রবের কাছে আসার গল্প - Shimanterahban24
May 29, 2023

Shimanterahban24

Online News Paper


Warning: sprintf(): Too few arguments in /home/shimante/public_html/wp-content/themes/newsphere/lib/breadcrumb-trail/inc/breadcrumbs.php on line 254

রবের কাছে আসার গল্প

1 min read

[ইয়াসিন আরাফাত]

ছেলেটির নাম ইউসুফ। ২৫ ছুঁই ছুঁই বয়স! টগবগে যুবক! সুগঠিত সুন্দর চেহারা।আজানুলম্বিত কেশ। সুন্দর পরিপাটি-মায়াময় চাহনি। শুধু নজরকাড়া সুন্দর নয়; জগতের সব রুপ দিয়ে যেন সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁকে! তাঁর এই ভুবন ভোলানো রুপের কারণেই হয়তো মা-বাবা সমস্ত সৌন্দর্যের আঁধার হযরত ইউসুফ আঃ এর নামে নাম রেখেছেন ইউসুফ!

মা-বাবার চোখের মধ্যমনি ছিল সে। তাই সে যা চাইত তাই পেত! তাঁর জীবনে এমন কোন দিন আসেনি যেদিন সে বাবা-মার কাছে কিছু চেয়েছে কিন্তুূ তাঁরা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে! শুধু মা-বাবাই না আত্বীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব সবার কাছে ছিল সে প্রিয়! ইউসুফ বাবার কাছে ল্যাপটপের বায়না ধরল, বাবা তাকে ল্যাপটপ কিনে দিলেন! মোটর সাইকেলের দাবি করল, বাবা তাও কিনে দিলেন! কিছুদিন পর আইফোনের বায়না ধরল, বাবা তাও কিনে দিলেন। মা- বাবা চাইতেন ইউসুফ যেন সুখে থাকে তাই তাঁরা তার বায়না পূরণ করতে দ্বিধা করতেন না।

আস্তে-আস্তে ইউসুফ হারিয়ে গেল ঘোর অন্ধকারে! এখন সে সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে মোবাইল-ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকে! এখন আর সে বাইরে বের হয়না! খেলতে যায়না! অবস্থা একসময় এমন হয়েছে যে, হলিউড-বলিউডের প্রতিটা নতুন মুভির নাম তার এ- টু- জেড মুখস্থ হয়ে গেছে! কোন সিনে কোন গান সেটাও ছিল তার নখদর্পনে! এমন কোন মুভি বা সিনেমা নাই যা সে দেখেনি! বিখ্যাত প্রতিটা নায়িকা যেন তার চোখের সামনে ভাসতো!

এত- এত খারাপ গুনের মাঝেও ইউসুফের একটা ভাল গুন ছিল! অবশ্য এটাকে পুরোপুরি ভাল গুন বলা যায় না তবে মন্দের ভাল বলা যায়। সেটা হলো সে বই পড়তে খুবই ভালবাসত! মোবাইল ল্যাপটপের আগে সে সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকত! এমনকি কোথাও লং জার্নিতে গেলেও তার প্রথম সঙ্গী ছিল বই। বাসে উঠলেও বই নিয়ে উঠতো যাতে ভ্রমণটা বই পড়ে কাটাতে পারে সে। যদিও বইগুলো ছিল চরিত্র ধ্বংসের উপকরণ। সে এমন লেখকদের বই পড়ত, যারা খুব সুক্ষভাবে ইসলামের উপর আঘাত হানতো। যা সে মোটেও বুঝতে পারত না। সে এতটাই বইপ্রেমী ছিল যে, মা-বাবা তারজন্য ব্যক্তিগত একটা পাঠাগার তৈরী করে দিল।

ইউসুফের মনটা আজ ভাল না! একদমই ভাল না! কেন ভালনা? তার কারণ সে নিজেই জানেনা! কোন এক অদ্ভুত কারণে আজ তাঁর মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে! সে ভাবল, অনেকদিন হল পাঠাগারে যাওয়া হয়না। আজ একটু ঘুরে আসি। তাই সে মন ফ্রেশ করার জন্য গোসল করে পাঠাগারে গেল! ইউসুফ বই খুঁজছে। কোনটাই যেন আজ তার পছন্দ হচ্ছে না। হঠাৎ একটা বইয়ের উপর চোখ পড়তেই ইউসুফ থমকে দাঁড়াল! কুরআন!

কুরআন এখানে কীভাবে এলো! তাও অর্থসহ কুরআন! ইউসুফ গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়তে লাগল! সে যতই পড়ছে ততোই ভিতর থেকে একটা ধাক্কা আসছিল। পড়তে-পড়তে কখন যে চোখের অশ্রু গাল বেয়ে ঝড়ে পড়ল সে টেরই পেলনা! ইউসুফ এতদিন মনে করছিল, রুমের দরজা বন্ধ করে পাপ করলে দুনিয়ার মানুষতো দেখেনা এমনি আল্লাহ তায়ালাও না। সে ভুলে গিয়েছিল মহান আল্লাহর দৃষ্টিসীমা থেকে কেউই মুক্ত নয়।

