একজন আলেমের হাতে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন মানে রাষ্ট্রের স্বীয় বৈশিষ্ট্য ফিরে পাওয়া
1 min read[আব্দুল্লাহ সালমান]
১৯৭১ সাল। বাংলা এবং বাঙ্গালির জন্যে একটি ইতিহাস। একটি বিপ্লব। দেশকে জালিমের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে লাখো প্রাণ খসে পড়েছিল, হাজারও ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে দেশের সর্বসাধারণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও জান বাজি রাখাটা ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে অঙ্কিত থাকবে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, দেশের আলেম সমাজ মুক্তিযুদ্ধের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যাদের সাহসী উদ্যোগ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বাধীনতার অবদানে বিশাল অংশ জুড়ে আছে।
তৎকলীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের আমীর ছিলেন মুফতি মাহমুদ রহ.। ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার; ইসলাম আওয়ার পাকিস্তান’ গ্রন্থে উল্লেখিত ‘মুফতি মাহমুদের বক্তব্য সর্বদাই বাঙ্গালি মুসলমানদের পক্ষে ছিল’। ৭০-এর নির্বাচনে পিপলস পার্টির পরাজয় ও আওয়ামী লীগের বিজয় হলে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন- ‘যারা জাতীয় পরিষদের বৈঠকে ঢাকায় যাবে তাদের পা ভেঙ্গে দেওয়া হবে’। তখন মুফতি মাহমুদ রহ. জোর প্রতিবাদ করেছিলেন।
তখনকার করাচি মাদরাসার ছাত্র জকিগঞ্জের মাওলানা আব্দুস সালামের বরাতে জানা যায়। পাকিস্তানের এক নেতা মুফতি সাহেবকে প্রশ্ন করলেন- ‘হযরত! গাদ্দার কো গ্রেফতার কর লে আয়া, লেকিন আবি তাক কাতল বী নেহি কিয়া? প্রশ্ন শুনেই মুফতি সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন- ‘গাদ্দার কৌন? গাদ্দার কৌন? শেখ মুজিব গাদ্দার নেহি, অহ সুন্নি মুসলমান হে। হার মুসলামন কি জান আওর মাল কি হেফাজত করনা হার মুসলমানকে লিয়ে ওয়াজিব হে। পরেরদিন এ সংবাদ করাচির পত্রিকাগুলোতে এসেছিল। এছাড়াও মুফতি মাহমুদ রহ. বঙ্গবন্ধুকে দেশের পক্ষে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এবং তাঁরই সাহসী প্রেরণায় শেখ সাহেব যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত হন।
গেল পাকিস্তানি আলেম সমাজের কথা।
এবার আসি বাংলাদেশে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়নি। কিন্তু তখনকার বড় মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল।
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে বঙ্গবন্ধুর সাথে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে দীর্ঘ বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর শায়খুল হাদিস সাহেবের বেশ প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধু পত্রিকায় একটি বিবৃতিও দিয়েছিলেন।
সে সময়ের শীর্ষ আলেমে দ্বীন আল্লামা হাফেজ্জি হুজুর রহ. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নেন। তিনি পাকিস্তানিদের জালেম এবং মুক্তিযুদ্ধকে ‘জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই’ বলে ফতোয়া দেন।
তৎকলীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। কর্মসূচী পালনার্থে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দলীয় নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। যার ফল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সিদ্ধান্ত। তিনি আইন জারি করে জামায়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলাম-এর মতো দলকে নিষিদ্ধ করলেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতি ছিলেন অতি আগ্রহী।
তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক গুরু মাওলানা ভাসানীও একজন আলেমে দ্বীন ছিলেন, যার কথা ব্যতিরেকে বাংলার ইতিহাসের কথা চিন্তাও করা যায় না। আরও অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু লেখার কলেবর বেড়ে যাবে বলে দীর্ঘ করছিনা। স্বাধীনতার পর বিশেষত বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুপরবর্তী সময়ে আলেম সমাজকে যুদ্ধবিরোধী আখ্যা দেওয়ার একটা পায়তারা শুরু হয়। যার প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। গোয়াইনঘাটের কথা বলতে গেলে পুরো উপজেলায় আলেমদের বেশ অবদান থাকলেও প্রশাসনিক অগ্রাধিকার আলেমরা তেমন একটা পেতেন না। অনেক প্রতীক্ষার পর যখন একটি সূর্য্য গগণতলে তখনই তার আলোয় প্রজ্বলিত গোয়াইনঘাট। আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে একজন আলেমের হাতে গোয়াইনঘাটে উত্তোলন হল জাতীয় পতাকা। সেই মহান ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ। তিনি সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় শক্তি অনবদ্য ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার হাত ধরেই সমাজ স্বীয় বৈশিষ্ট্য ফিরে পাচ্ছে বলাই চলে। সৎ, যোগ্য এবং নিষ্ঠাবান মানুষের মূল্যায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে দেশ, এগিয়ে যাবে গোয়াইনঘাট। ইনশাআল্লাহ!
মহান এ দিনে একাত্তরের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের দীর্ঘায়ু এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, উন্নতি ও শান্তি কামনা করছি। আমিন।