মুফতী মুজাহিদুদ্দীন রাহ.স্বদেশ প্রেমিক এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব ছিলেন
1 min read[সাইদুজ্জামান আল হায়দার]
আমৃত্যু তাগুতি ব্যাধির নিরাময়ে- মুক্ত মন,মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত দরস-তাদরীস দিয়ে শাশ্বত ধর্ম ইসলামের তরে নিরন্তর খেদমত করে গেছেন মুফতী সাব রাহ.।বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে মুফতী সাব রাহ. তাকমীল ফিল হাদীস ও ফিকাহ অত্যান্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সহিত সমাপন করেন। যার ফলে হজরতের মাদরে ইলমীর কর্তৃপক্ষ পুলকিত হয়ে হজরতকে দারুল উলুম দেওবন্দের উস্তাদ নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু মুফতী সাব রাহ. নিজ দেশের ঈমানী,ইলমী ও আমলী অবক্ষয়ের প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রেখে দেওবন্দে মহান শিক্ষকতার খেদমত গ্রহণ করেন নি! নিজ মাতৃভূমি, জন্মভূমি ও স্বদেশ প্রেমকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হয়েছেন।অথচ ক’জনে এই ধরনের হিরো হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায়।আর পাইলে কী আবার ছেড়ে দেয়? কখনো না!আল্লাহু আকবর!যে বর্ণনা আযাদ দ্বীনি এদ্বারা বোর্ড বাংলাদেশ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতী শফিকুল আহাদ হাফিজাহুল্লাহ এর মুখ থেকে হাজার হাজার আপামর তৌহিদী জনতার উপস্থিতিতে শুনেছি। দ্বীনি ও দুনিয়াবি বিপ্লব গঠাতে হলে সেই কাংখিত মানের চেতনা ও মেধার সমন্বয় অপরিহার্য। আর উভয়টার সেতু বন্ধন ছিল হজরতের মাঝে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি স্বপ্নবুনতেন নতুন পৃথিবী, দেশ ও জাতির। একটি পরিবার, সমাজ,দেশ ও জাতির আমূল ইনকিলাব ঘটাতে হলে সর্ব প্রথম কাজ হলো ইসলামী শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড তার প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া তাই তিনি আমরণ সেই মহান কাজ করে গেছেন।সেই মিশন ও ভিশনে অনেকাংশে সফল হয়েছেন।অাদর্শ মানব সম্পদ সৃষ্টির নিপুণ কারিগর হিসেবে বৃহত্তর সিলেটে নন্দিত ছিলেন। তার হাতেগড়া সোনালী কাফেলার সদস্যরা দ্বীনের প্রতিটি বিভাগে শীর্ষে।আপামর তৌহিদী জনতার ঈমান -আমল গঠন তথা ওয়াজের জগতে তৈরী করেছেন মুফাস্সিরে কুরআন শায়খুল হাদীস তাহির আহমদ শায়খে জামলাবাদী,মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজিনগরীসহ শত শত খতীবে জামান।দারসে হাদীসের জগতে তৈরী করেছেন যুগের বিরল মুহাদ্দিস মাওলানা ইমদাদুল হক হাসারচরী,মাওলানা দিলওয়ার হুসাইন শাখাইতি,মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন হাসারচরীসহ অনেক মুহাদ্দিসে কেরাম।ইসলামী রাজনীতির পিচ্ছিল ময়দানে তৈরী করেছেন বৃহত্তর সুনামগঞ্জের আন্দোলন – সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক;মাওলানা আনোয়ার পাশা,মাওলানা মুহি উদ্দিন কাসিমী,মাওলানা মুখতার হুসাইন, মাওলানা আব্দুল্লাহসহ বহু জননন্দীত জননেতা। ইসলামী লিখ নীর জগতে তৈরী করেছেন;জনপ্রিয় লেখক,মাওলানা আবদুল হাই হাসারচরী,আবদুল বছির সরদার, মাহবুব সালমান, রব্বানী রউফসহ আর অনেক বাতিলের মুখোশ উন্মোচন কারী লিখক।দাওয়াতে তাবলীগ এর ক্যানভাসে তৈরী করেছেন;মাওলানা কামরুজ্জামান মধুরাপুরী,মাওলানা আলী আকবর দরগাহপুরী,মাওলানা আবু বকর,মাওলানা আব্দুল হকসহ বহু দরদী মুবাল্লীগেদ্বীন।আসলে মুফতী সাব রাহ. নববী সুন্নতের বাস্তব প্রতিচ্ছবি, আকাবীর ও আসলাফের অবিকল মডেল, আহলে হকের বাতিঘর, সরল ও সঠিক রাজপথের মিনার, বাতিলের জম,একটি সংগ্রামী নাম, একটি নিরব ইতিহাস, একটি বিপ্লব,দেওবন্দীয়তের অনুপম আবিষ্কার, সর্বোপরি ইলমে হাদীসের এক কিংবদন্তি খাদেম ও আন্দোলন ও সংগ্রামের বীর সিপাহসালার। ১২ অক্টোবর ১৯৬৪ ইংরেজি সনে জন্মগ্রহন করে ১৬ জানুয়ারী ২০১৮ ইংরেজি সনে মৃত্যু বরন করে মাত্র ৫৫ বছর জীবনে যে সু-ইতিহাস রচনা করেছেন। তা খুব’ই বর্ণাঢ্য,অসাধারণ ও ঈর্ষণীয়। বুখারী শরীফ,তিরমিজি শরীফসহ দরসে নেজামীর গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের মাহবুবুত তুল্লাব উস্তাদ ছিলেন। আমৃত্যু নাজিমে তা”লীমাত ও মুদিরে মাদরাসা ছিলেন।অধম হজরতের ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তিনি আমার ডাইরেক্ট উস্তাদের উস্তাদ অর্থাৎ দাদা উস্তাদ। কিন্তু কাছ থেকে দেখার কারণে হজরতের প্রতি ছিল নিরন্তর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।হজরতকে দেখেছি! শরীয়ত বিরোধী কোন কথা, কাজ ও লেখা স্মৃতিতে আসার সাথে সাথে এমন বজ্র হুংকার দিতেন যে বাতিলরা কালবিলম্ব না করে লজ্জিত ও অপমানিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বাধ্য হত।দেখেছি হজরতের জামাতে নামাজের ইহতেমাম!দফতরে তা’লীমাত,ইহতেমাম,দারস-তাদরীস, লেখা -লেখিসহ শত কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও কখনও প্রথম কাতার ও তাকবীরে উলা ছুটত না!সুবহানাল্লাহ! দেখেছি শায়খের রুচি! আহার -পানাহার, পোশাক -পরিচ্ছদ, পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা ও মেহমানদারী ইত্যাদিতে শায়খের রুচি ছিল উন্নত মানের তথা শীর্ষ পর্যায়ের।যা অতীব বিরল।মোদ্দাকথা মুফতী সাব রাহ. আপাদমস্তক একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। হাজার হাজার ছাত্রের প্রাণের উস্তাদ ছিলেন। সনদে হাদীসের মাঝে স্বর্ণাক্ষরে হজরতের ইসিম মোবারক তা কিয়ামত লিখা থাকবে। দুই ছেলে, এক স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন ও অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষীগণকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।মাওলায়ে রাহমান হজরতকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন। আমাদেরকে তার দেখানো রাজপথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক: মুহাদ্দিস, রাজনীতিবিদ, সমাজসংস্কারক ও কলামিস্ট।