মুসলিমাহ হিশেবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ
1 min read
মূলঃ Amra Siddiqah
অনুবাদঃ রওশন আরা তাবাসসুম
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা নারীদের স্বভাবগতভাবে সংবেদনশীল এবং আবেগী করে সৃষ্টি করেছেন। আমরা এটা পছন্দ করি কিংবা না করি। আপনি স্বীকার করুন বা না করুন, একজন নারী সারাদিনে অনেক গুলো তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যান। যা তাকে শারিরীকভাবে ক্লান্ত করে এবং তিনি মানসিকভাবেও ক্লান্তি বোধ করেন।
প্রিয় বোনেরা সাবধান! আপনার আবেগকে প্রশ্রয় দেবেন না। এটি এমন একটি জৈবিক সংবেদনশীলতা যা আমাদের মন-মানসিকতাকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে পরিবর্তন করে দেয়।এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি করে এই আবেগ এর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
আমি এ বিষয়ে কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি এর দ্বারা আমরা উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
(১)আপনার আবেগের জায়গাগুলো খুঁজে বের করুনঃ
প্রথমে আপনার আবেগের জায়গাগুলো খুঁজে বের করুন।
তারপর যখনই আপনি আবেগ অনুভব করবেন তখন জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে বলুন- আমরা প্রাকৃতিক ভাবেই এমন। সুতরাং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক নয়। তবে সতর্ক থাকবেন! শয়তানের প্ররোচনায় পা দেবেন না, কারোর খারাপ মন্তব্য শুনে গালি গালাজ করবেন না, কারোর বিভ্রান্তিমূলক কথায় কান দেবেন না, অন্যের সাথে পার্থিব বিষয় নিয়ে অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। নিঃসন্দেহে এসব শয়তানের প্ররোচনার অংশ। আবেগের পরিবর্তন করুন। মনকে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত রাখুন। অবশ্যই আল্লাহ এসব পছন্দ করেন।
(২) আবেগকে মেনে নিতে শিখুনঃ
আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক মহান আল্লাহ আমাদের এভাবে ডিজাইন করেছেন- একথা স্বীকার করুন। আমাদের আবেগ আমাদের সুন্দর ও সংবেদনশীল করেছে। আমাদেরকে বানিয়েছে ভালো বন্ধু, প্রেমময় স্ত্রী কিংবা মমতাময়ী মা। তবে আমাদের এটাও মেনে নিতে হবে যে আমাদের আবেগগুলো পরীক্ষাস্বরূপ। কোনো ভালোবাসাই যেনো রবের অসন্তুষ্টির কারণ না হয় সে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। কাউকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমরা একটা হাদিস অনুসরণ করতে পারি। যদিও এটি মানা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হবে। কারণ আমাদের নারী মন গভীরভাবে ভালোবাসতে ভালোবাসে। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সংযম সহকারে ভালোবাসতে বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভালোবাসো। হতে পারে একদিন সে এমন কেউ হয়ে যাবে যার প্রতি তুমি ঘৃণা প্রকাশ করবে। যাকে ঘৃণা করো তার প্রতি নির্দিষ্ট মাত্রায় ঘৃণা প্রকাশ করো। হতে পারে সে একদিন এমন কেউ হবে যার প্রতি তুমি ভালোবাসা প্রকাশ করবে। (আত তিরমিযি, হাদিস নং- ১৯৯৭)
আমাদের সমস্ত ভালোবাসা মহান আল্লাহর জন্যই হওয়া উচিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ
“বলুন (হে মুহাম্মাদ সাঃ) নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার ত্যাগ, আমার জীবনাচরণ এবং আমার মৃত্যু আমার রব আল্লাহ তায়ালার জন্য।” (আল -আন’আম ৬: ১৬২)
আমরা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নাও হতে পারি। তবে আমরা আমাদের কর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। আমরা আমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের জিহ্বার জন্য শেষ বিচারের দিন জবাবদিহিতা করতে হবে। আমরা আমাদের কর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকবো। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! বিশেষত নারীদের জন্য। কারণ নারীদের মধ্যেই অধিক ক্রোধ এবং হিংসা কাজ করে। অবশ্যই গীবতের ক্ষেত্রেও নারীরাই অনেকাংশে এগিয়ে আছে। আমরা আমাদের এসব পাপকর্ম থেকে আত্মরক্ষা করে চলবো ইনশাআল্লাহ।
(৩) আবেগকে সাগ্রহে গ্রহণ করুনঃ
এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জিহাদ। আমাদের মধ্যে কেউই অত্যধিক সংবেদনশীল হওয়া পছন্দ করেন না। আমরা প্রায়শই যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অশ্রু ঝড়াই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
হয়তো একদিন আগে কারোর সাথে পরিচয় হয়েছে। তাকে পছন্দ করে ফেলেছি। তার একটু অবহেলা আমাদের অশ্রু ঝরাতে বাধ্য করে। কিংবা হতে পারে কারোর কোনো কথায় আপনি এতটা রেগে গেছেন যে রাগের ফলে আপনার ঘাড়ের রগ উঠানামা করছে। তবে এই রাগগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি না। অবশ্য এ জন্য নিজের প্রতি কিছুটা বিরক্তও হই।
আমি কারোর প্রতি বিরক্ত হলে তার প্রতি বিরক্ত হওয়ার কারণ এবং নিজের মতামত প্রকাশ করি। তবে রাগের সময় আমি সাধারণত চুপ থাকি। যখন প্রচন্ড রেগে যাই তখন আমি সঠিক ভাবে বাক্যবিন্যাস করতে পারি না। সে-কারণেই চুপ থাকি। আমার মুখ বন্ধ থাকে সে সময় টুকু। আলহামদুলিল্লাহ।
রাগের সময় আমি নিজেকে যেকোনো কথা বলা থেকে বিরত রাখি এবং রাগ কমা অব্দি অপেক্ষা করি। রাগের এই সময়টুকু আমি ভাবার সময় পাই- আমার মূলত কি বলা উচিত সে বিষয়ে।অবশ্যই এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য একটি বিশেষ রহমত। কারণ তিনি জানেন আমার ঠোঁট থেকে যে কথা বের হবে তা যদি হারাম কোনো কথা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই জাহান্নামের আগুন আমাকে স্পর্শ করবে। যদি আমি তাওবার সুযোগ না পাই। আল্লাহু আলাম।
আমি স্বীকার করি যে, এটি আমার স্বাভাবিক প্রকৃতির একটি অংশ। আমি আমার আবেগকে সাগ্রহে গ্রহণ করতে শিখেছি এবং মোকাবিলা করতে শিখেছি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমাদের আবেগকে গ্রহণ করার এবং মোকাবিলা করার উপায় খুঁজতে সাহায্য করুন।
মনে রাখবেন, একজন মুসলিমাহ হিসেবে আমাদের ওরিও কুকি বিস্কিটের মত হওয়া দরকার। পুরো কুকিটি দেখতে বেশ সুন্দর। ভিতরটা নরম এবং মিষ্টি। তবে এর বাহিরের অংশ কিছুটা শক্ত। সহজে ভাঙ্গা যায় না। আমাদের হৃদয় অনেক নরম। বাহিরটা শক্ত। তবে খেয়াল রাখবেন, কোমল হৃদয় যেনো আমাদের কোনো পাপকর্ম করতে বাধ্য না করে।
“হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।” – সাইয়্যেদ উল ইস্তিগফার।
অনুবাদক: সীমান্তের আহ্বানের বিশেষ প্রতিনিধি।