করোনা ভাইরাস বিষয়ে শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানীর বক্তব্যের তরজমা
1 min read
নিজস্ব প্রতিনিধি।।
বর্তমান সংকটকালে গোটা মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত জরুরি এই দিকনির্দেশনাগুলোর অপেক্ষায় ছিল। আলহামদু লিল্লাহ আমাদের শায়খ, মুসলিম উম্মাহর অহংকার রাহবার শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ সেই অমূল্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নিম্নের ভিডিও দেখলে যা সবাই বুঝতে পারবেন।
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো এই সাক্ষাতকারের শেষে নবী কারিম সা.এর বাতলানো একটি সুন্দর রুকিয়ার কথাও হযরত আমাদেরকে বলেছেন। সুবাহানাল্লাহ।
যারা উর্দূ বোঝেন না, তাদের জন্য মূলকথাগুলো তরজমা করে দিচ্ছি।
.
হযরতকে মসজিদে সালাতের জন্য একত্রিত হবার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে হযরত বলেন,
আমি বলেছিলাম, মসজিদে যখন মানুষ নামাজের জন্য যাবে তখন তারা লক্ষ্য রাখবে যেন কম সে কম সময় মসজিদে অবস্থান করে। যত কম সময়ে সালাত আদায় করা যায় ততই ভালো। এর তরিকা হলো ফরজের পূর্বের সুন্নাতগুলো ঘরে পড়ে নিবে। আবার ফরজ জামাত শেষের সুন্নাতগুলো ঘরে ফিরে আদায় করবে। আর ইমাম সাহেব যেন এই দুর্যোগকালে কেরাত সংক্ষিপ্ত করেন। এতে জমায়েতের সময়টা কমে যাবে।
আর যে লোকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সে এই মহামারীতে আক্রান্ত তার জন্য মসজিদে গমন করা জায়েয নেই। সে ইনফিরাদীভাবে ঘরে নামাজ আদায় করবে।
.
প্রশ্ন: তাকী উসমানি সাহেব! জুমআর খুতবাহ সংক্ষেপ করার কোনো সুযোগ আছে কি?
উত্তর: জী। খুতবাহ সংক্ষেপ করবে। চেষ্টা করবে একেক খুতবাহ যেন এক দেড় মিনিটের মধ্যে শেষ করে দেয়া যায়। কারণ, শরীয়ত জুমআর খুতবাহর ক্ষেত্রে কিছুটা সহজতা রেখেছে। তা অতি দীর্ঘ হওয়া জরুরি নয়। ইমাম সাহেবগণ নিশ্চয় জানেন, প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবাহয় কতটুকু বললে খুতবাহ হয়ে যায়।
কারণ, খুতবাহতে জরুরি হলো, হামদ-সালাত- তাকওয়ার নসিহত ও দোয়া। দ্বিতীয় খুতবাহও এমনই। অতি সংক্ষেপে শেষ করা যায়।
.
প্রশ্ন: মসজিদের কাতারগুলো তো কাছাকাছি। একটি আরেকটির সাথে লাগোয়া। তো এই দুর্যোগের সময় কি কাতারের মাঝে কিছুটা ফাঁক বা দূরত্ব অবলম্বন করার সুযোগ আছে?
উত্তর: জী, জী। এতে কোনো সমস্যা নেই। আমি ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করেছি, তারা বলেছেন, যদি মসজিদগুলো থেকে কার্পেট মুসল্লা ইত্যাদি উঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে সবচেয়ে উত্তম। কারণ, ওসবে জার্ম লেগে থাকে।
আর প্রথম ও দ্বিতীয় কাতারের মাঝে যদি কিছুটা ফাঁক রাখা যায় তা উত্তম। এতে কোনো সমস্যা নেই।
.
প্রশ্ন: একটি ইসলামী সামাজিকতা হলো, মুসফাহা ও মুআনাকা। এই ব্যাপারে তো ডাক্তারগণ নিষেধ করছেন। এ ব্যাপারে নির্দেশনা কী?
উত্তর: দেখুন মুসফাহা করা একটি মুসতাহাব আমল। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আর সালাম প্রদান হলো জরুরি। সুতরাং যেখানে মুসাফাহা করলে কারো অপকার বা ক্ষতির আশংকা আছে সেখানে মুসাফাহা করা ঠিক নয়। নিষেধ।
আমাদের ফকীহগণ এমন অনেক জায়গা চিহ্ণিত করে দিয়েছেন, যেখানে মুসাফাহা করা নিষেধ। সুতরাং অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ যেহেতু নিষেধ করছেন তাই এখন মুসাফাহা থেকে বিরত থাকবে।
.
প্রশ্ন: তাউন সম্পর্কে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা তাউন আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হয়ো না, আবার বাহিরে থাকলে সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। এই হাদিস কি বর্তমান ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে?
উত্তর: জী উক্ত হাদিস এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। এটাই এখন হাদিসের নির্দেশনা। সুতরাং যে এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অধিক সেই এলাকা থেকে লোকজন বের হবে না। অন্য এলাকার লোকজন সেখানে যাবে না।
.
এরপর হযরত কিছু দোয়া ও ছোট্টো বাচ্চার গলায় তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করার কিছু দোয়া শিক্ষা দান করেন।
.
এরপর হযরত বলেন, আমি একটি নতুন কথা আপনাদেরকে বলি।
আমার কাছে একটি টেলিফোন আসল। তাবলীগ জামাতের একজন নেক সাথী ফোন করেছেন। তিনি আমাকে বললেন, গতরাত তার রাসূল সা.এর যিয়ারত নসিব হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বলেছেন, সে যেন আমার মাধ্যমে এই রুকিয়া সবাইকে জানিয়ে দেয় যে,
এই মুসিবতে তারা যেন তিনবার সুরা ফাতেহা, তিনবার সুরা ইখলাস ও ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকিল’ তিনশত তেরো বার পাঠ করে।
যদিও স্বপ্ন কুরআন-সুন্নাহর মতো কোনো সুনিশ্চিত বিষয় নয়; তবে সুখবরের ক্ষেত্রে স্বপ্নের উপর আমল করা যেতে পারে। এতে ফায়দা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
যিনি স্বপ্নে দেখেছেন, তিনি আশা করেছেন আমার মাধ্যমে যেন এই খবর সবার কাছে পৌঁছে যায়।
..
সঞ্চালক: আমি শেষ একটা কথা বলছি, এই ভাইরাস রোধ করার জন্য বারবার বলা হচ্ছে, হাত ধোও। কুলি করো। মুখ ধোও। তো আমার মনে হয়, আমরা যদি বারবার ওযু করি। তাহলে তো আমাদের হাতও ধোওয়া হচ্ছে। কুলিও করা হচ্ছে। মুখও ধোওয়া হচ্ছে।
শায়খুল ইসলাম: কোনো সন্দেহ নেই ওযু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। শারীরিক দিক থেকেও। আবার রুহানি দিক থেকেও। ওযু মানুষের হেফাজতের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আল্লাহ আমাদেরকে যে সকল আহকাম দিয়েছেন, প্রতিটিতে অনেক ফায়দা রয়েছে। আর ওযুর ওপর ওযু করাও নূর আলা নূর।
.
হযরত সর্বশেষ এই নসিহত করেন-
ভাই! এই যে সকল আপদ বিপদ আসছে এসবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো, মানুষ আল্লাহর হুকুম পালনকারী হয়ে যায়। যেভাবে নামাজের কথা বললাম, ওভাবে নামাজের প্রতি মনযোগী হয়। রোনাজারি করে। তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। যে কোনো বিপদাপদে এইসব আমলই সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে- শরীয়ত আমাদেরকে বলেছে, আসবাব ছেড়ে দেয়া তাওয়াক্কুল নয়। বরং আসবাব বা ব্যবস্থাগ্রহণ করে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। সুতরাং এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সব পালন করে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবাদত করতে থাকতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ কল্যাণের ফায়সালা করবেন।