শবেবরাত জিজ্ঞাসা ও উত্তর
1 min read[মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন]
প্রশ্ন: ইসলামের শবেবরাতে আমলের কোন ভিত্তি আছে কি?
উত্তরঃ জ্বী! সহি হাদিস দ্বারা শবে বরাতের রাত্র অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতে আমল করা প্রমাণিত রয়েছে। ১.”মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’- সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫।
২. ‘‘হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন
‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩।
প্রশ্ন: এই রাতে কিভাবে আমল করা উচিৎ ?
উত্তরঃ এ রাতে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে (যা আমরা উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদিস থেকে পাই) এবং কোরআন তেলাওয়াত করা, ইস্তেগফার করা, দুরুদ পড়া, দুয়া করা, ঘুমানোর প্রয়োজন হলে ঘুমানো, এমন যেন না হয় যে সারারাত ইবাদত করলাম কিন্তু ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে পারলাম না.।
প্রশ্ন: শবে বরাতের ইবাদতের জন্য গোসল করা কি সুন্নত?
উত্তর: শবে বরাতের ইবাদতের জন্য গোসল করা সুন্নত নয়। শবে বরাতের গোসলের ফজিলত সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা হাদিসের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। যেমন বলা হয়ে থাকে, এই রাতে ইবাদতের উদ্দেশ্যে গোসল করলে গোসলের প্রতি ফুটার বিনিময়ে গুনাহ মাফ হয়। আরও বলা হয়ে থাকে যে, গোসলের প্রতি ফোঁটা পানির বিনিময়ে ৭০ রাকাত নফল নামাজের সওয়াব হয়। এসব উক্তি কোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে সহীহ সূত্রে পাওয়া যায় না, এগুলো ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট।
প্রশ্ন: শবেবরাতে সম্মিলিত কবর যিয়ারতের বিধান কি?
উত্তর: প্রথম কথা হচ্ছে, এই রাত্রের সাথে জিয়ারতের কোন সম্পর্ক নেই, জিয়ারত একটি সুন্নত আমল, যা মৃতদের হক, প্রতিদিন জিয়ারত করা উচিত, এতে জিয়ারতকারীরও অনেক ফায়দা রয়েছে। কাজেই জিয়ারত কে শবে বরাতের সাথে বিশেষায়িত করা ঠিক নয়। শবেবরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিয়ারত নিয়ে নিয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর যে বর্ণনা রয়েছে , তার সনদের দিক দিয়ে যয়ীফ বা দুর্বল। “বর্ণনাটি হচ্ছে আয়েশা রাঃ বলেনঃ এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম, খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে তাকে দেখতে পেলাম, তিনি বললেনঃ কি ব্যাপার আয়শা? (তুমি যে তালাশে বের হলে) তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার উপর কোন বিচার করবেন। হাদিস দীর্ঘ ” (তিরমীযীঃ৭৩৯)।তা দ্বারা প্রমাণ করা হয়ে থাকে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই রাত্রে জিয়ারত করেছেন।
ইমাম বুখারী রহঃ সহ অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ এই বর্ণনাটি কে যয়ীফ বলেছেন। আর যদি এটা আমরা গ্রহণও করি তবে এটা থেকে আমরা শিক্ষা পাই ‘জিয়ারত একা করতে হবে’ ঐক্যবদ্ধভাবে নয়। সুতরাং সাধারন নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্যক্তিগতভাবে জিয়ারত করব। কবরস্থানে ঐক্যবদ্ধ মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকব।
প্রশ্ন: শবে বরাতে বিশেষ পদ্ধতির কোন নামাজ আছে কি?
উত্তরঃ শবে বরাতের নামে বিশেষ পদ্ধতির কোন নামাজ নেই, এই ফজিলত পূর্ণ রাত্রে দীর্ঘ কেরাত ও সিজদা সহকারে নফল নামাজ পড়া দ্বারা প্রমাণিত।
সমাজে প্রচলিত বিশেষ পদ্ধতির নামাজ রয়েছে, যথাঃ১.দু রাকাত নফল নামাজ পড়া, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার আয়াতুল কুরসি, ১৫ বার সূরা ইখলাস, অতঃপর সালাম ফিরিয়ে ১২ বার দুরুদ শরীফ পড়া। ২. আট রাকাত নফল নামাজ, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস পাঁচবার করে পড়া,একই নিয়মে বাকি সব।
৩. চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ৫০ বার সুরা ইখলাস পড়তে হবে। ইত্যাদি অনেক নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। শরীয়তে যে নিয়ম গুলোর কোন ভিত্তি নেই। এমন ও প্রচলিত রয়েছে যে, এই রাতে নামাজের নিয়ত করতে “সালাতু লাইলাতিল বারাত” উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এগুলো ভিত্তিহীন। তাই এসব ভিত্তিহীন নিয়ম ছেড়ে সহিহ হাদিস অনুযায়ী আমরা নফল নামাজ পড়বো। নামাজ দীর্ঘ করার জন্য এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে পারেন অথবা এক সূরা বারবারও পড়তে পারে।
প্রশ্ন: শবে বরাতের দিনে রোজা রাখা কি সুন্নত?
উত্তরঃ লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে শবে বরাতের রোজা। শবে বরাতের রোজা নামে ইসলামে কোন রোজা নেই। এক বর্ণনায় এসেছে, যা হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ “অর্ধ শাবানের রাত্রে তোমরা নামাজ পড়ো, আর দিনের বেলা রোজা রাখ”। এই হাদিস দ্বারা অনেকেই শবে বরাতের রোজা প্রমাণিত করেন। এই হাদীসটি
লেখক: ফাজিল- জামেয়া আঙুরা।
ইফতা ও আদব- মা’হাদুশ শায়খ ইলিয়াস রহঃ যাত্রাবাড়ী ঢাকা।