শবে বরাত জিজ্ঞাসা ও জবাব (পর্ব-২)
1 min read[মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন]
প্রশ্ন: শবে বরাতের দিনে রোজা রাখা কি সুন্নত?
উত্তরঃ লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে শবে বরাতের রোজা। শবে বরাতের রোজা নামে ইসলামে কোন রোজা নেই। এক বর্ণনায় এসেছে, যা হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ “অর্ধ শাবানের রাত্রে তোমরা নামাজ পড়ো, আর দিনের বেলা রোজা রাখ”। এই হাদিস দ্বারা অনেকেই শবে বরাতের রোজা প্রমাণিত করেন। এই হাদীসটি দুর্বল/ যয়ীফ, তাই আমরা শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখব শবে বরাতের রোজা হিসেবে নয়, বরং শাবান মাসের সুন্নাত রোজার হিসাবে। তাছাড়া আইয়ামে বীজের রোজার নিয়তেও রাখতে পারি। আইয়ামে বীজ বলা হয় প্রতি মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা রাখাকে।
প্রশ্ন: শবে বরাতে মৃত ব্যক্তির রূহ কি নিজ বাড়িতে এসে ঘোরাফেরা করতে থাকে?
উত্তরঃ কোন মানুষের ইন্তেকালের পর আর দুনিয়াতে বিচরণ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ বিশ্বাস স্থাপন করা ঠিক নয় যে, মৃতরা শবেবরাতে বাড়িতে আসে। অনেক লোক এমন বিশ্বাস স্থাপন করে নিজ বাড়ীর চতুর্দিকে আগরবাতি জ্বালিয়ে সুগন্ধিময় করে। এটা বিদআত, তাই তা পরিত্যাগ করা উচিত।
প্রশ্ন: শবে বরাতে হালুয়া রুটি ও শিরনি বিতরণ করার ফজিলত আছে কি?
উত্তরঃ বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের মুখে শোনা যায়, তারা বলেনঃ শবে বরাতে হালুয়া-রুটি, শিরনি বিতরণ করলে আরশের নিচে স্থান পাওয়া যায়। এটাকে অনেকেই রাসুলের হাদিস হিসাবেও বলে থাকে। অতচ রাসুলের হাদিস এর সাথে এর দূরতম সম্পর্কও নেই। এটি এমন একটি ভিত্তিহীন কথা যার জাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
আবার কোন কোন এলাকার লোকদের বলতে শোনা যায়, ওহুদ যুদ্ধে যখন নবীজির দান্দান মোবারক শহীদ হয়েছিল, তখন কিছুদিন কোন প্রকার শক্ত খাবার খেতে পারেননি, সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে হালুয়া-রুটি, জিলাপি ইত্যাদি বিতরণ করা হয়। অথচ ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে, শাবান মাসের ১৫ তারিখ তথা শবে বরাতের নয়। আর যেহেতু শবে বরাতের আমল সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত তাহলে এসব ভিত্তিহীন কথার উপর আমল করার কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: শবে বরাতে কি মানুষের আগামী বছরের তাকদির নির্ধারণ হয়?
উত্তরঃ শবেবরাতে তাকদির নির্ধারণ হয় এমন ধারণা রাখা ভুল এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন। তখন ফিরিশতা বলতে থাকেনঃ হে আমার প্রতিপালক! (এখন তো) বীর্য। হে আমার প্রতিপালক! (এখনও) জমটি রক্ত। হে আমার প্রতিপালক! (এখনও) গোশতের টুকরা। এরপর যখন আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করার ফয়সালা করেন তখন ফিরিশতা বলেন, হে আমার রব! (সে কি) পুরুষ না স্ত্রীলোক, দুর্ভাগা, না ভাগ্যবান হবে? তার জীবিকা (কি হবে)? তার আয়ু (কী হবে)? এরপর নির্দেশ মুতাবিক তার মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই এ সব কিছু লিপিবদ্ধ করা হয়।(বুখারী,মুসলিমঃ৬৪৮৯)।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা সমগ্র সৃষ্টির ভাগ্যলিপি আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।(মুসলিমঃ৬৫০৭)।সহি হাদিস থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় শবেবরাতে তাকদির নির্ধারণ হয় না বরং মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাকদীর নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
লেখক: ফাজিল- জামেয়া আঙুরা।
ইফতা ও আদব- মা’হাদুশ শায়খ ইলিয়াস রহঃ যাত্রাবাড়ী ঢাকা।