উলামায়ে কেরামের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ভ্রান্ত গোষ্ঠী ‘হিজবুত তাওহীদ’র সমাবেশ স্থগিত করল প্রশাসন
1 min readআতাউর রহমান: উত্তরায় উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে তাওহিদী জনতার ব্যাপক প্রতিরোধ ও আন্দোলনের মুখে ভ্রান্তমতবাদ ‘হিজবুত তাওহীদ’-এর ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে প্রসাশন।
আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে তাদের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনের কথা ছিল। ইসলামের নামে বাতিল এবং ঈমান ধ্বংসকারী হিজবুত তাওহিদ গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান বাতিল করায় অবশেষে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির অবসান হয়।
সরেজমিন ঘটনাস্থল থেকে আতাউর রহমান লিখছেন- “উত্তরার ১৪ নং সেক্টরের আহলিয়া মাঠ। এই অঞ্চলের সকলের পরিচিত। গত এক সপ্তাহ যাবত চলছে সেখানে রাজ্যের প্রস্তুতি! জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ট্রাকে ট্রাকে মাল সামানা আনা হচ্ছে দিনরাত ভর। কোন প্রচার প্রসার নেই। গণসংযোগ নেই। একদম নীরবে নীরবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে কাল সারারাতে আকস্মিক মাঠকে বানিয়ে ফেলেছে যেন অত্যাধুনিক বিশ্বমানের অডিটোরিয়াম ! এলাকাবাসীর চোঁখে বিস্ময়! কি হতে যাচ্ছে এখানে!

পুরো মাঠ কার্পেটিং। চেয়ার আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার। চারিদিকে নিজস্ব মার্কেট। ওয়াচ টাওয়ার। পানির লাইন। তথ্যকেন্দ্র। ফায়ার সার্ভিস। মেডিকেল সার্ভিস। অস্থায়ী টয়লেট। নিজস্ব সিকিউরিটি। মাঠের চারিদিকে স্টোক করা হাজার হাজার চেয়ার ও পাক ফ্যান। পুরো মাঠ জুড়ে বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন। সারিসারি পজেক্টর। স্টেজ সম্পূর্ণ স্টিল সিস্টেমে নির্মিত। উচ্চতা আনুমানিক দোতলা সমান। পুরো স্টেজজুড়ে অত্যাধুনিক সাজসরঞ্জাম। এ যেনো এক এলাহি কাণ্ড কারবার! দচোখে না দেখে বিশ্বাস করার মতো নয়! এতো এতো প্রস্তুতি নিয়ে এখানে রজতজয়ন্তী (২৫ বছর পূর্তি) উপলক্ষে জাতীয় সম্মেলন করকে যাচ্ছিলো মুসলিম নামধারী ভ্রান্ত ফেরকা হেজবুত তাওহীদ ।
রাতেই খবর পান বৃহত্তর উত্তরার উলামায়ে কেরাম। উনারা হতবাক! এতো কিছু করলো কিভাবে এরা! প্রশাসকের সহায়তা এখানে শতভাগ। বসে থাকার সময় নেই। যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে এটাকে। সিদ্ধান্ত হয় বাদ ফজর পাশে’র মসজিদে আয়েশা রা. চত্বরে স্থানীয় উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে সম্মিলিত তৌহিদি জনতা নিয়ে সমাবেশ শুরু হবে। এটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বাদ ফজর আমরা চলে আসি বারিধারা থেকে। ৭ টার মধ্যেই হাজার হাজার লোকে ভরে যায় নির্দিষ্ট স্থান। শুরু হয় বক্তব্য ও শ্লোগান। পরে পুলিশ এসে আশ্বাস দেয় যে, আমাদের দুপুর ১ টা পর্যন্ত সময় দেন আমরা মাঠ ক্লিয়ার করে দেবো। মুরুব্বীরা মেনে নিয়ে সে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার ঘোষনা দেন। এখন আমরা মসজিদ চত্বরে আছি। হাজার হাজার উলামা, ত্বলাবা ও ধর্মপ্রাণ জনতা। ওদিকে মাঠ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। একে একে সব গোছগাছ করে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। আশা করা যাচ্ছে এ যাত্রায় ওরা উলামায়ে কেরামের কাছে পরাস্ত!
কিন্তু কতদিন ওদের দমিয়ে রাখা যাবে এভাবে। এখানে করতে পারলনা তাতে কী! আরেক জায়গায় করবে। টাকার অভাব নেই। প্রশাসন ওদের সাপোর্টে। আজকে হয়তো চাপে পড়ে আমাদের হয়ে কাজ করছে। কিন্তু এটা তো স্পষ্ট যে প্রশাসক সর্বদাই ওদের দখলে। না হয় এতবড় একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এতো এতো প্রস্তুতি নিয়ে একদম শেষ পর্যায়ে চলে আসে কিভাবে ? সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ভিতরে ভিতরে এরা কিন্তু এগিয়েছে অনেকটা দূরে! পাঞ্জেরি হুঁশিয়ার ……!”
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় কালো তালিকাভুক্ত হয় হেযবুত তাওহিদ নামের গোষ্ঠীটি। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে হেযবুত তাওহিদ গোষ্ঠীকে কালো তালিকাভুক্ত করে চিঠি জারি করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ক সতর্কতা জারি করে সংগঠন ও এর অঙ্গ সংগঠনের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলে। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিশ্চিত করেন হেযবুত তওহীদসহ আরো কয়েকটি দল কালো তালিকাভুক্ত এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তাদের নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জমা হয়েছে।
সূত্র; উম্মাহনিউজ