হিরো হওয়ার জন্য নয়;আল্লামা বাবুনগরী উম্মাহর হৃদয়ের কথাগুলোই কয়
1 min read[জুনাইদ আহমদ]
হিরো জিরো ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ সরগরম। সম্প্রতি মসজিদ উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহবান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের গ্রান্ড মুফতী আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী,আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী,আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী,
আল্লামা নুর হুসাইন কাসেমী হাফিযাহুমুল্লাহু সহ বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫ জন আলেম।
এ বিবৃতিতে নিরপেক্ষ,আপোষহীন ও স্পষ্টবাদী ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার হৃদয়ের ব্যথা আর আকুতি ফুটে উঠলেও বহুরূপী,সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী জিরোরা এ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে আধা জল খেয়ে মাঠে নেমেছে। শুরু হয়েছে গাত্রদাহ । বকতে শুরু করেছে পাগলের প্রলাপ।
মাথার মুকুট শীর্ষ ওলামায়ে কেরামকে পরস্পরের মোকাবিলায় দাড় করানো এজেন্ডা বাস্তবায়নের ন্যাক্কারজনক কাজ করে যাচ্ছে তারা।
দাম্ভিকতার জানান দিয়ে অর্বাচীন বালকের মতো শব্দ চয়নে কটুক্তিমূলক স্ট্যাটাস প্রসব করে মেটাচ্ছে হিংসার আগুনের জ্বালা। কারো যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা দেখে হিংসার অনলে জ্বললে সে জ্বালা বাড়ে বৈ কমে কি কভু!
বেশি নয় আজ শুধু এক কলম লিখছি..
আমি অধম দীর্ঘ তিন বছর যাবত আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর খেদমত ও সাহচর্যে থাকার সুবাদে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে মহান এ ব্যক্তিকে। পদমর্যাদা, টাকাপয়সা বা দুনিয়ার কোন যশখ্যাতির লোভ দেখিনি কখনো।
অতি দুঃখজনক ভাবে বলতে হয়,সময়ে সময়ে রং বদলানো গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষীরা আজ আল্লামা বাবুনগরীর মতো সহজ-সরল, দুনীয়াবিমূখ বুজুর্গ ব্যক্তিকে নিয়ে হিরো-জিরো বলার স্পর্ধা দেখিয়েছে। আফসোস! আফসোস!!আফসোস!!!
হিরো হতে আর পরস্পর মতানৈক্য সৃষ্টি করতে নয়,আল্লামা বাবুনগরীরা নিঃস্বার্থ ভাবে সদাসর্বদা উম্মাহর হৃদয়ের কথাগুলোই জাতীর সামনে তুলে ধরে উম্মাহর রাহবর ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন।
আর কে হিরো হওয়ার জন্য লাল শাড়ি পড়া,চুল উড়ানো বেপর্দা মহিলাদের সাথে বিজয় দিবসে ছবি আর সেল্ফি মারে জাতি তা জানে। হিরো হওয়ার জন্য কে ঐদিক চা-খেতে যায় তাও জাতির জানা। মুভ ফাউন্ডেশনে কে হিরো হতে গিয়েছিলো তাও সবার জানা। এসব জানা কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।
জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও সরকারের পক্ষ থেকে সামরিক সচিবের মাধ্যমে পেশ করা সরকারী খরচে বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্রের উন্নত চিকিৎসার অফারকে কোন ভাবনা চিন্তা ছাড়াই ফিরিয়ে দিয়ে ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আল্লামা বাবুনগরী। হসপিটালের বেডে শুয়ে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া এতো বিশাল অফার গ্রহণে অসম্মতি জানানো চাট্টিখানি কথা নয়। এক এক করে বললে আল্লামা বাবুনগরীর এমন বহু ত্যাগ আর বিসর্জনের কথা বলতে পারবো। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে তাই আজ সেসব ঘটনাবলী উল্লেখ করছিনা। পরবর্তীতে লিখবো ইনশাআল্লাহ…
