স্বাধীনতার ৪৯ বছর; আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা কী? চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ
1 min readআবু তালহা তোফায়েল :: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র ৯ মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহত্তম ও গৌরবময় ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদিকে যেমন করুণ, শোকাবহ, লোমহর্ষক, তেমনি ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল ও বীরত্বপূর্ণ। ১৯৭১ এর মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের প্রতিটি দিনই কোনো না কোনোভাবে তাৎপর্যবহ। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির আনন্দ ও বেদনার এক সংমিশ্রিত ইতিহাস।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়া, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে বাঙালির সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু এবং সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দ। মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে বিজয় ছিনিয়ে এনে এ দেশের বীরজনতা বুঝিয়ে দিল, ঐক্য ও ত্যাগ থাকলে বুলেট আর কামান দিয়ে কোনো জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনে যে শহীদেরা আত্মত্যাগ করেছেন, নিজেদের প্রাণবাজি রেখেছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধারা, গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাঁদের স্মরণ করি। যে সব দেশ ও গোষ্ঠী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্য করেছে তাঁদের জানাই কৃতজ্ঞতা।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ছিল, যথা-
১। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়ে শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
২। মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান প্রভৃতি নিশ্চিত করে সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা।
৩। মুক্তচিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৪। সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারসমূহ নিশ্চিত করা।
৬। বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
গত ৪৯ বছরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশার আলোকে আমাদের যথেষ্ট প্রাপ্তি রয়েছে, যদিও সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের কাংখিত অর্জন আজো সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি পেয়েছি, লাল সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে আঁকা জাতীয় পতাকা পেয়েছি। অধিকার আদায়ের জন্যে আত্মসচেতন হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে এই মুক্তিযুদ্ধ।
আমাদের প্রত্যাশা:- অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে প্রত্যেক নাগরিককে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকার যথেষ্ট সফল, তবে গাফটি মেরে বসে থাকা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যেন আবার মাথা নাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই দিকে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সেই সাথে ব্যাংকিং খাতসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে সততা ও দেশপ্রেমের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করতে হবে।
উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এখন বাংলাদেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালে মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে উন্নত দেশের তালিকায়। ফলে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে অল্প দিনের মধ্যে, জাতি তা প্রত্যাশা করে।
১৩ মার্চ (শুক্রবার) বিকাল ৫টা থেকে গোয়াইনঘাট শহিদ মিনার মাঠে “উদীয়মান তরুণ সংঘের” মহান স্বাধীনতার প্রাপ্তি প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা সভা ও নাশিদ সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জননেতা মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সংগঠনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মাহফুজ ও আব্দুল্লাহ সালমানের যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জননেতা মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ বলেন- ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। মার্চ মাস আমাদের গৌরবের মাস, অহংকারের মাস, স্বাধীনতা ঘোষণার মাস, আনুষ্ঠানিক মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস।
আজ ঐতিহাসিক ১৩ মার্চ। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে সারা পূর্ব বাংলা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ছিল উত্তাল। প্রতিদিনের মতো আজও ঢাকাসহ সর্বত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল সমাবেশে ছিল মুখরিত।
বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে তখনকার চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ি ও দৃঢ় একাত্মতা ঘোষণা করছিল বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন। অসহযোগ আন্দোলনের এক সপ্তাহ পর দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অস্থিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা বাংলার দামাল ছেলেদের এই আন্দোলন দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের বাঘা বাঘা নেতাও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। একই দিনে জমিয়াতুল ওলামা ইসলামিয়া সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মুফতি মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে তিনটি আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানগুলো হলো:
(১) পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার,
(২) ২৫ মার্চের আগে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং
(৩) সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
একই সঙ্গে প্রতিটি গ্রাম, শহর, বন্দর, নগরে চলতে থাকে তীব্র অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধীনতার এই একক একটিমাত্র কেন্দ্রীয় লক্ষ্য সামনে রেখে জাতি চূড়ান্ত পর্বের জন্য তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একাত্তরের উত্তাল সেই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। স্বাধীনতার সপক্ষে দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ। আন্দোলন পরিচালনার মহৎ কাজে তাঁরা নিজেদের একদিনের বেতন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রাজপথে মিছিল করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হাফিজ তাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক গোলাম সারওয়ার সুহেল, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রবীণ আলেম মাওলানা রফিক আহমেদ, লেঙ্গুড়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট হাফিজ জাকির হুসাইন সীমান্তের আহ্বানের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি আবুল হাসানাত, প্রবাসী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শামছুদ্দিন প্রমুখ।
নাশিদ সন্ধ্যায় আলহাজ্ব মাওলানা বাহা উদ্দিন বাহারের উপস্থাপনায় নাশিদ পরিবেশন করেন হাফিজ আব্দুল করিম দিলদার, ফয়েজ আহমেদ শাহরুখ, এইচ এম আমানুল্লাহ, আনোয়ারুল করিম মুস্তাজাব, শেখ এনাম, আরিফ বিল্লাহ, জুনেল মাসুদ, নাজিম কাওছার, ফয়সল আহমদ, শিশু শিল্পী আব্দুল হাকিম ও আব্দুল মুমিন।