হাসপাতাল যখন নিজেই রোগী, ১০ হাজার মানুষের সেবা দেবে কে?
1 min read
সীমান্ত ডেস্ক :: বলছিলাম বড়ইউড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কথা।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নের কালানজুড়া গ্রামে অবস্থিত সরকারী ভবনসহ মনোরম দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হলো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
দেশ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মানে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বানিয়াচংয়ের ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়নবাসী। প্রাথমিক নিত্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পেতে এক দুইজন নয়, ১০ হাজারের অধিক জনসাধারণ মাইলকে মাইল হেটে অন্যত্র গমণ করতে হচ্ছে। এটাই কী তাদের ভাগ্য? আজ যেখানে গোটা বাংলাদেশ নিজ ঘরে বসে সেবা পাচ্ছে, তখন এই এলাকার ১০ হাজার মানুষের অবহেলায় দিন যাপন করছে।
বর্তমান সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন সবার দৃষ্টির আড়ালে যেনো তারা। চেষ্টা প্রচেষ্টা করেও স্থানীয়রা তাদেরকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে দৃষ্টি ধাবিত করতে পারছেনা।
২৬ মার্চ সীমান্তের আহ্বানকে মুঠোফোনে স্থানীয় একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান যে, আমাদের বড়ইউড়ি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সুন্দর একটা ভবন আছে। আমাদের ইউনিয়নে ১০ হাজারেরও বেশী মানুষ বাস করে। কিন্তু ভবন থেকেও যেনো নেই। ১০ হাজার মানুষ যেনো বাংলার মানচিত্রের বাহিরা। মনেহয় জনপ্রতিনিধিরা যেনো আমাদের ভোটে নির্বাচিত হন না। স্থানীয় সংসদ সদস্যা থেকে নিয়ে কেউই এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে লক্ষ রাখেন নি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ আছে কিন্তু সংযোগ নাই, স্থাপনায় ওয়ারিং করা নাই। জনবলের অভাব। এলাকার সাধারণ মানুষ বারবার চেষ্টা করেও প্রসব সেবা চালুকরণসহ ২৪/৭ সেবা চালু করতে গিয়েও আশাহত হয়েছেন। এই এলাকার অসহায় মানুষগুলো আশানুরূপ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। গরিব, অসহায় মানুষগুলো স্বাস্থ্যসেবা পেতে হাতের কাছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র গমন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এলাকার মানুষ চেষ্টা করে করে তাঁরা আজ হতাশায় নিমজ্জিত।
জনবলের কারণে মাসের বেশির ভাগ সময় কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ থাকে।
সপ্তাহে একদিন খোলা থাকলেও ফুলটাইম মানুষ সেবা পায়না। ১১টা থেকে ১টার পূর্বেই আবার তালা ঝুলিনো থাকে।
এবিষয়ে ২৭শে মার্চ স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি বিগত উপজেলার মাসিক বৈঠকে জোর দাবী জানিয়েছি। বারবার তাকিদ দিয়েছি উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি যথারীতি নিয়মিত খোলা থাকার জন্য। যেনো মানুষ সর্বদা সেবা পায়।
তারপর বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বললে তিনি এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান নি। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র উপজেলার প্রধান শাহপরানের নাম্বার দেন।
উনাকে এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও কোনো সদুত্তর দেন নি। বরং তিনি উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইউএফপিও (UFPO) বাবুল-এর নাম্বার দেন। উনার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন সিকিউরিটি, একজন আয়া ও ৩জন ডাক্তারসহ সর্বমোট ৫জন কর্মকর্তা লাগবে। এই যায়গায় একজন আয়া আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই মানুষ সঠিকভাবে যথাসময়ে সেবা পাচ্ছে না। তখন একটা প্রশ্নের উত্তর তিনিও এড়িয়ে গিয়ে বলেন যে, আসলে আমি এখন শেষ সময়ে। মাত্র ক’টা দিন পর চলে যাবো। এখন যিনি জয়েন হবেন, তিনি আরো দুটো স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে আছেন। এটা তার অতিরিক্ত হাসপাতাল।
ভাবা যায় কী? যেখানে পাঁচজন কর্মকর্তা নিত্য প্রয়োজন, সেখানে দুজনের বেশী নেই; তাও আবার অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিশেবে দায়িত্ব পালন করবেন নব্য যোগদানকারী ডাক্তার।
স্থানীয়রা সীমান্তের আহ্বানকে এবিষয়ে অবগত করেন যে, তারা তাদের ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সমাবেশ করে দাওয়াত করে এনে স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে জোর দাবী জানিয়েছেন এবং খুব শীঘ্রই যেনো তারা সেবা পেতে পারে সে বিষয়ে বারবার তাকিদ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পাত্তা নেই।
এবিষয়ে বজ্রকন্ঠের সম্পাদক সায়্যিদ আখতারুজ্জামান মিযান বলেন- আমার পত্রিকার সাংবাদিকরা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদনও করছে এবং গণমাধ্যমে লাইভ ও করেছে। তবুও যেনো কতৃপক্ষের সুনজর পড়ে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এই বিষয়ে বেশ কিছুদিন পূর্বে প্রজন্মকণ্ঠ ডটকমে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেই প্রতিবেদনে বানিয়াচং উপজেলা, চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেছেন- এই বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি জানেন, ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। তিনি আরও বলেন, এর আগে কেউ আমাকে রিপোর্ট করেনি। বানিয়াচং উপজেলা, চেয়ারম্যান প্রজন্মকন্ঠ ডট কম-কে আশ্বস্থ করে বলেন- আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।
তাই ১০ হাজার মানুষের কষ্টের কথা ভেবে, তাদের আকুতি, অনুরোধ সবকিছু বিবেচনা করে
অচিরেই বানিয়াচং উপজেলার ৭নং বড়ইউড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
বিজ্ঞ ডাক্তার এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সেবা দিতে খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি খোলা রাখা নিত্য প্রয়োজন। এতে ১০ হাজার মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে, তাদের প্রাণের দাবী পূরণ হবে।