করোনা মহামারিতে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে আল্লামা বাবুনগরীর আহ্বান
1 min read
হাটহাজারী প্রতিনিধি।।
করোনা মহামারিতে সাধ্যমত ত্রান নিয়ে দল মত নির্বিশেষে সকলকে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী৷
আজ ২ রা এপ্রিল বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী এ আহবান জানান৷
তিনি বলেন,করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে পুরো দেশ লকডাউন। সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দোকানপাট, রাস্তাঘাট সব কিছুই আজ বন্ধ। নেই কাজের কোন উৎস। করোনা আতংকে কার্যতই মানুষ আজ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রুজি রোজগার করতে না পেরে খেটে খাওয়া দিনমজুররা খাদ্য সংকটে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তাই করোনায় সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দূর্দশাগ্রস্থ পরিবারের পাশে খাদ্যদ্রব্য, নগদ অর্থ সহ জরুরী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, দুর্গত অসহায় মানবতার পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। পবিত্র কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে-‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহবানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে’। (সূরা দাহর : ৮)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। (সূরা জারিয়াত : ১৯)।
হাদীস শরীফে রাসূল (সা.) বলেছেন-‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন’। (মুসলিম : ২৩১৪)। অন্য হাদীসে আছে -‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, কেয়ামতের দিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে কেয়ামতের দিন পানি পান করানো হবে’। (আবু দাউদ : ১৩৪৬)। তাই এই করোনা ভাইরাসের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
স্থানীয় প্রশাসন,সমাজের বিত্তবান, জনপ্রতিনিধি,সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন এবং বিশেষভাবে হেফাজত ইসলামের নেতৃবৃন্দকে যার যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান হেফাজত মহাসচিব। তিনি আরো বলেন,সহযোগীতা নিয়ে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো মুসলমানদের জন্য ঈমানী দায়িত্বও বটে।
ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,রোগীর দেখাশোনা, চিকিৎসা ও সেবা একটি ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। রোগী দেখার অসংখ্য ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়,সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে। (সুনানে তিরমিজি)
অন্য হাদীসে আছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তদের অন্ন দাও, রোগীদের সেবা করো এবং বন্দিদের মুক্তি দাও। (বোখারি শরীফ)। সহিহ হাদীসে আছে-লা-আদওয়া- অর্থাৎ একজনের রোগ আরেকজনকে আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় আক্রান্ত করতে পারে না।
করোনায় আক্রান্ত কোন রোগী দেখলে ডাক্তারও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে এমনটা মনে করা ঠিক নয়। এটা ইসলামের আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী।
সহিহ হাদীসে আছে-লা-আদওয়া- অর্থাৎ রোগ আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে না। তাই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে ডাক্তারদের আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। বর্তমানে করোনার ভয়ে অনেক জায়গায় সাধারণ রোগীদেরকেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। হসপিটালে ভর্তি করা হচ্ছে না। যার কারণে রোগীরা অসহায় হয়ে কষ্ট ভোগ করছে। এটা দুঃখজনক। রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এখলাছ ও নিষ্ঠার সাথে সেবার মহৎ কাজ করলে আল্লাহ তায়া’লার নিকট এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,আজ সর্বত্রই শুধু আতংক আর আতংক। লোককথায় আছে— ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।’ আর মনোবিজ্ঞানীরা এমন নেতিবাচক চিন্তাভাবনায় ঘুরপাক খাওয়াকে বলেন, ‘অটোমেটিক নেগেটিভ থটস’ বা ‘এএনটি’। আজ করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের মধ্যে এমনটাই চলছে। আতংকিত না হয়ে শরঈ বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যেসব পরামর্শ দেন তা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন,অগ্রীম যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে । তাই যাদের উপর যাকাত ফরজ তারা করোনা ভাইরাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আগামী রমজানের যাকাত গরীব-দুঃখীদের মাঝে প্রদান করতে পারেন।
এ ছাড়াও প্রত্যেককেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং সামর্থ্যনুযায়ী ত্রান বিতরণ করতে আহবান জানিয়ে হেফাজত মহাসচিব বলেন,অসহায়দেরকে সাহায্য সহযোগিতা করলে মহান আল্লাহ তায়া’লা নিকট এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে।