রাখতেই পারেন। পরিবারের বয়োবৃদ্ধদের কিংবা অসুস্থ যিনি আছেন তাকে করোনার ভয় বেশি দেখিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়া যাবে না। এ রোগ এ কারো ঝুঁকি কিন্তু কম নয়। আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত তো আপনি এর সাথে লড়াইয়ে জিতে যাবেন আর অন্যথায় আপনাকে করোনার কবলে পড়ে ঘায়েল হতে হবে।
চিকিৎসা নেই এই রোগের, তবে অনেক ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। অতি সমপ্রতি ফ্লাভিপাইরাভির আ্যাভিগ্যান নামের যে ওষুধের নাম শোনা যাচ্ছে তা ১২০ জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করে সফল হয়েছে বলে জাপানী গবেষকরা জানিয়েছে, চীনের ৩টি হাসপাতালে ২৩৬ জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করে ৭ দিনের মধ্যে ৬১ শতাংশ রোগী জ্বর কাশি মুক্ত হয়েছে এবং কোন কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস লাগেনি এদের, বাংলাদেশের একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ১০০ জন কোভিড নাইনটিন রোগীর জন্য বিনামূল্যে এ ওষুধ উৎপাদন করবে। বাজারে এ ওষুধ এখনি পাওয়া যাবে না। এটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে। অনেকগুলো ধাপ উত্তীর্ণ হয়ে তবেই একটি ওষুধকে রোগীর হাতে তুলে দেয়া হয়। ইথানল ভাপের ব্যবহারের চটকদার খবরে বিভ্রান্ত হবেন না। এটি প্রাণ নাশের কারণ হতে পারে। এভাবে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি ট্রায়াল ছাড়া প্রকাশ করারই নিয়ম নেই। চিন, ইতালি,আমেরিকার
ইরানে অনেক লোকের মৃত্যু হয়েছে এ জাতীয় ভুল চিকিৎসায়। আমরা করোনা সংক্রমণের ৪র্থ ধাপে আছি এ পর্যায়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ টেস্ট হওয়ার কথা সেই পরিমাণ সক্ষমতা এখনও অর্জিত হয়নি। তবে জিন এঙপার্ট পরীক্ষার ল্যাব ব্যবহারের একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের কাছে জানা যাচ্ছে সেটা ব্যবহার সম্ভব হলে এ অবস্থাও কেটে যাবে আশা করা যায়। এর রোগের জটিলতায় ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লাগে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে এর সংখ্যা আছে বা আসার অপেক্ষায় আছে এমনটা মিলিয়ে ১৭৬৯ অর্থাৎ ৯৩ হাজার ২৭৩ জন মানুষের জন্য মাত্র একটি যা আবার বড় বড় শহর গুলোতেই এ সুবিধা আছে, এর পরিচালনা করতে যে পরিমাণ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী প্রয়োজন তাতেও ঘাটতি রয়েছে। তবে আসার কথা হল কেউ বসে নেই সকলে উঠেপড়ে লেগেছে এ মহামারী ঠেকাতে। আপনিও উঠে পড়ে লেগেছেন তো? এ রোগে চিকিৎসা নয় সারা বিশ্বে এর মোকাবিলার মোক্ষম উপায় হচ্ছে বিস্তার ঠেকানো।এ জীবানু সংগ্রামে আপনার হাতেও তিনটি অস্ত্র আছে -আপনি তা ব্যবহার করুন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন। সেই অস্ত্রগুলো কী তাইতো? সেগুলো হচ্ছে ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, আর ঘরে অবস্থান করা সরকারের নিয়ম মেনে চলার প্রস্তুত। