পাবনার সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপন
1 min readরাজিবুল রোমিও, পাবনা প্রতিনিধি।।
পাবনা জেলার সদ্য সরকারিকৃত সাতটি কলেজের মধ্যে দু’টি কলেজের ১শ ৮ জন শিক্ষক এক বছর যাবত বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাবনার সুজানগর উপজেলার জহুরুল কামাল ডিগ্রী কলেজ, সাঁথিয়া ডিগ্রী কলেজ, বেড়া ডিগ্রী কলেজ, ফরিদপুর উপজেলার মোহাম্মদ ইয়াছিন ডিগ্রী কলেজ, ভাঙ্গুড়া উপজেলার হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, চাটমোহর ডিগ্রী কলেজ ও আটঘরিয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারি ঘোষনা করে।
তার পর থেকে অধ্যক্ষগণ কলেজের নন-এমপিও সম্মান শ্রেণির শিক্ষক ও ডিগ্রী পাস শ্রেণির তৃতীয় শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেন।
এর আগে কলেজ হতে প্রতি মাসে তারা একটা থোক বরাদ্দ পেতেন তাই দিয়ে কোনো ভাবে শিক্ষকদের সংসার চলতো।
দৈনিক কলম সৈনিক’র প্রতিবেদক কে সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের ইসলামের ইতিহাস সম্মান শ্রেণির প্রভাষক নুর ইসলাম জানান, আমরা নন-এমপিও ৩৩জন এবং সরকারি চাটমোহর ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রব্জ্ঞিান বিভাগের প্রভাষক হিরা পারভিন জানান, আমরা নন-এমপিও ৭৫জন শিক্ষক গত বছর এপ্রিল-মে থেকে কলেজের বেতন-ভাতা কিছুই পাই না।
প্রতিবেদক কে তারা আরো বলেন, জহুরুল কামাল ডিগ্রী কলেজ, আটঘরিয়া ডিগ্রী কলেজ, বেড়া ডিগ্রী কলেজ,ইয়াছিন ডিগ্রী কলেজ ও সাঁথিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষগণ এখনও নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালু রেখেছেন।
অথচ তাদের কলেজে পর্যাপ্ত ফান্ড থাকা সত্বেও খুবই কষ্টে দিন পার করছেন তারা। উপরন্ত করোনা পরিস্থিতি তাদের মহাসংকটে ফেলেছে। জেলায় বেতন না দেওয়া ওই দুটি কলেজের অন্ততঃ ১শ ৮ জন শিক্ষক চরম দুর্ভোগের শিকার বলে তারা দাবি করেন।
জহুরুল কামাল ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মান শেণির প্রভাষক নায়েব আলী বলেন, তারা কলেজ থেকে যে সম্মানি পেতেন তা অব্যাহত রয়েছে। এর সত্যতা মিলেছে আটঘরিয়া কলেজেও।
এখানকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাউর রহমান জানান, মানবিক কারণে আমি নন-এমপিও কলেজ শিক্ষকদের বেতন প্রদান অব্যাহত রেখেছি।
তিনি আরো বলেন কলেজ আত্তীকরণ শেষে ওই সব শিক্ষক যখন সরকারি তহবিল থেকে বকেয়া বেতন পাবেন তখন ঐ পরিমান প্রদত্ত টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি ফান্ডে জমা দেওয়া হবে।
সরকারি ডাঃ জহুরুল কামাল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল লতিফ কলম সৈনিকের প্রতিবেদককে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক তারা অনার্স পর্যায়ের শিক্ষকসহ নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বেসরকারি নিয়মেই প্রদান করে যাচ্ছেন। এতে প্রতি শিক্ষক মাসিক ১২/১৩ হাজার টাকা করে পান।
সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অনার্স শিক্ষকদের বেতন না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুজ্জামান প্রতিবেদক কে বলেন, সরকারি ঘোষনার পর থেকে কলেজটি সরকারি নিয়মেই চলছে।এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
তিনি আরো জানান, আমি নন-এমপিও শিক্ষকদের পুর্বের মতই বেতন দিতে আগ্রহী। এজন্য আজ বৃহস্পতিবার কলেজ ফান্ড থেকে তাদের বেতন প্রদানের অনুমতি চেয়ে ডিজি মহোদয়ের নিকট অন-লাইনে একটি আবেদন পাঠিয়েছি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিস্বাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় বলে উনাকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
এই বিষয়ে দৈনিক কলম সৈনিক’ কে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাসহ অধ্যক্ষ মহোদয় ওইসব শিক্ষকগণের বেতন বিল দাখিল করলে তাতে আমার সম্মতি থাকবে।
এ ব্যাপারে প্রতিবেদক কে চাটমোহর সরকারি ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ বলেন, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বরখাস্তের পর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করছি কিন্তু অনেক কাগজপত্রই এখনো বুঝে পাইনি। তবে নন-এমপিও শিক্ষকদের বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। এজন্যে উর্ধতন কর্তৃৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে পারবো আশাকরি।
এ ব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শাহেদ পারভেজ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রতিবেদক কে বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউএনও’দের সাথে কথা বলে সরকারি নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নিতে বলবো।