“মৃত্যু”
1 min read
[রওশন আরা তাবাসসুম]
মানবজীবনের এক অবশ্যম্ভাবী বাস্তব শব্দ “মৃত্যু”। মানব মনের ভুলে যাওয়া এবং অবহেলা করা শব্দটিও এটিই। জীবন শুরুর পর মাথায় বেশ খসড়া কিছু চিন্তাভর করে। ছোট বেলায় চিন্তাগুলো পিতামাতা করেন। বুদ্ধি হবার পর নিজেরাই করি। সবচেয়ে অবহেলিত চিন্তাংশে রাখি মৃত্যুকে। অথচ, মৃত্যুর মত সত্য আর কিছুই নেই।
দুনিয়ার মায়া আমাদের এমন ভাবে আকৃষ্ট করে ফেলেছে যে, কে কাকে ছাপিয়ে সামনে যাব, কে কার চেয়ে ভালো ব্যবসা করবো, কে কার থেকে বেশি টাকার মালিক হবো, কে কত ভালো ছাত্রী হবো ইত্যাদি চিন্তা এবং তা বাস্তবে পরিণত করতে ব্যস্ত আমরা। ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য কত কিছু করছি, চিরস্থায়ী জীবনের জন্য যদি তার একাংশও করতাম তাহলে বোধ করি জীবনে এত হতাশা বোধ, প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তির হিসেব কষা কিংবা স্রষ্টার প্রতি অকৃতজ্ঞতার ভাবনা মাথায় আসতো না।
ইদানিং আমাদের একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে গিয়েছে যে, ইবাদাতে মনোযোগ আসে না। মনোযোগ আসবে কোথা থেকে? আমরা তো ইবাদাতের উদ্দেশ্যকে বানিয়েছি দায়সারা। রব্বে কারীমের সামনে দাঁড়িয়েও ভাবছি দুনিয়াবি সব কর্ম নিয়ে। আমাদের অন্তর হয়ে গেছে অকৃতজ্ঞ। হালাল-হারামের তোয়াক্কা করি না আমরা। তাহলে ইবাদাতে মনোযোগ আসার তো কোনো উপায় নেই। মৃত্যুকে ভুলে যেভাবে আমরা জীবনের রঙ্গমঞ্চে নিজেদের জাহির করতে ব্যস্ত হয়ে গেছি তাতে আমাদের অন্তর রোগাক্রান্ত না হয়েই বা উপায় কি!
আজ আমাদের কাছে জীবন মানে, খাও, দাও, ফূর্তি করো। আহ! ফূর্তি! একটাবার যদি স্মরণ করতে পারতাম যে, এ ক্ষণিকের ফূর্তি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের সুখ-শান্তিকে হুমকির মুখে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আশা করি, এমন ভুল ভাল প্রবাদ বাক্যে নিজেদের জীবন চালাতাম না।
আত্ম উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপেই মৃত্যুকে অধিকহারে স্মরণ করা উচিত। এতে অন্তরের বিচলিত ভাব, হতাশা, অকৃতজ্ঞতাবোধ কেটে যায়। দুনিয়ার জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়। পরকালীন জীবনকে প্রাধান্য দেয় অন্তর।
দুনিয়ার যে প্রয়োজনগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে মৃত্যুর ভাবনা থেকে দূরে থাকি। কিছুদিন পর সেই প্রয়োজনগুলো পরিবর্তন হয়ে যায়। পরিবর্তিত প্রয়োজন নিয়ে এত চিন্তা আমাদের। অথচ, অপরিবর্তিত মৃত্যু নিয়ে নেই কোনো ভাবনা। যদি মৃত্যুর ভয় হৃদয়ে ধারণ করে রব্বে কারীমের নিকট একজন মাসুম হিসেবে হাত তুলতাম। তবে বোধ করি, দুনিয়ার এসব ছোট্ট প্রয়োজনে আমরা বিচলিত হতাম না।
নিজেদের নিকট আজ নিজেরা যদি প্রশ্ন রাখি, কি করছি আমি? কতটুকু সময় আছে আমার? মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য সঞ্চয় কতটুকু? আমি কি সে জীবনের জন্য প্রস্তুত?
এই কয়েকটা প্রশ্ন যদি আপনাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়, তবে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি না হয়, তবে নিজেদের জন্য নিজেদের বলতে হবে, হায় আফসোস!! আফসোস আমার বিবেক বুদ্ধির উপরে। যা অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে নিয়েই ভাবতে জানে না। আফসোস!
লেখক: রওশন আরা তাবাসসুম
(সীমান্তের আহ্বানের বিশেষ প্রতিনিধি)