করোনা ভাইরাস; আল্লামা বাবুনগরীর দিকনির্দেশনামূলক জুমার বয়ান - Shimanterahban24
June 5, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

করোনা ভাইরাস; আল্লামা বাবুনগরীর দিকনির্দেশনামূলক জুমার বয়ান

1 min read

হাটহাজারী প্রতিনিধি।। 

করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে
গতকাল ২৭ মার্চ জুমার নামাযের পূর্বে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার কেন্দ্রীয় বায়তুল করীম জামে মসজিদে আগত মুসল্লিদের সামনে দেশ ও জাতীর উদ্দেশ্যে ইসলামের বিধান ও স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান পেশ করেছেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রদত্ত সময়োপযোগী মূল্যবান বয়ানের সারাংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো- সংক্ষিপ্ত খুতবার পর আল্লামা বাবুনগরী সূরা আহযাবের ৪৩ নং আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন,মহান আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন-তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। আল্লাহ তায়া’লা অত্যন্ত দয়া-মায়া করে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর মায়া-মমতার একশ ভাগের একভাগ সমস্ত সৃষ্টি জীবের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন আর বাকি ৯৯ ভাগ রোজ হাসরের নিজের কাছে জমা রেখে দিয়েছেন। এই এক ভাগ পেয়েই সৃষ্টি জীব পরস্পরের মধ্যে একে অপরকে মায়া-মমতা করে। মায়া মোহাব্বতের বান্দারা যখন আল্লাহ তায়া’লার অবাধ্যতা আর নাফরমানী করে তখন আল্লাহ তায়া’লা রাগান্বিত হন। বিভিন্ন আযাব-গযব ও বালামুসিবত দিয়ে বান্দাকে গুনাহ ছেড়ে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সংকেত দেন। তাওবা করে গুনাহ ক্ষমা চেয়ে আল্লাহ তায়ালার দিকে তা প্রত্যাবর্তনের আহবান করেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নুহ এর ১০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন,বর্তমানে আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক,রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল সহ সর্বক্ষেত্রে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। হয়ত এসব গুনাহের কারণেই আজ করোনা ভাইরাসের মতো এই মহামারি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গুনাহের কারণে আল্লাহ তায়া’লা বান্দাকে আযাব গযবে নিপতিত করেন। সূরা শুরার ৩০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
আল্লাহ তায়া’লা বলেন,তোমাদের ওপর যেসব বিপদ আপদ পতিত হয় তা তোমাদের কর্মেরই ফল। এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সূরা সেজদা ২১ নং আয়াত-আল্লাহ তায়া’লা বলেন, গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো।যাতে তারা আল্লাহর দিকে
প্রত্যাবর্তন করে। সূরা আনকাবুতের ৪০ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারনে পাকড়াও করেছি। সুতরাং বর্তমান সময়ের এই মহামারি গুনাহেরই ফসল।বর্তমান সবচে বড় আল্লাহর নাফরমামি হলো আল্লাহর নাজিলকৃত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র,ইসলামকে নির্মূল করার অপচেষ্টা।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন। নামায কাযা করা ,
সুদ-ঘুষ,আত্মসাৎ,হাইজ্যাক চাদাবাজী,
সন্ত্রাস,বেপর্দা,নাচগান ইত্যাদি। তাই নাজুক মুহূর্তে যাবতীয় গুনাহ পরিত্যাগ করে খাটি দিলে তাওবা করে আল্লাহ তায়া’লার দিকে রুজু হতে হবে।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন,এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে যখন সমস্ত মুসলমান আল্লাহ তায়া’লার ঘর মসজিদে এসে নামায,জিকির-আযকার ও দুআ কান্নাকাটি করে এই মহামারি থেকে পানাহ চাওয়ার কথা ছিলো সেই সময়ে ইহুদি খ্রিস্টান আর ইসলাম বিরোধীরা মুসলমানদেরকে মসজিদ থেকে বের করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। তারা ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আতংক সৃষ্টি করে আজ মসজিদে নামায বন্ধ,জুমা বন্ধ করছে। এমনকি পবিত্র খানায়ে কাবার তাওয়াফ বন্ধ করেছে,মসজিদে নববীতে নামায বন্ধ করে দিয়েছে। এসব ইসলাম বিরোধীদের পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র। এসবে বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