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া ভালো। এসময় আমরা বেশ কিছু নতুন বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছি যেমন কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশন, লকডাউন, স্যোসাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব। এর সবগুলোই রোগের বিস্তার ঠেকানোর পদ্ধতি। নোবেল করোনা একটি ছলনাময়ী ভাইরাস নানান রূপ নিয়ে সে বিস্তার লাভ করে মহামারীর সংকট তৈরি করছে। তাই বিস্তার ঠেকাতে পারলেই মহামারি ঠেকানো যাবে- এটাই একমাত্র কৌশল। আমি এ নতুন বিষয়গুলো নিয়ে একটু স্পষ্ট করি কারণ বিভিন্ন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে লোকজনের চোর পুলিশ খেলা চলছে এ ব্যাপারগুলো প্রয়োগ করতে গিয়ে। প্রথমেই আসি লকডাউন এটি আইন প্রয়োগ করে সংক্রমণ বিস্তার রোধ করতে ওষুধ, পত্রিকা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া সকল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড এবং জনসমাগম বন্ধ রাখার আদেশ। দুই জনের বেশি লোক একত্রিত হতে পারবে না এর আওতায় এবং শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে আদেশ অমান্য করলে।
কোয়ারান্টাইন সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি অর্থাৎ সন্দেহভাজন সংক্রমিত ব্যক্তি তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা এবং আলাদা করার মাধ্যমে সংক্রমণ রোধ করা।এটা বাসা কিংবা ইনস্টিটিউট এ হতে পারে এর আওতায় আসা ব্যক্তি অন্যদের কাছ থেকে পৃথক থাকবে। আইসোলেশন হচ্ছে সংক্রমিত ব্যক্তিকে পৃথককরণ এর মাধ্যমে বিস্তার রোধ করা এবং চিকিৎসা দেয়া, আর স্যোসাল ডিসট্যান্সিং হচ্ছে একে-অপরের মধ্যে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় ( ন্যূনতম ৩ ফুট) রাখা এবং জনসমাগম না করা (১০ জনের বেশী)।
আমাদের দেশ সংক্রমণ-এর চতুর্থ ধাপে। কয়েকদিন আগেও আমরা ৩য় ধাপে ছিলাম অর্থাৎ সংক্রমণ বেড়েছে। এর কারণ আমরা লকডাউন কার্যকর করতে পারিনি, রোগী তথ্য গোপন করছে, কোয়ারেনটাইন মানছে না। বিশেষজ্ঞগণ অন্যান্য দেশে নোবেল করোনার গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় এনে বলতে চাচ্ছেন ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা সংক্রমণের একটা ঊর্ধ্বমুখী চিত্র দেখব। সে হিসেবে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন করলে মে মাস পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকানো যাবে কিন্তু জুন এর শুরুতে তা পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে হাসপাতালের ওপর অধিক চাপ তৈরি করবে বলে আমার ধারণা। আবার জুন পর্যন্ত লকডাউন করলে পুরো জুন মাস সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও জুলাইয়ের শুরুতে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং হাসপাতাল এর ওপর চাপ ঊর্ধ্বমুখী হবে। কিন্তু জুন পর্যন্ত লকডাউন এবংএরপর সাথে স্যোসাল ডিসট্যান্সিং জুড়ে দিয়ে চলতে থাকলে জুলাই থেকে সংক্রমণ কমে যাবে, হাসপাতালের ওপর চাপ নেমে আসবে। আমরা হতাশ নই বিস্তার ঠেকানোর কৌশলগুলোকে সমন্বিত প্রচেষ্টায় সফল করতে পারলে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সক্ষম হব। তাই প্রয়োজন সকলের সচেতনতা। নোবেল করোনা এখনও দ্বারে কড়া নাড়ছে কিন্তু, এবার তবে দ্বারে কান পাতি কী বলছে শত্রুপক্ষ? বলছে ‘সতর্ক না হলে আতঙ্ক আছে বলে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হয়তবা আল্লাহর অশেষ রহমত নেক নজর পড়ে এর আগেও আমরা বা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মুক্ত হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। সবাই সুস্থ থাকুন ঘরে থাকুন ভালো থাকুন সরকারের আদেশ মেনে চলুন আমিন।