আল্লামা বাবুনগরীরা শুধু পাঁচ দেওয়ালের ভেতর থাকেন না। আজকের জিরো ২০১৩ সালের ৫ ই মে’র রাতে যখন ভাগবাটোয়ারায় মগ্ন তখন আল্লামা বাবুনগরীরা ভয়াবহ সেই ৫ মে’র গভীর রাতে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তৌহিদি জনতার সাথেই শাপলা চত্বরেও ছিলো।
সাগর পরিমাণ রক্ত দেওয়ার কথা বলে বক্তব্য দিয়ে আজকের জিরো যখন ৬ মে গর্তে আশ্রয় নিয়েছিল তখন আল্লামা বাবুনগরীরা পাঁচ দেয়ালের বাইরেই ছিলো। গ্রেফতার হয়েছিলো,রিমান্ডে গিয়োছিলো,কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলো। সেদিন যেই জিরো পাঁচ দেওয়ালের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলো আজ সেই মুখে আল্লামা বাবুনগরীদের ব্যপারে পাঁচ দেওয়ালের কথা যখন শুনি তখন বড্ড হাসি পায়😀😀😀
আল্লামা বাবুনগরী জন্ম থেকেই হিরো। নতুন করে হিরো হওয়ার আদৌ কোন প্রয়োজন নেই।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কে ? আসুন সংক্ষিপ্তভাবে বংশীয় পরিক্রমায় জেনে নিই।
★ আপোষহীন ক্বায়েদে মিল্লাত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহ। তাঁর বড় আব্বা (মায়ের দাদা) যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ আল্লামা সুফী আজিজুর রহমান রহ.( মৃত্যু:১৩৩৯ হি.) ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার চারজন প্রতিষ্ঠাতের অন্যতম একজন।
★ আরেক বড় আব্বা ( নানার খালু) শায়খুল কুল আল্লামা আব্দুল ওয়াহেদ হাওলভী রহ. (মৃত্যু:১৩২৩ হি.)। তিনিও হাটহাজারী মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। যিনি ছিলেন তাসাওউফের সিদ্ধপুরুষ আল্লামা ফজলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী রহ. ও হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা।
★ আল্লামা বাবুনগরীর মায়ের ফুফা ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার প্রথম পৃষ্ঠপোষক শায়খুল মাশায়েখ আল্লামা জমিরউদ্দীন রহ.।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুকর নানা ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট,বাবুনগর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ হারূন বাবুনগরী রহ.।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর মায়ের মেজ জেঠা শায়খুল হাদীস আল্লামা আমিন বাবুনগরী রহ.(মৃত্যু:১৩৮০ হি.)। তিনি খাতামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এর সুযোগ্য শাগরেদ ছিলেন।
★ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর মায়ের নানা ছিলেন,শায়খুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. শাগরিদ আল্লামা শায়খ আব্দুল আজিজ জাহাঁপুরী রহ.।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর মায়ের মামা মাওলানা মাসউদ জাহাঁপুরী ছিলেন দারুল দেওবন্দের কৃতি ফাযেল
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর আম্মাজান হলেন এক মহিয়সী রত্নগর্ভা রমনী। তিনি ছিলেন আল্লামা সূফী আজিজুর রহমান রহ. এর দৌহিত্রা,
আল্লামা হারূন বাবুনগরী রহ.এর কন্যা। তিনি পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম আল্লামা মুফতী আযীযুল হক রহ. ও হাকিমুল উম্মাত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর খলিফা আল্লামা শাহ আব্দুল ওয়াহহাব রহ. এর বাইয়াত ছিলেন।
★ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর দুই মামাও প্রখ্যাত আলেম,মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। বড় মামা হলেন মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী( দা.বা.)।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর পিতা ছিলেন দরস জগতের সম্রাট, মেশকাত শরীফের বিশ্ববিখ্যাত ভাষ্য তানজিমুল আশতাতের রচয়িতা আল্লামা আবুল হাসান (রহ.)
★ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহ.এর সুযোগ্য শাগরেদ। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ।হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক ও উস্তাদুল বুখারী।হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব। আরবী,উর্দু ভাষার কবি,পণ্ডিত।আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থার সদস্য। আরবী উর্দু ও বাংলায় প্রায় অর্ধশত কিতাবের জনপ্রিয় লেখক।খতীবে ইসলাম। কারানির্যাতিত আপোষহীন মজলুম আলেমেদ্বীন, মুসলিম উম্মাহর ঈমান আকিদা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী।
★ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর তিনভাই।তিনজনই উঁচু মাপের আলেম এবং মুহাদ্দিস। মাওলানা শুয়াইব বাবুনগরী তিনি বাবুনগর মাদরাসার মুহাদ্দিস, মাওলানা জোবায়ের বাবুনগরী তিনি রাউজান সুলতানপুর মারাসার মুহাদ্দিস।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর ভগ্নিপতিরাও বড় মাপের আলেম। একজন হলেন বিশিষ্ট লেখক,
গবেষক,সাহিত্যক,চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাফেজ আবু জাফর সাদেক (রহ.)। ছোট ভগ্নিপতি মুর্শিদে আজম মাওলানা আবদুল মজিদ শাহ সাহেব রহ. এর সুযোগ্য সন্তান বিশিষ্ট আলেম মাওলানা যাকারিয়া সাহেব।যিনি চট্টগ্রাম হাটহাজারীস্থ উত্তর মাদার্শা মজিদিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর ভাগ্নেরাও বড় মাপের আলেম। এক ভাগ্নে পাকিস্তান করাচি জামিয়া বান্নুরী টাউন থেকে উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত মুফতি ওসমান সাদেক।তিনি বিশিষ্ট আরবী ভাষাবিদ। লেখক ও গবেষক। আরেক ভাগ্নে হাটহাজারী মাদরাসার উচ্চতর আরবী সাহিত্য বিভাগের উস্তায,বিশ্ববিখ্যাত জামিয়া আল- আযহার মিশরের কৃতি ফাযেল আল্লামা আনোয়ার শাহ আযহারী দা.বা.,আরেক ভাগ্নে মাওলানা হাফেজ ইরফান সাদেক,বাহরাইন আয়শা জামে মসজিদের ইমাম।
★ আল্লামা বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহুর মেয়ের জামাতারাও একেকজন বড় আলেম,মুহাদ্দিস। মুফতী ইরশাদুল্লাহ দা.বা. মুহাদ্দিস,জিরি মাদরাসা,মাওলানা আব্দুল্লাহ সাহেব দা.বা.,
উস্তাযুত তাফসীর ও নাজেমে তালিমাত ফতেহপুর মাদরাসা চট্টগ্রাম,মুফতী কুতুবউদ্দিন দা.বা.,তিনি নানুপুরের পীর সাহেব আল্লামা শাহ জমিরউদ্দীন নানুপুরী রহ. এর সুযোগ্য সাহেবজাদা এবং জামিয়া নানুপুরের বর্তমান শায়খুল হাদীস ও উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগের তত্বাবধায়ক। মাওলানা জুনায়েদ দা.বা. তিনি উজানী মাদরাসার মুহাদ্দিস। মাওলানা ফয়লুল করীম দা.বা. তিনি বিশিষ্ট আলেম এবং আগ্রাবাদ হাজীপাড়া মাদরাসার পরিচালক।
উচ্চ বংশ,বিনয়-নম্রতা,তাকওয়া পরহেজগারি ও খোদাভীরুতা,ইলম-আমাল,আখলাক-চরিত্র সর্ব দিক দিয়েই হিরো আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহ। সুতরাং বুঝতে হবে যে, পরস্পরের মতানৈক্য তৈরী করে হিরো হতে নয়; উম্মাহর হৃদয়ের কথাগুলোই আল্লামা বাবুনগরীরা কয়।
পরিশেষে বলি, হিংসার অনলে জ্বলেপুড়ে শেষ না হয়ে,উপরে থুথু নিক্ষেপ করে নিজের গা নষ্ট না করার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক,সেটাই প্রত্যাশা।
বি:দ্র: উপরোক্ত লেখাটি একান্তই আমার পক্ষ থেকে লেখা। এতে কারো কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
লিখনে: জুনাইদ আহমদ
মাদরাসা কোয়ারেন্টাইন দারুল উলুম হাটহাজারী,চট্টগ্রাম।
(৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার,রাত ৩ টা)