এই মহামারি থেকে বাঁচতে চিনের
অমুসলিমরা মসজিদে মসজিদে গিয়ে দুআ চাচ্ছে। মুসলমানদের সাথে দুআয় শরীক হয়ে এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট দুআ করেছে। কিন্তু মুসলমানরা কেন আজ মসজিদে যাবে না! নামায পড়বে না? যেখানে অমুসলিমরা মসজিদে যাচ্ছে সেখানে তো মুসলমানদের আরো বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া উচিত। এবং মুসলমানদের আরো বেশি বেশি আল্লাহ তায়া’লাকে ভয় করা জরুরী।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা মক্কা শরীফকে বালাদান আমিনা বা নিরাপদ শহর বলেছেন এবং হাদীস শরীফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,মদীনা মুনাওয়ারায় দাজ্জাল এবং মহামারী ঢুকতে পারবে না। মুসলমান হিসেবে কুরআনের আয়াত ও বিশ্ব নবীর চিরন্তন সত্য এ বাণীর উপর ঈমান এবং আকিদা বিশ্বাস থাকার অপরিহার্য ছিলো কিন্তু আজ সৌদি হুকুমতের এ আয়াত ও হাদীসের উপর বিশ্বাস কোথায়! যার কারণে তারা আজ পবিত্রময় এ দু জায়গায় ইবাদাত বন্ধ করে দিয়েছে। মুসলমানদের জন্য এটা বড় দুঃখজনক ও মর্মাহত হওয়ার মতো বিষয়।

সহিহ বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “লা-আদওয়া- অর্থাৎ রোগের কোন ছোয়াছে নেই। রোগ আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া নিজস্ব ক্ষমতায় কাউকেই আক্রান্ত করতে পারে না। অথচ আজ করোনা ভাইরাসের ছোয়াছে অজুহাতে মসজিদ বন্ধ করা হচ্ছে। কতিপয় দূর্বল ঈমানদাররা আজ মসজিদে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন,কেহ করোনা ভাইরাসে বা অন্য কোন রোগে অসুস্থ হলে সে মসজিদে আসবে না। তবে একজনের জন্য হাজার সুস্থজনকে মসজিদে আসা থেকে বারণ করা যায় না। বাস্তবেই কেহ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সে হসপিটালে থাকবে তবে যারা সুস্থ তারা সকলেই সচেতনতা বজায় রেখে মসজিদে আসবে।

আজ মসজিদ ছেড়ে ঘরে নামায পড়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বহু ঘর তো এমন আছে যেখানে পাঁচ সাতজন সদস্য বা দশ পনেরো জনের যৌথ ফ্যামিলি। মসজিদে জমায়েত হয়ে নামায পড়লে করোনা ছড়িয়ে যাবে কিন্তু ঘরে জমায়েত হয়ে পড়লে তা ছড়াবেনা এই নিশ্চয়তা কে দিয়েছে! মসজিদ রহমত বরকতের জায়গা। মসজিদ ঘর থেকে নিরাপদ।

এই মহামারিতে কোন মুসলমান মারা গেলে সে অবশ্যই রাসুলের হাদীস অনুযায়ী শহীদ হবে। তাকে ইসলামি বিধানানুযায়ী জানাযা ও দাফন কাফন করতে হবে। দুঃখজনকভাবে বলতে হয় আজ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে টিভি টকশোতে করোনায় আক্রান্তদের লাশ আগুনে পুড়ে ফেলার কথা হচ্ছে। এমন কথা মেনে নেওয়া যায়না। মুসলমানের লাশ আগুনে পুড়ার কথা বলে চরম ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। লাশ আগুনে পুড়ে ফেলা হিন্দুয়ানী রীতি নীতি।এবং মুসলমানদের জন্য ইহা হারাম।
ঢালাওভাবে করোনায় মৃতদের লাশ আগুনে পুড়ার কথা বলে ওরা মূলত এদেশকে হিন্দুয়ানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।

আল্লামা বলেন,হক্কানী
ওলামায়ে কেরাম দেশ ও জাতীর ঈমান আকিদা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী।জাতীর কর্ণধার। বর্তমান এই নাজুক মুহূর্তে ওলামায়ে কেরাম কুরআন সুন্নাহর আলোকে জাতীকে সঠিক পথ পদর্শন করতে হবে।কুরআন-সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় ঠিক করে দিতে হবে।

ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,রোগীর দেখাশোনা ও সেবা-শুশ্রূষাও একটি ইবাদত। করোনায় আক্রান্ত কোন রোগী দেখলে ডাক্তারও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে এমনটা মনে করা ঠিক নয়। এটা ইসলামের আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী। বর্তমানে করোনার ভয়ে অনেক জায়গায় সাধারণ রোগীদেরকেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে রোগীরা অসহায় হয়ে কষ্ট ভোগ করছে। এটা দুঃখজনক। রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এখলাছ ও নিষ্ঠার সাথে সেবার মহৎ কাজ করলে আল্লাহ তায়া’লার নিকট এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যাবে।

আমরা হাজার চেষ্টা করেও এই মহামারি থেকে বাঁচতে পারবো না। সূরা তাকভীরের ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা বলেন,তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না। তাই আমাদেরকে মহান রবের দিকেই ফিরতে হবে,পানাহ চাইতে হবে।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন,আমরা নীচের সরকারের নির্দেশ অবশ্যই মানব কিন্তু উপরের সরকার মহান রব্বুল আলামিনের নির্দেশ আরো হাজারগুণ মানতে হবে। তাই গুনাহ ছেড়ে দিয়ে পূর্বকৃত পাপকাজ থেকে তাওবা করে আল্লাহ তায়া’লার দিকে ফিরে আসতে হবে। এবং শরঈ বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যেসব পরামর্শ দেন তা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.