আকাশের উচ্চতায়, পর্বতমালার সুউচ্চ চূড়ায়, বৃক্ষরাজির সৌন্দর্যে, মানুষের মুখের বুলিতে, রাতের আঁধারে, দিনের আলোতে,সূর্যের কিরণে, তারকারাজির ইশারায়, পুষ্পরাজির উজ্জ্বলতায়, অপ্রস্ফুটিত ফুলের খুশবুতে,চড়ুই পাখির কলধ্বনিতে,সবজির সুগন্ধে,মেঘের গর্জনে, জীবনের কম্পনে, ঢেউয়ের উঠা-নামায়, মরুপ্রান্তরের নিস্তব্ধতায়, আবাদী ভূমির কোলাহলে, ফেরেশতাদের তাসবীহ পাঠে, মুজাহিদদের নারায়ে তাকবীর ধ্বনিতে, দাউদ আঃ এর সুর মাধুর্যে, পবিত্র কিতাবের প্রতিটা পৃষ্ঠায়, কুরআনের প্রতিটা পাতায়-পাতায় তিনি বিচরণ করেন এমনকি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতি বস্তুর জবানেও তিনি মিশে আছেন। তাই কুরআনে বলা হয়েছে, , “দৃষ্টিসমূহ তাকে দেখতে পারে না তবে তিনি দৃষ্টিসমূহ দেখতে পান”!( সুরা আনআম, আয়াত১০৩)

আয়াতগুলো পড়ার পর তার মনে হলো আমি কাকে ধোঁকা দিচ্ছি, যিনি সবকিছু দেখেন, যার দেখা থেকে সামান্য পিপীলিকার পায়ের ছাপ পর্যন্ত এড়িয়ে যেতে পারে না! সেই আমি কীভাবে রুমের দরজা বন্ধ করে ভেবে নেই আমার রব আমার পাপগুলো দেখেন না! ইউসুফ আবারও চমকে উঠলো, একটা আয়াত পড়ে যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন,” মানুষ সেদিন বলবে এটি কেমন কিতাব! যেখানে কোনকিছুই বাদ যায়নি! ছোটবড় কোন কিছুই বাদ পড়েনি”! আয়াতটা পড়ে ইউসুফের বিরাট এক বিপ্লব আসল, তাড়াতাড়ি পাঠাগার থেকে বের হয়ে কম্পিউটার, মেমোরি থেকে ডিলিট করে দিল সব মুভি! কিছু ওয়াজ, তেলাওয়াত আর নাশিদে ভরে ফেললো হার্ডডিক্স!

যে ইউসুফ নারীদের দেহ দেখে মনোরঞ্জন করত, সেই এখন রাস্তায় হাঁটতেও নিচের তাকিয়ে হাঁটে কোন বেগানা নারীর দিকে চোখ পড়ে যায় কিনা এই ভয়ে!
যে ইউসুফ সারাক্ষণ মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকত, সেই এখন কুরআন নিয়ে পড়ে থাকে!
যে ইউসুফ সারাক্ষণই গান শুনতো সেই এখন গজল, ওয়াজ আর কোরআন শুনায় ব্যস্ত থাকে!
যে ইউসুফ জুমআর নামাজ ও পড়তো না সেই এখন তাকবীরে উলা মিস দেয়না!

ইউসুফ স্বপ্নালু চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে! সে স্বপ্ন দেখে একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে! হুর- স্ত্রীর হাতে-হাত রেখে পরম নির্ভরতা ও গভীর ভালবাসার সাথে বলবে, প্রিয়তমা!
দুনিয়ার কত নারীদের দেখতে ইচ্ছে হত, কত স্বাদ ছিল মনে,জেদ ছিল সযতনে মনের এক কোনে! কিন্তুু সব গুছিয়ে রেখেছিলাম আখিরাতের জন্য! আজ আমি অনুভব করতে পারছি আল্লাহর ওয়াদা সত্য! এতটুকু বলতে গিয়ে তার চোখ বেয়ে নেমে আসলো অশ্রুধারা! যেই অশ্রুতে মিশে আছে তার প্রভুর জন্য গভীর ভালবাসা আর ছলছল করা দু’টি আঁখি!

ঠিক তখন ঝুম বৃষ্টি নেমে আসল! বৃষ্টির পানি আর তাঁর চোখের পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল! সে তখন সুরা যিলযালের ৮ নাম্বার আয়াত, সুরা কাহাফের ৪৯ নাম্বার আয়াত আর সুরা আনআমের ১০৩ নাম্বার গুনগুন করে পড়তে লাগলো! ইউসুফ আয়াতগুলো সবসময় পড়ে! বারবার পড়ে! উঠতে-বসতে পড়ে! শুয়ে-শুয়ে পড়ে! হেঁটে-হেঁটে পড়ে! কেননা এই আয়াতগুলোই তার জীবনে বিপ্লব ঘটিয়ে তাঁর জীবনটাকে আমূলে বদলে দিয়েছে। দেবেই তো! কুরআন যে শুরু থেকেই মানুষকে জাদুগ্রস্ত করে এসেছে! যারা তাঁর উপর ইমান এনেছে তাদেরও আবার যারা ইমান আনেনি তাদেরও!।

লেখক: ইয়াসিন আরাফাত
(আলোচক)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.