মানুষ না চাইলেও প্রাকৃতি মানুষকে এক কাতারে সামিল করেছে
1 min readলেখক: সাংবাদিক তানভীর শাহরিয়ার
প্রায় ৭৮০ কোটি মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করে আসছে। তার মধ্যে রয়েছে নানান ধর্ম-বর্ণ। রয়েছে নানান পেশা। স্বার্থের পেছনে মানবসভ্যতা আজ এক বিভীষিকাময়। মানুষ মানুষকে সয্য করতে পারে না। তারই বাস্তব এক ইতিহাসের পাতার উদাহরণ মীর জাফরের ষড়যন্ত্রে ভারতবর্ষের সফল নবাব সিরাজদৌলা। ইংরেজদের দু’শত বছরের শাসন এখনো ভারতবর্ষের মানুষকে গায়ের লোম দাঁড় করায়। কত জগন্য এ ইংরেজরা!
“এখানে” শেষ নয়, আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমার (বর্মা) সে দেশের বুড্ডিস ধর্মালম্বী সরকারের সামরিক বাহিনীর হাতে বর্বরিচিত নির্যাতনে শিকার হয়ে আমাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১৫ লক্ষ্যের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এটা কি ধর্ম-বর্ণকে আলাদা করেনি?
“এখানে” শেষ নয়, পাশের দেশ ভারত। কিছু দিন আগে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতের অসহায় মুসলমানদের উপর নানান নির্যাতন ও মসজিদ ভাঙার মত নজির রেখেছে। বিশ্বের মুসলিমের কলিজায় আঘাত করেছে। এটা কি ধর্ম-বর্ণকে আলাদা করেনি?
“এখানে” শেষ নয়, নিউজিল্যান্ডে নামাজরত অবস্থায় কতিপয় বন্দুকধারীর হাতে শহীদ হয় কতই না মুসলিম। এটা কি ধর্ম-বর্ণকে আলাদা করনি?
“এখানে” শেষ নয়, আমেরিকার কতিপয় বন্দুকধারীর হাতে ইরানের সামরিক প্রধান সুলাইমানী হত্যার নজির বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। এটা কি ধর্ম-বর্ণকে আলাদা করেনি?
“এখানে” শেষ নয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নির্মম হত্যা কান্ডে শিকার ফিলিস্তিনের হাজার হাজার মুসলিম। অবুঝ শিশুর বার্তা এমন নির্যাতন সয্য করতে না পেরে “আমি আল্লাহকে বলে দিবো” এমন নজিরও বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়েছে। এটা কি ধর্ম-বর্ণকে আলাদা করেনি?
“এখানে” শেষ নয়, চীন সরকার সংখ্যালুগু মুসলমানদের নামাজ পড়তে বাধা দিচ্ছিল। পথিমধ্যে হিজাব পড়া মুসলিম মেয়েদের হিজাব খুলে ইজ্জতহানী করেছে। এর পর পবিত্র কুরআনকে নতুন করে সংস্কার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এটা কি ধর্ম-বর্ণ আলাদা করেনি?
“এখানে” শেষ নয়, করোনা আতংকে বিশ্ব। চীন করোনা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিজ দেশের বাইরে এখন ক্রিটিকাল কন্ডিশনে থাকা ইউরোপের দেশ ইতালিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে তাদের মেডিকেল টিম। ইতালির অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। ৪০ হাজার ইনফেক্টেড, এমনকি প্রচুর ডাক্তার আর নার্স ও ইনফেক্টেড হচ্ছিলো, মারাও যাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে ইতালির সরকার বয়স্কদের সেবা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেড়ে দেয় মৃত্যুর হাতে। কতটা করুণ নির্মম অসহায় হলে কোনও দেশের সরকার এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে!
এই করূণ অবস্হায় ইতালীকে সাহায্য করার জন্য আসেনি কোন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ, আসেনি পবিত্র ভেটিকান সিটির পবিত্র জল নিয়ে কোন পোপ, আসেনি মক্কা থেকে জমজম কুপের জল নিয়ে কোন ইমাম, আসেনি গোমুত্র অথবা গঙ্গা জল নিয়ে কোন হিন্দু ব্রাহ্মণ! ইতালির মহা দুর্যোগের এই ক্লান্তিলগ্নে জীবনের ঝুকি নিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলো নাস্তিক উপাধি পাওয়া সেই মানবিক চীনের এক দল নার্স এবং চিকিৎসক!
নিরলস সেবা দিতে উহানের মহিলা নার্সরা মাথার চুল ফেলে ন্যাড়া হয়েছেন। তাতে করে সংক্রমনের ভয় কমবে, দ্রুত পোষাক পরে প্রস্তুত হওয়া যাবে, চুলের জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হবে না। গল্পটা এইখানেই শেষ নয়, তারা সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে আলোর গতিতে, যেসব দেশ আক্রান্ত হচ্ছে সেখানেই। যেভাবে যা দিয়ে পারছে সাহায্য করেই যাচ্ছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে সারাবিশ্বে। এসেছে আমাদের বাংলাদেশেও।
কথা আর বাড়াবো না, মানবসভ্যতার পরিধি এমনই হয়েছে। “করোনা” Covid-19 এর ভয়াবহতায় যখন পুরো পৃথিবী ঠিক সে সময়ে সকল মানুষ একে অন্যের বিপদে সামিল হচ্ছে। তাই বললাম, মানুষ না চাইলেও প্রাকৃতির নিয়ম মানুষকে এক কাতারে সামিল করেছে।